শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিসে বেড়েছে সেবার মান ॥ কমেছে অনিয়ম

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এম. এ আজিজ || প্রধান প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ।
  • প্রকাশিত সময় : ফেব্রুয়ারি, ১৫, ২০২২, ৭:৫০ অপরাহ্ণ

ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিসে ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন অপেক্ষা করে নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যেতো না পাসর্পোট। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়েও সঠিক সময়ে পাসর্পোট না পেয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তির অন্ত ছিল না। সুবিধাভোগি শ্রেণী ও অফিসের কিছু অসাধু ব্যক্তির কারনে গ্রাহকদের হয়রানী ক্রমেই বেড়ে চলছিল। সঠিক সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে অনেকেই নানা দুর্ভোগসহ বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে ভোগার মত একাধিক ঘটনা রয়েছে বলে বিভিন্ন মহল জানিয়েছেন। ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিসের বর্তমান উপ-পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান যোগদান করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের এই অফিসের শৃংখলা ফিরিয়ে আনাসহ জনদুর্ভোগ লাঘব, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধে কঠোর মনোভাব পোষন করেন।

ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিস সুত্রে জানা গেছে, বর্তমান উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান গত বছরের ১৪ অক্টোবর যোগদান করেন। এর পরই বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন কতিপয় সুবিধাভোগি ও অফিসের কিছু অসাধু ব্যক্তির কারনে গ্রাহকদের হয়রানীর শেষ নেই। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে যথা নিয়মে অনলাইনে আবেদন করেও তারা সঠিক সময়ে পাসপোর্ট পাচ্ছেনা। অফিসের কর্তা ব্যক্তিরা নানা অজুহাতে আবেদনকারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে এই ভুল-সেই ভুল, আবেদন সঠিক হয়নি, পুলিশ রিপোর্ট আসলেও ছলছাতুরী ও মিথ্যাচারিতার আশ্রয় নিয়ে নানা অজুহাতে আবেদনকারীদের হয়রানী করে সুবিধাভোগীদের মাধ্যমে বাড়তি সুবিধা আদায় করছে। এতে গ্রাহকদের দুর্ভোগের অন্ত ছিল না। পাসপোর্ট অফিস সুত্র আরো জানায়, বর্তমান উপ পরিচালক যোগদান করেই অফিসটির এ অবস্থা এবং গ্রাহকদের মাত্রাতিরিক্ত অসন্তোষের বিষয় জানতে পেরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে বৈঠকে বসেন। তাদের কাছ থেকেই জানতে পারেন এ সব ঘটনার সত্যতা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ, উত্তরণ, গ্রাহক সেবামান বৃদ্ধি এবং জন অসন্তোষ কমানোর পরামর্শ দেন। জনদুর্ভোগ লাঘব এবং রাজস্ব আদায়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠানটিকে একটি সুশৃংখল, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে কঠোর নির্দেশ দেন। উপ পরিচালকের কঠোর নির্দেশে অফিস কর্মকর্তা কর্মচারীরাও নড়েচড়ে বসেন।

পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক আবেদনকারী জানান, অনলাইনে ফরম পুরন করে সঠিক সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন। তাদের মতে, পাসপোর্ট করতে অনেক সময় ও সরকার নির্ধারিত ফি এর চেয়ে অধিক অর্থ গুনতে হয়। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদন করে অল্প সময়ে তারা পাসপোর্ট পেয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই অবাক হয়ে বলেন, এই অফিসের কর্মকর্তাদের আচরণ এবং সেবার মান অনেকগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেও স্বচ্ছতা ফিরে এসেছে। তারা আরো জানান, বর্তমান উপ পরিচালকের আমলে অনেক সুবিধা হয়েছে। পাসর্পোট সংক্রান্ত যে কোন সমস্যা কিংবা কোন কিছু জানতে চাইলে অফিসের বড় সাহেবের সাথে সোজাসুজি কথা বলা যায়। সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষনিক বড় কর্তা নিজে উঠে টেবিলে টেবিলে ঘুরে সমাধান করে দিচ্ছেন।
কথা হয় ফুলপুরের ব্যবসায়ি আব্দুর রহিমের সিঙ্গাপুরে কাজ পাওয়া ছেলে সোলায়মানের সাথে, তিনি পনের দিন আগে পাসর্পোট আবেদন করেছেন। অনলাইনে ফরম পুরন করে সঠিক সময়ের মধ্যেই পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন। তিনি শুনেছিলেন এ কাজে বেশ সময় ও অর্থ গুনতে হতো। পাসপোর্ট করতে এসে তিনি অবাক হয়ে যান এবং এই অফিসের কর্মকর্তাদের প্রতি মহাখুশি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, আমি অনলাইনে আবেদন করে পাসপোর্ট অফিসে গেলে অফিস প্রধান আমার পরিচয় জানতে পেরে তিনি নিজে এসে আমাকে সাথে নিয়ে আবেদন জমাদানের বিভিন্ন কক্ষে নিয়ে যান এবং মুহুর্তে কাজ শেষ করেন। এতে তিনি আন্তরিকভাবে খুশি বলে দাবি করেন।
বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার তাগিদে আসা ভালুকার সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারতে উন্নত চিকিৎসায় যাওয়ার লক্ষে নির্ধারিত ফি দিয়ে আমি অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করি। এর আগেই জানতে পারি বর্তমান অফিস প্রধান জনগণের জন্য আন্তরিক। সেই লক্ষে আমি অফিসের বড় কর্মকর্তার কাছে গেলে মাত্র অল্প সময়ে তিনি নির্দিষ্ট লোক দিয়ে আমার কাজ সমাধান করে দেন। পরবর্তীতে আমি সঠিক সময়ে আমি পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি।
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিসের উপ পরিচালক হাফিজুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি যোগদানের পর জানতে পারি বিগত ৩/৪ বছরের পুরোনো অসংখ্য পাসপোর্ট আবেদন কর্তা ব্যক্তিদের দায়িত্বহীনতার কারণে অপেক্ষমান অবস্থায় পড়ে আছে। এ সব অপেক্ষমান আবেদনকারীদের ৭০ সতাংশ আবেদনকারীদের সমস্যা ইতিমধ্যেই সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি। অন্যান্যদের আবেদন জনিত সমস্যা অতি অল্প সময়ে সমাধান হবে বলে তিনি দাবি করেন। উপ পরিচালক হাফিজুর রহমান আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন জনগণকে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিতে। সেই লক্ষেই আমার অফিস কাজ করে যাচ্ছে। পাসপোর্ট আবেদনকারীদের মধ্যে জটিল রোগীদের জন্য ঘরে বসেই পাসপোর্ট প্রাপ্তির সুবিধা নেয়া হয়েছে। এ জন্য বর্তমান সরকার উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন অত্যাধুনিক মেশিন ময়মনসিংহ অফিসে দিয়েছেন। আবেদনকারীদের যে কোন সমস্যা হলে তারা সরাসরি আমার সাথে দেখা করলে আমি যথাসম্ভব দ্রুত সমাধান করে দিব।
ময়মনসিংহ পাসর্পোট অফিস সুত্রে জানা যায়, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর পাসর্পোট অফিস হতে সরকারের আয় অনেক বেড়েছে। গত বছরের ১৪ অক্টোবর থেকে শুরু করে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত ৫ মাসে ১৪ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই সময় ২৮ হাজার ৬১২ আবেদনকারী কোন ধরনের ভোগান্তি ও হয়রানি ছাড়াই পাসপোর্ট পেয়েছেন।