ময়মনসিংহের নান্দাইলে অটো চালক মোশাররফ হত্যাকান্ডের পৌনে তিনমাস পর ডিবির অভিযানে চার ঘাতক গ্রেফতার হয়েছে। সোমবার রাতে নান্দাইল ও গাজীপুরের মাওনা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের দায় স্বিকার করেছে। ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) রায়হানুল ইসলাম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এ তথ্য জানান। তাদেরকে আদালতে পাঠানো প্রত্যেকেই অপরাধ স্বিকার করে জবানবন্দি দিয়েছে
মামলা সুত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের গোবিন্দপুরের নিজ বাড়ি থেকে অটো চালক মোশাররফ হোসেন গত বছরের ২ নভেম্বর সন্ধ্যায় তার অটো নিয়ে ভাড়ায় যাত্রী বহনের জন্য বটতলা বাজার অটোস্ট্যান্ডে অবস্থান করছিল। এ সময় অচেনা চার যাত্রী রোগী বহনের নামে ৩শত টাকা ভাড়ায় অটো নিয়ে যায়। নান্দাইলের দক্ষিণ জাহাঙ্গীর গ্রামের সোরাটি বাজারের কাছে গেলে রাত পৌনে ৯ টারদিকে ঐ চার যাত্রী অটো চালক মোশাররফকে ছুরিকাঘাত করে অটো ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় নান্দাইল থানায় অজ্ঞাতদের নামে মামলা নং ৬(১১)২১ দায়ের হয়। অজ্ঞাতদের মাধ্যমে অটো ছিনতাই ও চালক হত্যার আলোচিত মামলার রহস্য উদঘাটন এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ সুপার মোহাঃ আহমার উজ্জামান মামলাটিকে অধিক গুরুত্ব সহকারে নিয়ে ডিবি পুলিশকে তদন্তভার দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো জানান, অজ্ঞাত এই হত্যাকান্ড তদন্তকালে ডিবি পুলিশ একটি রক্তমাখা গেঞ্জি ও জুতা খুজে পায়। ঐ গেঞ্জি এবং জুতার সুত্র ধরে ডিবি পুলিশ তদন্তে নামে। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় নান্দাইলের জাহাঙ্গীরপুর থেকে হত্যাকান্ডে জড়িত শাহ জালাল শিকদার, শান্ত মন্ডল ও আশরাফুল ইসলাম মানিককে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের তথ্য মতে, রাতেই আরেক ঘাতক মনির উদ্দিনকে গাজীপুরের মাওনা থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, করোনাকালে বেকার এবং অভিভাবকদের কাছে টাকা চেয়ে না পেয়ে শুধুমাত্র অর্থ সংগ্রহ করতে এই চারজন অটো ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে এই হত্যাকান্ড সংগঠিত করে। তবে তারা প্রফেশনাল খুনি নয়। অর্থ সংগ্রহ করতেই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিবির ওসি সফিকুল ইসলাম জানান, এই হত্যাকান্ডের মুল পরিকল্পনাকারী ছিল আশরাফুল ইসলাম মানিক। সে অন্যান্যদের সাথে নিয়ে অটো ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করে লোহার রড, কেচি ও চাকু নিয়ে ঐ দিন বটতলা বাজার থেকে রোগী বহনের নামে অটো চালককে ৩ শত টাকা ভাড়ায় নিয়ে যায়। দক্ষিণ জাহাঙ্গীরপুর এসে অটো চালককে ছুরিকাঘাত করে ঘাতকদের একজন অটো নিয়ে পালিয়ে যায়। চালকের সাথে দস্তাদস্তির শব্দে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে ঘাতকদের আটক করার চেষ্টা করে। ঘাতক মনির তার পরনের গেঞ্জি এবং শান্ত মন্ডল পায়ের জুতা ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। অপরদিকে অটো নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ঘাতক শাহ জালাল শিকদার তার সহযোগীদের মাধ্যমে মোবাইলে খবর পেয়ে আব্দুল্লাহপুরে অটো ফেলে এবং অটোর চাবি মাটিতে পুতে সে পালিয়ে পালিয়ে যায়। ওসি আরো জানান, তথ্য প্রযুক্তির পাশাপাশি গেঞ্জি ও জুতার সুত্র ধরে স্থানীয় সোর্সের সহায়তায় তদন্তকালে এই হত্যার রহস্য উদঘাটনে একটু সময় বেশি লেগেছে। তিনি আরো জানান, তদন্তকালে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র, ছিনতাইকৃত অটো এবং অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। ঘাতকদের মঙ্গলবার বিকালে আদালতে পাঠানো হলে তারা প্রত্যেকেই নিজেদের অপরাধ স্বিকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে বলে ডিবির ওসি জানান।