বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

১ ডিসেম্বর: গৌরবদীপ্ত বিজয়ের মাস শুরু

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১
বাহাদুর ডেস্ক || ওয়েব-ইনচার্জ
  • প্রকাশিত সময় : ডিসেম্বর, ১, ২০২১, ১২:৩২ অপরাহ্ণ

আজ ১ ডিসেম্বর। বিজয়ের মাসের প্রথম দিন। একাত্তরে ডিসেম্বর মাসের সূচনা হয় মুক্তির বারতা নিয়ে। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় এলেও এর অনেক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা হানাদারমুক্ত হতে শুরু করে। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মুক্তাঞ্চলের প্রসারতা। একাত্তরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- রংপুর, কুমিল্লা, দিনাজপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, সিলেট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। অক্টোবর কিংবা তার আগে গ্রাম কিংবা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত শত্রুমুক্ত হলেও নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এসে মুক্তির আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে অনেক থানা কিংবা কোনো কোনো জেলার অধিকাংশ এলাকায়। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ নভেম্বর পঞ্চগড় জেলা শত্রুমুক্ত হয়। ৩০ নভেম্বর সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয় সিলেটের তামাবিল সীমান্তবর্তী এলাকা।


১ ডিসেম্বর সিলেটের কানাইঘাটে সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৩০ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। বড়লেখা ও জুড়ি এলাকা থেকে হানাদার বাহিনী কামান সরিয়ে ফেলে। আর মুক্তিবাহিনীর হাতে পাকসেনারা বিপুল ক্ষতির শিকার হয়ে কুলাউড়ার দিকে পালিয়ে যায়।

এদিন মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়ার দর্শনা ও সিলেটের শমসের নগর আক্রমণ করে। কুষ্টিয়ার কাছে মুন্সীগঞ্জ ও আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের মধ্যে মুক্তিসেনারা মাইন বিস্ফোরণের মাধ্যমে পাক সৈন্যবাহী ট্রেন বিধ্বস্ত করে। এতে বহু পাকসেনা হতাহত হয়। সিলেটের ছাতক শহরে মুক্তিবাহিনী ও পাকসেনাদের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ৬৫ জন রাজাকার নিহত হয়। আর মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জ মৌলভীবাজার মুক্ত করে সামনে এগিয়ে যায়। কুমিল্লার কসবা রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৬০ জনের বেশি পাকসেনা নিহত হয়।

সিলেটের শমসের নগর ও কুষ্টিয়ার দর্শনা দখল লড়াইয়ের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে। এদিন রাতে কর্নেল শফিউল্লাহ, দ্বিতীয় বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার মেজর মঈন, ১১ বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার মেজর নাসিমের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী ও বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেরানী, সিঙ্গারাইল, গৈরালসানী, রাজাপুর ও আজমপুর এলাকা শত্রুমুক্ত করে। যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন খাঁ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) শহিদ হন। আর ২৩ জন পাকসেনা নিহত হয়।

সাতক্ষীরা মহকুমার কালিগঞ্জ পাকবাহিনী মুক্ত হওয়ায় বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান, শ্রী ফণি মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ এমএনএ, অর্থসচিব এ জামান, আইজি এম এ খালেক কালিগঞ্জে বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠাকল্পে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।

এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী পশ্চিম ফ্রন্টে আক্রমণাত্মক ও পূর্ব ফ্রন্টে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশকে হানাদার বাহিনীমুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাজ্য সভায় বক্তৃতাকালে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তনি সৈন্য অপসারণের নির্দেশ দেওয়ার জন্য পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান।

অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়- সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, রাজশাহী ও যশোর জেলার ৬২টি থানা এবং নোয়াখালী জেলার সব চর এলাকায় বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।