ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই ত্রি-খালের মোহনায় বক্স কালভার্ট নির্মাণ করে পানির ¯্রােতধারায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও পৌরসভার অর্থব্যয়ে নিজস্ব বহুতল মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গত রোববার (১৮ আগস্ট/২০২৪) এ অভিযোগ করেছেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মো. মাহফুজুর রহমান।
তিনি জানান, গৌরীপুর পৌরসভার সতিষা, পূর্বদাপুনিয়া ও বালুয়াপাড়ার ৩টি খালের মিলন হয়েছে বালুয়াখালে। এ ৩টি খালে সতিষা, নওয়াগাঁও, গুজিখাঁ, গাঁওগৌরীপুর, চকপাড়া, নয়াপাড়া, পূর্বদাপুনিয়া, পশ্চিমদাপুনিয়া, শালিহরসহ প্রায় ১৬টি গ্রামের পানি নিষ্কাষণ হয়। খালের আকৃতি পরিবর্তন করে এর উপরে পৌরসভার টাকায় মেয়র ব্যক্তিগত মার্কেট নির্মাণ করায় পানির স্বাভাবিক ¯্রােত বিঘিœত হচ্ছে। যার ফলে এ মৌসুমে অতিবৃষ্টির পানি দ্রæত নিষ্কাষণ না হওয়ায় তলিয়ে গেছে আমন ধানের রোপিত জমি ও বীজতলা।
অভিযোগ প্রসঙ্গে গৌরীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বলেন, মাহফুজুর রহমানের ভাইয়েরা আমার নিকট জমি বিক্রি করেছেন। এতে ক্ষুব্দ হয়ে মাহফুজুর রহমান ইতোপূর্বে মামলা করেছেন। সেই মামলায় হেরে ব্যক্তিগত আক্রোশে তিনি আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেছেন। আমি পৌরসভার উন্নয়নে শতভাগ নিয়মনীতি মেনে কার্যক্রম করেছি। কোথাও কোন দুর্নীতি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, বালুয়াপাড়া মোড়ে সৌন্দর্য্যবৃদ্ধি ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বক্সকালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। আমার সেখানে কোনো ব্যক্তিস্বার্থ নেই। আমি যে মার্কেট করেছি, এটা আমার নিজস্ব ভূমি। সেখানেও পৌরবাসী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে উপকৃত হচ্ছেন। অনেক লোক এখানে ব্যবসা করে তারা তাদের সংসার চালাচ্ছেন।
জানা যায়, জেএলনং ২৪ নং দাপুনিয়া মৌজার ৪৯৯নং দাগে এ খালের প্রথমদিকে রয়েছে ১৬ফুট ৬ইঞ্চি প্রশস্থ, মাঝে ২৬ফুট ৫ইঞ্চি, মোহনায় ৪৩ফুট ও ৪৯ফুট প্রশস্থ। খালের নির্ধারিত গতিপথ ও প্রশস্থ কমিয়ে ১০ফুট প্রশস্থের বক্সকালভার্ট নির্মাণ করা হয়ছে। এ কারণে পানির স্বাভাবিক ¯্রােত কমে যাওয়ায় ফসলি জমি ও নিচু এলাকায় বসবাসকারী এলাকাবাসী জলাবদ্ধতার স্বীকার হচ্ছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩’তে জল¯্রােতের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধা সৃষ্টি বা উহার গতিপথ পরিবর্তন করে পানি সম্পদের উপর কোন স্থাপনা নির্মাণ বা ভরাট কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখলাক উল জামিল জানান, নকশায় খালের অবস্থান ও পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতি দেখে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ দিকে গৌরীপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত মার্কেটের উন্নয়নের স্বার্থে গৌরীপুর পৌরসভা একাধিক প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বালুয়াপড়া মোড়ে খালের উপর নির্মিত নতুন কালভার্ট হতে পুর্বদিকে ৯মিটার আরসিসি সিঙ্গেল ভেন্ট ৩মিটার (১০ফুট) বাই ৩মিটার (১০ফুট) বক্স কালভার্ট নির্মাণে ১০লাখ ৬৩হাজার ৫৪৪টাকা, একইসঙ্গে অপর আরেকটি প্রকল্পে ৯মিটার আরসিসি আরেকটি বক্সকালভার্ট নির্মাণে ১০লাখ ৬৩হাজার ৫৪৪টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ২০২২-২৩অর্থ বৎসরে কোভিড-১৯ প্রজেক্টের অর্থায়নে ১২মিটার আরসিসি সিঙ্গেল ভেন্ট ৩মিটার বাই ৩মিটার বক্স কালভার্ট নির্মাণে ১৪লাখ ৭০হাজার ৫৬টাকার আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। একই অর্থবৎসরে আইইউআইডিপি-০২ এর অর্থায়নে ৮৫মিটার আরসিসি সিঙ্গেল ভেন্ট ৩মিটার বাই ৩মিটার বক্স কালভার্ট নির্মাণে ১ কোটি ১লাখ টাকার আরেকটি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরজমিনে দেখা যায়, এ কালভার্ট ঘেঁষে বা খালের অংশবিশেষ ব্যবহার করে মেয়র মার্কেটের বহুতল ভবনের কাজ চলছে। মার্কেটের প্রথমতলায় ৯টি দোকানের মধ্যে ৬টি দোকানের কাজ শতভাগ সম্পূর্ণ হয়েছে। ৩টিতে সার্টার লাগানো হয়নি। দ্বিতীয়তলায়ও দোকানঘর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। গৌরীপুর পৌরসভার উপ-প্রকৌশলী মদন মোহন দাস জানান, খালের নির্ধারিত সীমানার বাহিরে সাবেক মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম মার্কেট নির্মাণ করেছেন। পৌরসভার অর্থায়নে শুধুমাত্র খালের উপর বক্সকালভার্ট নির্মাণ করেছি।
পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদন নেয়া হয়নি বলে নিশ্চিত করেন গৌরীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব সচিব) মীর মোশারফ হোসেন। তিনি জানান, খালটি পৌরসভার পানিপ্রবাহের নিজস্ব সম্পদ। অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। তবে প্রকল্প পরিচালকের অনুমোদন সাপেক্ষ টেন্ডারের মাধ্যমে খালের ওপর বক্সকালভার্ট নির্মাণ কাজ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা জানান, এ বিষয়ে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবো।