আজ বৃহস্পতিবার ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রধান প্রতিবেদক || দৈনিক বাহাদুর
  • প্রকাশিত সময় : মার্চ, ৩, ২০২২, ৮:১২ অপরাহ্ণ




যৌন হয়রানি পিছু ছাড়ছে না ‘গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে’

আজ বিশ্ব যৌন নিপীড়ন বিরোধী দিবস। যৌন নিপীড়নে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আলোচিত ‘গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।’ এ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিশুদের উপর যৌন হয়রানির অভিযোগ পিছু ছাড়ছে না! এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌস এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হন! আরেক সহকারী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের জন্য শিক্ষার্থীরা স্কুল ছাড়লেও তিনি এ বিদ্যালয় ছাড়তে নারাজ!

২০২১সনের ৩১ অক্টোবর সকালে পৌর শহরের শহীদ মঞ্জু সড়ক এলাকায় মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম মাস্টারের বাসায় প্রাইভেট পড়তে গিয়ে ওই স্কুলছাত্রী যৌন নিপীড়নের শিকার হন। পরে ওইদিন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বিচার চেয়ে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে অন্যত্র প্রেষণে বদলে করেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার (৩মার্চ/২০২২) ওই ছাত্রী গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেইটে এসে দেখতে পান আলোচিত শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম দাঁড়িয়ে আছেন। ভয়ে আতঙ্কে ওই ছাত্রী দৌড়ে বাসায় চলে যান। এরপর তার বাবা এসে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌসের নিকট মেয়েকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘ছাড়পত্র’ দিতে বলেন। প্রধান শিক্ষক এসময় ছাড়পত্র দিতেও অস্বীকৃতি জানান। প্রধান শিক্ষক একেএম মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌস জানান, এই শিক্ষার্থীর বিষয়টা উর্ধ্বতন মহল অবগত তাই ছাড়পত্র দিতে পারছি না।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন বলেন, সহকারী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামকে নন্দুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রেষণে বদলি করা হয়েছিলো। তিনি তো পৌর মডেলেরই শিক্ষক। তাই যোগদান করতে এসেছেন।

অপরদিকে উল্টো যৌন হয়রাণির অভিযোগ করে ভিকটিমের পরিবার উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীনের তদন্তের নামে গাড়ী হাকিয়ে দলবল নিয়ে বাড়িতে যাওয়ায় সামাজিকভাবে হেয়-প্রতিপন্ন ও হয়রানির শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ভিকটিমের বাবা এ প্রতিনিধিকে জানান, আমি মেয়ের বাবা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং পরিবারের লোকজনকে একেকবার তদন্তের নামে হেনাস্তা করেছে শিক্ষা অফিস। আমি আমার মেয়ের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার আর বিচার চাই না, আমার মেয়েকে অন্যত্র ভর্তি করার জন্য ‘ছাড়পত্র’ দিয়ে দিন। তিনি আরো বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও হাসান মারুফের উপস্থিতিতে বিচারের আশ^াস দেয়া হয়। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এখন পর্যন্ত ধামাচাপা দিতেই ব্যস্ত, সে কারণে আমি ও আমার পরিবারের লোকজন বিব্রত!

এ দিকে এ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ একাধিক অভিযোগ প্রতি বছরেই আসে। তবে তিনিও ‘শক্ত খুঁটি ঘেঁরে বসেছেন এ মডেল স্কুলে।’ তার বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যক্তিগত কোচিংয়ে পড়তে শিক্ষার্থীকে বাধ্য করা, কোনো কারণে কোচিং না করলে শিক্ষার্থীদের সাথে বিরূপ আচরণ এবং ফলাফলে প্রভাব বিস্তার, কোচিংয়ে পড়ানোর নামে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক আচরণে কয়েকজন শিক্ষার্থীর স্কুল ত্যাগ। এসব ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে শিক্ষা কমিটি। এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উঠা যৌন হয়রানির অভিযোগের ঘটনা নিয়ে আমরা বিব্রত। পৌর মডেলের একের পর এক ঘটনায় প্রাথমিক শিক্ষার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
অপরদিকে শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৩মার্চ তারিখে ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির বিচার চেয়ে নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান রাবেয়া ইসলাম ডলি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই বছরের ১২ মে তারিখে এ বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীকে তার অভিভাবক অন্য স্কুলে নিয়ে যেতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদনে অভিভাবক উল্লেখ করেন ‘আমার মেয়ে গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম এর ব্যক্তিগত কোচিংয়ে পড়তো। কোচিংয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে আমার মেয়েকে এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাতে অপারগতা প্রকাশ করছি।’ সেই বছর এ বিদ্যালয়ে আরো একাধিক শিক্ষার্থী এ শিক্ষকের যৌন হয়রানির কারণে বিদ্যালয় ত্যাগ করতে ছাড়পত্র নিতে চাইলে ম্যানেজিং কমিটি বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন। তবে এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাহমিনা খাতুন স্বাক্ষরিত ১২ মে তারিখে দেয়া ১৫৩৪নং স্মারকের পত্রে ছাড়পত্র দেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেন। অভিভাবককে ছাড়পত্র দিয়ে শিক্ষার্থীকে অন্য বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে অনুমতি দিলেও বারবার নৈতিকস্খলনের জন্য আলোচিত এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

এদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌসের বিরুদ্ধে ২০১২সনে ভূটিয়ারকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে থাকা অবস্থায় এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনা বিভাগীয় তদন্তের প্রমাণিত হয়। বিভাগীয় শাস্তি দিলেও তার বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা। তবে ২০১৭সনের ১ আগস্ট সহকারী শিক্ষিকা নুসরাত জাহান নিপাকে মারধর ও আঙ্গুল ভেঙ্গে দেয়ার মামলায় তিনি হাজতে যান। তিনিও প্রধান শিক্ষক হিসেবে পৌর মডেলে আছেন বহাল তবিয়তে!




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০