বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ময়মনসিংহে হকার্স মার্কেটে আগুনের রহস্য উদঘাটন : গ্রেফতারকৃত বাবুর আদালতে স্বিকারোক্তি

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২
এম এ আজিজ || প্রধান প্রতিবেদক ময়মনসিংহ
  • প্রকাশিত সময় : নভেম্বর, ১৯, ২০২২, ৮:৩৯ অপরাহ্ণ

ময়মনসিংহের আলোচিত গাঙ্গিনারপাড় হকার্স মার্কেটে আগুনে পুড়ে প্রায় সোয়া কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। মাত্র ১৫ দিনের বেতন পরিশোধ না করায় হেলাল হোসেন বিপ্লব ওরফে বাবু পরিকল্পিতভাবে এই আগুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য স্বিকার করে বাবু। পরে তাকে আদালতে পাঠানো হলে সে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছে। শনিবার দুপুরে কোতোয়ালি পুলিশের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুল ইসলাম ফকির এ সব তথ্য জানান।

মামলার মতে, গত ২২ অক্টোবর গাঙ্গিনারপাড় হকার্স মার্কেট সহ পার্শ্ববর্তী কৃষি মেশিনারীজ মার্কেটে আগুন লাগে। মার্কেটের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা খবর পেয়ে এসে আগুন নিভানোর চেষ্টা সহ ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। ফায়ার সার্ভিস এসে নিয়ন্ত্রনে আনে। আগুনে হকার্স মার্কেটের ১৩৭ ও ৬ নং মহসিন টেইলার্স নামক দোকান ঘর সহ দোকানের মালামাল পুড়ে ২০ লাখ টাকা, ৫৯ ও ৬০ নং বুলবুল মেলা নামক দোকান ঘর সহ দোকানের মালামাল পুড়ে ২২ লাখ টাকা, ৫৮ নং সামিয়া সুজ নামক দোকান ঘর সহ দোকানের মালামাল পুড়ে ২ লাখ টাকা, মার্কেটের পাশে থাকা কৃষি মেশিনারীজ মার্কেটের লাকি মেশিনারীজ ষ্টোর নামক দোকান ঘর সহ দোকানের মালামাল ৫০ লাখ টাকা, এসএস এন্টারপ্রাইজ নামক দোকান ঘর সহ দোকানের মালামাল পুড়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা সহ সোয়া কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো বলেন, আগুনের ঘটনাটি পুলিশের কাছে সন্দেহ জনক মনে হলে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দের নেতৃত্বে ১নং ফাড়ির ইনচার্জ এসআই আনোয়ার হোসেন মার্কেটসহ আশাপাশের সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষন এবং ফুটেজ সংগ্রহ করেন।

সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ দেখতে পায়, জনৈক ব্যক্তি তরল পদার্থ ছিটিয়ে আগুন দিয়েছে। পরে ব্যবসায়ীদের সহায়তা নেয় পুলিশ। আগুন লাগানোর ছবি পর্যালোচনা করে ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত হয়, ঐ ব্যক্তির নাম হেলাল হোসেন বিপ্লব ওরফে বাবু। সে আকুয়া খালপাড় এলাকার বাসিন্দা। তার পিতার নাম সফিউদ্দিন মিন্টু। এ ঘটনায় মার্কেটের মালিক সমিতির নেতা মোখলেছুর রহমান বাদি হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা নং ৩৮ (১১)২০২২ ধারা ৪৪৭/৪২৭/৮৩৬ পেনাল দায়ের করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ১নং ফাড়ির ইনচার্জ এসআই আনোয়ার হোসেন অভিযান চালিয়ে বাবুকে গ্রেফতার করে। বাবু পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে মহসিনের টেইলার্সে দর্জির কাজ করতো। তার মুজুরী বাবদ মহসিনের কাছে ১৫ দিনের টাকা পাওনা রয়েছে। ঐ পাওনা টাকা বার বার চাইলেও মহসিন তা পরিশোধ করেনি। গত ১৫ দিন আগে একই দোকানের বিল্লাল নামক অন্য আরেক কর্মচারীর মাধ্যমে পাওনা টাকা চায় বাবু। এরপরও তার পাওনা টাকা না দেয়ায় ক্ষিপ্ত এবং প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠে বাবু। পরিকল্পনা করে মহসিনের দোকান আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে তাকে পথে বসিয়ে দিবে। এ পরিকল্পনায় বাবু গত ২১ অক্টোবর আকুয়া বোর্ড ঘর মোড়ের আরিফের দোকান থেকে ৩৫ টাকার পেট্টোল কিনে পানির খালি বোতলে ভরে নিয়ে আসেন। পরদিন বাবু পেট্টোল নিয়ে সকালে আসলে মার্কেটের দারোয়ান তাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায় তিনি কাজে এসেছেন। এক ফাকে দারোয়ান অন্যদিকে সরে গেলে বাবু পেট্টোল ছিটিয়ে আগুন দিয়ে মুহুর্তে পালিয়ে যায়। এতে আগুনে প্রায় সোয়া কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সবশেষে বলেন, সামান্য কিছু পাওনা টাকার জন্য একজন দোকান কর্মচারী বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি করেছে। যদি দোকান মালিক তার পাওনা টাকা পরিশোধ করতো তাহলে এত বড় ক্ষতি হতো না। তাই দোকান মালিকদের প্রতি তিনি আহবান কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে সবাই সোচ্চার থাকবেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, হেলাল হোসেন বিপ্লব ওরফে বাবুকে শনিবার আদালতে পাঠানো হলে সে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ সময় কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ, পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত ফারুক হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক ইন্টেলিজেন্ট সুমন রায়, ১নং ফাড়ির ইনচার্জ এসআই আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।