কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে চলতি রবি মৌসুমে সরিষা চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের । সরিষা চাষ করে নিজেদের ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে, কেউ আবার সরিষা চাষ করে লাভবান হওয়ায় আশায় করছেন সরিষার আবাদ। জমিতে বীজ বপনের পর বর্তমানে খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। দিন যতই গড়াচ্ছে কৃষকের নিবিড় মমতায় বেড়ে ওঠা সরিষার খেত হলুদ ফুলে ছেয়ে যাচ্ছে। ভালো ফলনের আশায় বুক বাঁধছেন চাষিরা। আর কৃষি বিভাগ বলছে উপজেলায় এবারে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের দাবি, উপজেলায় সরিষার চাষাবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। আমন চাষাবাদের বীজ বপনের সময় থেকেই কৃষকদের স্বল্প মেয়াদি ধান চাষাবাদ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ধান চাষাবাদ করে একই জমিতে যাতে অনায়াসে সরিষা সহ অন্যান্য রবি ফসল ফলানো যায় সেজন্য কৃষকদের ব্রিধান-৫৬, ব্রিধান-৭১, ব্রিধান-৭৫ ব্রিধান-৮০,ব্রিধান-৮৭ ও বীণা-৪,বীণা -৯ জাতের আগাম ও উচ্চ ফলনশীল ধান চাষাবাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। মাঠ পর্যায়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুফল মিলেছে। আগেভাগেই ধান কেটে নিয়ে একই জমিতে এখন অনেক কৃষক রবি মৌসুমের চাষাবাদ করছেন। পাশাপাশি সরিষার চাষাবাদ করে করে ভোজ্য তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ১হাজার ৯০০ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সরিষা বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে অধিক পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। উপজেলার চরাঞ্চল থেকে সমতল ভূমিতে তাকাতেই চোখে পড়ছে সরিষার খেত। আর কৃষকরা জানিয়েছেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে কম খরচ ও সময়ে অল্প খাটাখাটুনিতে সরিষার চাষ করে ফসল ঘরে তোলা যায়। পাশাপাশি সারাবছরই বাজারে সরিষার চাহিদা থাকে এবং ভালো দাম পাওয়া যায়। চাষাবাদ করে লাভবান হওয়া যায় বলে সরিষা চাষে আগ্রহ বেড়েছে তাদের।
উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের শাহবাজার এলাকার কৃষক শাহজাহান আলী জানান, তিনি এবারে তিন বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষাবাদ করতে জমিতৈরি, বীজ, সার, সেচ, ঔষধ ও অন্যান্য খরচসহ তার প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ হবে। তিনি প্রতি বিঘা জমিতে ৫ থেকে ৬ মণ সরিষার ফলন পাওয়ার আশা করছেন। আশানুরূপ ফলন পেলে প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষাবাদ করে করে তার ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি। তাছাড়া তিনি একই জমিতে পরবর্তীতে কম খরচে বোরাে ধান চাষাবাদ করে লাভবান হওয়া যাবে বলেও জানান।
ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রাবাইতারি গ্রামের কৃষক আবু বকর ও শাসছুল হক জানান, কৃষি অফিস থেকে তারা বিনামূল্যে সরিষা বীজ ও সার পেয়ে সরিষা চাষ করছেন। জমিতে বীজ বপনের ১৭ দিনের মাথায় তারা জমিতে উপরি সার প্রয়োগ করছেন। খেতের অবস্থা ভালো থাকায় ভালো ফলন পাওয়ার আশা এই দুই কৃষকের।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, উপজেলায় এবারে ১ হাজার ৬৫০হেক্টর জমিতে বীণা- ৪, ৯,১১, বারি-৯, ১৪ ,১৭,১৮ জাতসহ স্থানীয় জাতের টরি-৭ ও কাজলি সরিষা চাষাবাদ হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবারে ৩০০ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষাবাদ হচ্ছে। আমারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।