বাজারে চাল, চিনি, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের দামের উল্লম্ফন ঘটছে দীর্ঘদিন ধরেই। বিশেষ করে বাম্পার ফলন সত্ত্বেও চালের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এতদিনে চিহ্নিত করেছে যে চাল, ভোজ্যতেল ও চিনি বিক্রি হচ্ছে যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে বেশি দামে। সাধারণভাবে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে বাজারে পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকলে পণ্যের দাম বাড়তেই পারে।
কিন্তু আমাদের দেশের বাজারে এ নিয়ম যেন খাটে না। দেখা যায়, পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানি ও সরবরাহ থাকলেও তা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।দ্রব্যমূল্যের এই অযৌক্তিক বৃদ্ধির পেছনে কাজ করে বাজার সিন্ডিকেট বা চক্র। তারা যোগসাজশের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো তারা পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। নানা অজুহাত তুলেও বাড়ানো হয় পণ্যের দাম। এসব ক্ষেত্রে বেশি দামে পণ্য ক্রয় ছাড়া ভোক্তাদের আর কিছু করার থাকে না। এভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা এক ধরনের অপরাধ নিশ্চয়ই। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে এমন ঘটনা বিরল। ফলে বাজারে কারসাজি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের এ প্রবণতা প্রতিরোধ করার দায়িত্ব সরকারের। ব্যবসায়ীরা কায়েমী স্বার্থে ইচ্ছামতো নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে, আর সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, এটা চলতে পারে না।
দেরিতে হলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিনটি পণ্যের অযৌক্তিক দামের বিষয়টি চিহ্নিত করেছে, এ জন্য আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। এখন দেখার বিষয়, বাজারে এর কী প্রতিফলন ঘটে এবং যারা এই অযৌক্তিক দামবৃদ্ধি ঘটিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বস্তুত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলেই তারা ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার সাহস পায়। কাজেই এ ধরনের ব্যবসায়ীদের শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করা জরুরি। বাজারে সত্যিকার অর্থে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে অযৌক্তিকভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটত না। সরকারের পক্ষ থেকে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয় বটে, তবে তার মধ্যে যে নানা ফাঁক বা শৈথিল্য রয়েছে, তা সহজেই বোঝা যায়। এই ফাঁকগুলো বন্ধ করতে হবে। বাজারে অযৌক্তিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা দেখতে চাই আমরা। <<যুগান্তর>>