আজ শুক্রবার ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাহাদুর ডেস্ক || ওয়েব-ইনচার্জ
  • প্রকাশিত সময় : জানুয়ারি, ১৫, ২০২২, ৭:৫৭ অপরাহ্ণ




‘হাতপাখা’ কাকে দেবে বাতাস, কার করবে সর্বনাশ

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে ‘নৌকা’ ও ‘হাতির’ পর ‘হাতপাখা’ যে নীরবে তৃতীয় শক্তির বাতাস দিচ্ছে- এর বিজ্ঞাপন হয়ে গেল প্রচারের শেষ দিনের শোডাউনে। গতকাল শুক্রবার নগরের চাষাঢ়ায় হাতপাখার মিছিলের অবয়ব আর লোকবলের উপস্থিতি নৌকা ও হাতির চেয়ে ছোট হলেও একবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

মেয়র পদে ভোটের মূল লড়াইয়ে থাকার সম্ভাবনা তলানিতে থাকলেও বরাবরের মতো হাতপাখার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট আইভী নাকি তৈমূর- কাকে কাঁদাবে- এমন প্রশ্ন উড়ছে ভোটের মাঠে। দিন বিশেক আগে নারায়ণগঞ্জ সিটির সীমানা লাগোয়া দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়ে জয়ের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল ইসলামী আন্দোলনের ‘হাতপাখা’।

একে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট বাড়ার ইঙ্গিত বলে দাবি করে চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন তথা হাতপাখার মেয়র প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেছেন, ‘জয়ের জন্যই নির্বাচনে লড়ছি। কারও ভোট কাটতে নয়।’

২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নাসিকের দ্বিতীয় নির্বাচনে প্রায় ১৪ হাজার বা ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন মাসুম বিল্লাহ। নৌকা নিয়ে প্রায় পৌনে দুই লাখ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হওয়া আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং ধীনের শীষ নিয়ে ৯৬ হাজার ভোট পাওয়া বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খানের পরেই ছিল তার অবস্থান।

আইভী এবারও নৌকার প্রার্থী। বিএনপি ভোটে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তৈমূর আলম খন্দকার হাতি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭। আগের নির্বাচনে ভোটার ছিলেন চার লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১। ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। এবার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন হবে। ভোট পড়ার হার আগেরবারের মতো বা তারচেয়ে কম হতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। সে কারণে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার ভোট ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

মাস ছয়েক আগে বিএনপির জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া খেলাফত মজলিসের দেয়ালঘড়ি প্রতীকে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন সিরাজুল মামুন। দেয়ালঘড়ি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পাবে- এমন সম্ভাবনা একেবারেই কম। তবে ভোটের মাঠে আলোচনা রয়েছে, খেলাফত নির্বাচনে না থাকলে তাদের ভোট হাতিতে যেত। ফলে দেয়ালঘড়ির ভোট বাড়লে ক্ষতি বাড়বে হাতির।
তবে হাতপাখার ভোট নৌকা, হাতি কিংবা অন্যদিকেও যাওয়ার কথা নয় বলে দাবি করেছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের ভাই তথা দলের জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী।

তিনি  বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হলে নৌকা ও হাতির লড়াইয়ে হাতপাখা জয়ী হবে। তার অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ভোটাধিকার, নাগরিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। বিএনপি বিরোধী দল হিসেবে জনগণের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ। তার দাবি, তাই দুই দলের ওপর বিরক্ত জনগণ হাতপাখার জয় চায়।’

প্রচারের শেষ দিনে বন্দর এলাকায় গণসংযোগ করেন মাসুম বিল্লাহ। তার দাবি, আগেবারের চেয়ে এবার ভোটারদের সাড়া বেশি পাওয়া যাচ্ছে। ভোটও আগেরবারের কয়েক গুণ বেশি পাবেন। সেই সংখ্যাটি কত হতে পারে, তা বলতে চাইলেন না। তবে এক পর্যায়ে বলেই ফেললেন, ৬০ থেকে ৭০ হাজারের কম হবে না।

এই ভোট পেলে মেয়র হওয়া যাবে না, তা মানছেন মাসুম বিল্লাহ। তিনি বলেছেন, তারা আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো বর্তমান দেখে রাজনীতি করেন না। ভবিষ্যতের জন্য মাঠ প্রস্তুত করছেন। একদিন নারায়ণগঞ্জে হাতপাখার বাতাস বইবে।

নির্বাচন বিশ্নেষকরা ধারণা করছেন, ২০ থেকে ২৫ হাজার ভোট পেতে পারে হাতপাখা। নৌকা ও হাতির লড়াই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে এই ভোটেই ফল নির্ধারিত হবে। আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি- কার ভোট নিজের দিকে টানছে ইসলামী আন্দোলন এর জবাবে মাসুম বিল্লাহ বলেছেন, যারা ইসলাম পছন্দ করে তাদের ভোট আসবে হাতপাখায়। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব দলের কর্মী-সমর্থকরা ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে। হিন্দুদের ভোটও পাচ্ছে হাতপাখা।

সিটি করপোরেশনের সীমনাঘেঁষা ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের গত ২৬ ডিসেম্বরের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৫ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছে হাতপাখা। ১৯ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হয় নৌকা। কাশিপুর ইউনিয়নে ভোটের আগের রাতে সরে দাঁড়িয়েও ১৩ হাজার ভোট পান হাতপাখার প্রার্থী। জয়ী নৌকা পেয়েছে ২১ হাজার ভোট। প্রার্থী সরে যাওয়ায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি বিলুপ্ত করেছে ইসলামী আন্দোলন।

জেলার আহ্বায়ক দ্বীন ইসলাম সমকালকে বলেন, কমিটি বিলুপ্তিই প্রমাণ করে নির্বাচনকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে ইসলামী আন্দোলন। ইউনিয়ন পরিষদের মতো সিটি নির্বাচনেও মূল লড়াইয়ে থাকবে হাতপাখা।

মেয়র প্রার্থী মাসুম বিল্লাহর অভিযোগ, আওয়ামী লীগ এমপি শামীম ওসমানের চাপে কাশীপুর ইউনিয়নে হাতপাখার প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে যান। ভোট সুষ্ঠু হলে দুটি ইউনিয়নেই জিততো ইসলামী আন্দোলন। চাপে পড়লে তিনিও ভোট থেকে সরে দাঁড়াবেন কিনা- এর জবাবে হাতপাখার প্রার্থী বললেন, শহীদ হলেও নির্বাচন ছাড়ব না।

নারায়ণগঞ্জের ২৭ ওয়ার্ডের ১১টিতে ইসলামী আন্দোলনের সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। দলটির দাবি, সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডে সোহরাব হোসেন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মো. ইমরান এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সোহেল প্রধানের অবস্থান অনেকটাই ভালো। শামীম ওসমান সিদ্ধিরগঞ্জের এমপি। আইভীর সঙ্গে তার বিরোধ পুরোনো। ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সমীকরণ অনুযায়ী, বিরোধের কারণে আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হবে। ভোটকেন্দ্র কেউ দখলে নিতে পারবে না।

নারায়ণগঞ্জ এলাকায় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক কিছু ভোট খেলাফত মজলিসের রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সেই ভোট হাতিতে যাওয়া ঠেকাতে বিএনপির সঙ্গে ২২ বছরের জোট ভাঙা খেলাফত প্রার্থী দিয়েছে কিনা- এ প্রশ্ন রয়েছে। দলটির মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, খেলাফত কারও ভোট কাটতে, সুবিধা করে দিতে প্রার্থী দেয়নি।

গত মার্চে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অতিথি করার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে সহিংসতার মামলায় কয়েক মাস কারাগারে ছিলেন ড. আহমদ আবদুল কাদের। মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে হেফাজতের ব্যাপক তৎপরতা ছিল। একাদশ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষে শামীম ওসমানের বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মনির হোসেন কাসেমী। সহিংসতার মামলায় তিনিসহ হেফাজতের অধিকাংশ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় এবং কমিটি বিলুপ্ত করায় সংগঠনটির চোখে পড়ার মতো তৎপরতা নেই নাসিক নির্বাচনে।

নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জের ভোটের রাজনীতিতে কখনোই শক্ত অবস্থানে ছিল না। এবারের নির্বাচনে তাদেরও তৎপরতা নেই। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক হেফাজত সমর্থক ও জামায়াতের ভোট কোন দিকে যাবে তা স্পষ্ট না হলেও নৌকায় যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০