আজ শুক্রবার ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:
গৌরীপুরে ইউএনও’র ব্যতিক্রমী উদ্যোগে ‘অচল হাত; সচল হলো! গৌরীপুরে বৈষম্যহীন সাম্য ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ৩১দফা উপস্থাপন গৌরীপুরে বিজয় উৎসব ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণ গৌরীপুরে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবসে সেরা গৌরীপুর মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের মতবিনিময় সভা গৌরীপুরে মাদক বিরোধী প্রচারাভিযান গৌরীপুরে রামগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান তারেক রহমানসহ সকল আসামীদের খালাস পাওয়ায় গৌরীপুরে আনন্দ মিছিল ভারতে হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে তারাকান্দায় প্রতিবন্ধীদের মাঝে হইল চেয়ার বিতরণ
তাসাদদুল করিম || ওয়েব ইনচার্জ, দৈনিক বাহাদুর
  • প্রকাশিত সময় : জানুয়ারি, ১৪, ২০২৪, ১২:৩৫ অপরাহ্ণ




গ্রামের প্রথম বিসিএস ক্যাডার গোলাম সারোয়ার

বিসিএস নামক সোনার হরিণকে সবাই পেতে চায়। কিন্তু কয়জনই তা পায়? সেই সোনার হরিণকেই জয় করেছেন নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী গোলাম সারোয়ার রবিন। তিনি ৪৩তম বিসিএসে ট্যাক্স ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার গগডা কোনাপাড়ায় গোলাম সারোয়ার এর বাড়ী। তিনি তার গ্রামের প্রথম বিসিএস ক্যাডার। বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক এসআই, বর্তমানে গগডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। গোলাম সারোয়ার গগডা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে জিপিএ-৫ এবং শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ ময়মনসিংহ থেকে বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ২০১৪-১৫ সেশনে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতককোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। নিজের সাফল্যের অনুভূতি জানিয়ে গোলাম সারোয়ার বলেন, রেজাল্ট প্রকাশের দিন পরিবারের সবাই সব কাজ ফেলে বাড়ীতেই ছিল। রেজাল্ট প্রকাশের সাথে সাথেই নিজের রোলটা পিডিএফ সার্চ বক্সে লিখে বিসমিল্লাহ্ বলে ক্লিক করলাম। যখন দেখলাম ট্যাক্সে ২১ নাম্বারে আমার রোলটা, তখন দৌড়ে আমার রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম, ছোটবোন আবার মিলিয়ে দেখলো। প্রথম কয়েক মিনিট সবাই চুপচাপ, বিষয়টা স্বপ্নের মত মনে হচ্ছিল। আব্বা-আম্মা কান্না জড়িত কণ্ঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে। অনুভূতিটি বলে বুঝানো সম্ভব নয়। আমার এই সাফল্যের পিছনে বাবা-মা, বোনেরা, শিক্ষক, কলিগ, আত্মীয়-স্বজন পরিচিত অনেক বড় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অনেক অবদান রয়েছে।

প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রস্তুতির শুরুটা আকস্মিক ছিল। প্ল্যান অনুযায়ী অনার্সে ভালো রেজাল্ট করলাম। থিসিস পেপার পাবলিশ করলাম উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাবো বলে। কিন্তু করোনা মহামারির সময় মা-বাবার সাথে কিছু দিন থেকে বুঝতে পারলাম তাদের দুনিয়া টা আমাকে ঘিরে। তাদেরকে সাথে নিয়েই এই জনম কাটিয়ে দেওয়ার প্ল্যান যখন হলো, তখন বিসিএস এর পরিকল্পনা শুরু করলাম। আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট, আমরা স্ট্র্যাটিজিও আমি সাইন্টিফিক ওয়েতে তৈরি করলাম। বাজারে অসংখ্য বই থেকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী সাবজেক্টটিভ বই কিনে যাত্র শুরু। শুরুতে আমি সিলেবাস দেখে উইকজোন খুঁজে বের করলাম তারপর নিজের উইকজোনগুলোকে স্ট্রংজোন বানানোর চেষ্টা করলাম। প্রথমে মাথায় এটা সেট করে নিলাম যে, আমি জেনারেল প্রার্থী, তাই ভালো ক্যাডার হতে হলে আমাকে টোটাল মেরিট এ ৫০০ এর ভিতরে থাকতে হবে। আমার বাবা-মা খুবই স্বপ্নবাজ মানুষ, আমি গ্রামে বড় হয়েছি কিন্তু আমার বাবা-মা আমাকে সীমাহীন স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন ।

আমার গ্রামে কোন বিসিএস ক্যাডার ছিল না তাই তাদের খুব ইচ্ছে আমি যেন হই। অবশেষে আমার গ্রামের প্রথম বিসিএস ক্যাডার আমি হতে পেরেছি।
দৈনিক ১৪-১৫ ঘন্টা করে পড়াশোনা করেছেন গোলাম সারোয়ার। তিনি বলেন, করোনা লক ডাউনে গ্রামে এসে রুমবন্দি হয়ে তখন দুইটা টিউশনি করতাম বাড়ীতে। পরিবারের বোঝা না হয়ে থেকে নিজের খরচটা নিজে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতাম। আমি এক রুটিনে কাটিয়েছি করোনার দেড় বছর। পরিবার সম্পর্কে তিনি বলেন, পরিবার সম্পর্কে বলতে গেলে গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা একজন মানুষ আমি। আর্থিক অবস্থা মোটামুটি হলেও মা-বাবার সাহস ছিল অপরিসীম। তারা কখনো মনোবল হারায়নি। সব সময় সাহস দিয়েছে যে, আমরা আছি, তোমার যেটা ভালো লাগবে তাই করবা। এক কথায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমার স্বাধীনতা ছিল। সেই স্বাধীনতা পেয়েছি বলেই তিনটা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর সরকারি চাকুরি ছেড়ে দিয়ে বিসিএসের পিছনে ছুটতে পেরেছি।

ক্যাডার চয়েসের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যাডার চয়েস একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে আমি আমার পছন্দের ক্যাডারগুলো এবং আমার একাডেমিক বিষয়গুলো সংমিশ্রণ করে চয়েস দিয়েছি। ক্যাডার চয়েসের ক্ষেত্রে আমি মনে করি যেসব ক্ষেত্রে আপনি কমর্ফোট মনে করবেন এবং আনন্দের সাথে করতে পারবেন সেগুলোকে প্রধান্য দেওয়া উচিৎ’।

যারা বিসিএস দিতে চান তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা আগামীতে বিসিএস দিতে চান তাদের জন্য আমার পরামর্শ থাকবে, পরিশ্রমী এবং অসম্ভব ধৈর্য্যশীল হতে হবে। সৃষ্টিকর্তার উপর ও নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে যে আমি পারবো।
গোলামা সারোয়ারের বাবা মো. শামছুর রহমান বলেন, ছেলের সফলতায় আমরা সবাই খুশি। গগডা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম জিপিএ-৫ পাওয়ার পর থেকে সবাই আরো বেশি আশাবাদী। ছোটবেলা থেকেই গ্রামের সবাই ওকে চিনে সম্ভাবনাময় ছাত্র হিসেবে। ব্যাক্তিগতভাবে চিনে না কিন্তু রবিন নামে একটি ছাত্র আছে গ্রামে এটা সবাই জানে। গ্রামের প্রথম বিসিএস ক্যাডার হওয়ায় গ্রামের সবাই তার প্রশংসা করছেন। বলছে, আপনার ছেলে গ্রামের মুখ উজ্জ¦ল করেছে। বাবা হিসেবে এর থেকে প্রাপ্তির কি হতে পারে?

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মহিনুজ্জামন মঈন বলেন, ছাত্র হিসেবে সে খুব মেধাবী, ক্রিয়েটিভ এবং স্মার্ট। তাকে নিয়ে আমাদের আশা ছিল, সে হতাশ করেনি। তার সাফল্যে আমরা গর্বিত।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১