ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের পূর্বদাপুনিয়ার রিকশা চালক হতদরিদ্র শরিফুল ইসলাম কন্যা সুরভী আক্তার লামিয়া এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মা মর্জিনা আক্তার মালার চোখের জ্যোতি এখন সুরভী। বাবার ভিটেমাটি নেই, নেই নিজস্ব ঘর-দরজা; ভাড়া বাসায় কাটছে ওদের জীবন। মায়ের সেবা, পিতা ও ছোট ভাইয়ের তিনবেলার খাবার তৈরি করে নিত্যদিনের পড়া প্রস্তুত করতে হয়েছে তাকে। শতবাঁধা পেরিয়ে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে সে।
সুরভী ময়মনসিংহের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণির সমাপনি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। তার বাবার কোনো বাড়িঘর নেই! আছে পূর্বদাপুনিয়ায় মাত্র ২শতাংশ ভূমি। আর্থিক অভাবের কারণে সেখানে কোনো ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে পারেন নাই। ৭ম শ্রেণির পড়া অবস্থায় সুরভীর মায়ের মাথা ব্যাথা ও চোখে সমস্যা দেখা যায়। চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতালে। অপারেশন করলে ভালো হবে এমন আশা ছিলো। কিন্তু অপারেশনের পর চিরতরে চোখের আলো হারিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে যান তার মা। সুস্থ্য করার জন্য ঢাকায় একাধিক হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ মুর্হূতে আর চোখের দৃষ্টি ফিরে আসে নাই। স্ত্রী’র চিকিৎসা করাতে গিয়ে আর্থিক দৈনদশায় পড়েন রিকশা চালক মো. শরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুই নেই, একটি জমি আছে সেখানে কোনো ঘর করতে পারছি না। ভাড়া বাসায় আছি প্রায় ৫বছর যাবত। মেয়েটার রেজাল্ট ভালো হয়েছে, বুকটা আনন্দে ভরে গেছে। কিন্তু এখন শুনলাম পলিটেকনিক্যালে ভর্তি করলে প্রথমদিনেই ২০হাজার টাকা লাগবো। আমি এতো টাকা পাবো কোথায় আর সারাবছর ওর খরচ কিভাবে চালাবো। তিনি আরও বলেন, মেয়েটা উপবৃত্তির আবেদন করলো উপবৃত্তি পেলো না। বেতন-ভাতাও কম রাখে নাই।
সুরভী আক্তার লামিয়া জানান, আমার আড়াই বছরের ছোট ভাই আছে হুজাইফা নুর মাহাদী। ছোট ভাই আর মাকে দেখাশোনা করতে হয়। তাদের জন্য তিনবেলার রান্নাও আমি করি। পরীক্ষার দিনগুলোতে রাতেই সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার তৈরি করে রেখে গেছি। পরীক্ষা দিয়ে এসে রাতের রান্না করেছি।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান জানান, উপবৃত্তির জন্য নোটিশ করা হয়। যারা আবেদন করে তাদেরগুলো অনলাইনে পাঠিয়ে দেই। যাছাই-বাচাইয়ের কি পদ্ধতি আমাদের জানা নেই। তবে ধনীরাও উপবৃত্তি পাচ্ছে, অথচ দরিদ্র মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে এটা সত্য!