বুধবার (২৮ আগস্ট/২০২৪) পর্যন্ত ১৪দিন যাবত প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঝুলছে তালা, পদত্যাগের দাবিতে সর্বত্র চলছে পোস্টারিং, মিছিল-মেটিং ও বিক্ষোভ অব্যাহত। ময়মনসিংহের গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলামের নিয়োগ বাতিল-পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল! যোগদানের পর থেকে বিদ্যালয়ে আসতে পারছেন না এ প্রধান শিক্ষক। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গৌরীপুরে ৩জন নিহতের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এবার তিনিও আসামী!
এ দিকে ৩০লাখ টাকা উৎকোচে প্রধান শিক্ষক শিক্ষক নিয়োগ, নিয়োগ বোর্ডের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আন্দোলনকারীরে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান। যিনি এ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে সদস্য হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। নিয়োগ বোর্ডের কর্মকর্তাকেই তদন্ত কর্মকর্তা দেয়ায় বাড়ছে আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ। এ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত আমিই তদন্ত কর্মকর্তা, বিদ্যালয়ে একাধিকবার গিয়েছি। তদন্ত কাজ চলছে, দ্রæত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। এ বিষয়ে এরচেয়ে বেশি কিছু এখন বলতে পারছি না। ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য হাবিবুল ইসলাম খান শহীদ বলেন, যিনি নিয়োগ বোর্ডে অংশ নিয়ে অবৈধ কার্যক্রমের বৈধ্যতা দিয়েছেন, তার নিকট সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন আশা করা যায় না।
অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বৈধ্য করতে বিদ্যালয়ের তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই একটি ফাঁকা ওয়েব সাইড করেন এ প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব মো. হাবিবুর রহমান। তিনি ওই ওয়েব সাইডে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠের কোনো তথ্য আপলোড করেন নাই। শুধুমাত্র ‘একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।’ তবে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরবর্তীতে নিয়োগ পরীক্ষা ও ফলাফল সংক্রান্ত কোনো তথ্য ওয়েব সাইড ও নোটিশ বোর্ডে প্রদান করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব মো. হাবিবুর রহমান জানান, নিয়োগ নিয়ে চাপে ছিলাম, কমিটিও দ্রæত নিয়োগ দেয়ার জন্য বলছিলো। তাই ২ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলমান পরিস্থিতিতেও নিয়োগ পরীক্ষা নিতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওয়েব সাইড ছাড়া নিয়োগ নেয়া সম্ভব না। তাই তাড়াহুড়া অবস্থায় করা হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর পরীক্ষার তারিখ, লিখিত পরীক্ষার বা চুড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচিত ফলাফল বোর্ডে ও ওয়েব সাইডে দিতে হবে, সেটা আমার জানা ছিলো না।
আন্দোলনকারীরা বলেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ‘লাখ টাকায় বিদ্যালয়ের ফাঁকা (তথ্যউপাত্তবিহীন) ওয়েব সাইড বানিয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ৩০লাখসহ ৩টি নিয়োগে অর্ধকোটি টাকা লুটে নিয়ে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য করেছে। দেশে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শ’শ শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে শহিদ হয়েছেন, সেই সময়ে মেধার স্থলে টাকার কোটার এখানে নিয়োগ হয়েছে, এ নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম জানান, যারা অভিযোগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। নিয়োগ বিধিমালার বিধি-বিধান মেনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মহাপরিচালকের প্রতিনিধি’র উপস্থিতিতে তারাই প্রশ্ন করেছেন, পরীক্ষা নিয়েছেন। মেধা যাছাইয়ের ভিত্তিতে যিনি প্রথম হয়েছেন, তাকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে আন্দোলনকারীরা বলেন, এ বিদ্যালয়ে একের পর এক অনিয়ম হয়েছে। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটিতে সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. এনামুল হক সরকারকে দুর্নীতির মাধ্যমে বিদ্যুৎসাহী সদস্য করা হয়েছে। এসব অবৈধ কমিটি অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরও অপসারণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মো. এনামুল হক সরকার জানান, তিনি এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সদস্য সচিব থাকা অবস্থাতেই অবসরে যাওয়ার পর থাকে বিদ্যুৎসাহী সদস্য নির্বাচিত করার আগাম সিদ্ধান্ত হয়েছে। ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, যিনি কমিটির সদস্য সচিব-তিনিই সেই কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য হওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা বিধিসম্মত নয়।