ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার স্টেশন রোড মোড় থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত প্রধান সড়কটিতে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে খানা-খন্দক ও গর্তের কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী।
পৌর শহরের স্টেশন রোড মোড়ে ভাঙনরোধে দেয়া ইটের সোলিং এখন বিপদজ্জনক হয়ে পড়েছে। ইটের সোলিংয়ে গাড়ি উঠতে ও নামতে উল্টে পড়ছে। নুরুল আমিন খান উচ্চ বিদ্যালয়, জাগরণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাদেক মেমোরিয়াল কিন্ডারগার্টেন, সায়মা সাহাব একাডেমি’র সামনে ভাঙনে শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। উত্তরবাজার গ্রামীণব্যাংকের সন্নিকটে শতাধিক গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায়শ: গাড়ি উল্টে যাচ্ছে। এ সড়কে ২০২৩সনের ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্রসূতি মা হাসপাতালে যাওয়ার পথে ভাঙা সড়কের ঝাঁকুনিতে অটোরিকশাতেই নবজাতকের জন্ম হয়। এ সময় পথচারীরা অটোরিকশার কাপড় দিয়ে বেস্টনি সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নবজাতক ও মাকে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি ছিলেন বোকাইনগর ইউনিয়নের মিরিকপুর গ্রামের আশরাফুল আলম টিটুর স্ত্রী ফারজানা আক্তার পিংকি। এ প্রসঙ্গে ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মী মোছা. বিলকিস আক্তার বলেন, ভাঙা রাস্তা ও খানা-খন্দক অতিক্রমের সময় অতিরিক্ত ঝাঁকি লাগে। রাস্তার ভাঙাটায় এসে প্রত্যেকবার ‘মেয়েটা শুধু মা-মা বলে চিৎকার করছিল, আমরা দু’জন তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছি। পেটের সন্তানকে তো আর জড়িয়ে ধরতে পারি নাই! ভাঙা-চোরা রাস্তার কারণে হাসপাতালে যাওয়ার আগেই ফুটফুটে শিশুবাচ্চাটা মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে।
এদিকে হাসপাতালে আসা সেলিনা বেগম বলেন, এই সড়কে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো ডেলিভারী রোগী আসা-যাওয়া কষ্টের বিষয়। নুরুল আমিন খান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া তাবাসসুম জানায়, যানবাহনে চলাচল যেমন কঠিন। তার চেয়েও কষ্টকর হেঁটে যাওয়া। গর্তে জমা থাকা ময়লাযুক্ত পানি ছিটে পড়ছে আমাদের শরীরে। সড়কে দুর্ভোগ নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক চলছে মন্তব্যের পর মন্তব্য, নেটিজেনরা ক্ষোভে ফুসছেন। রামগোপালপুর ইউনিয়নের নওয়াগাঁও গ্রামের রিকশা চালক সুরুজ আলী জানান, এ টুকু রাস্তার কারণে হাসপাতালে রোগী নিয়ে যেতেও ভয় লাগে। রাস্তার ভাঙায় পড়ে রোগীরাও চিল্লায়-চেঁচামেচি করে। অযথা আমাদেরওক গালি দেয়। ভাঙা রাস্তা আমরা কী করবো?
জানা যায়, পৌর শহরের বালুয়াপাড়া মোড় থেকে গাভীশিমুল পর্যন্ত প্রধান সড়কের ৫হাজার ৫৫০মিটার সংস্কার ও মেরামত কাজের গতবছরের ৮ নভেম্বর কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন তৎকালীন এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি। নির্মাণ কাজের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। তবে কাজটি অনুমোদন ও কার্যাদেশ পেতে বিলম্ব হয়। এপ্রিল মাসের মধ্যে বালুয়াপাড়া মোড় থেকে পাটবাজার মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কার ও মেরামত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. সোহেল রানা যুগান্তরকে বলেন, আমরা জুন পর্যন্ত প্রায় এক কোটি টাকার কাজ করেছি। এখন পর্যন্ত একটাও বিল পাই নাই। আর বর্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় বাকী কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে এমপি নির্বাচনের আগেই নুরুল ভাঙা সড়কটুকু রোলার মেড়ে সমান করে দেয়া হয়েছিলো।
ফান্ডের সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করেন উপজেলা প্রকৌশলী অসিত বরণ দেব। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৯৪লাখ টাকার একটা বিল পাঠিয়ে ছিলাম। ফান্ডের অভাবে সেই বিলটাও হয়ে আসে নাই। তারপরেও ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রæত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করা চেষ্টা করছি।