শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪ -|- ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০-বসন্তকাল -|- ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

মোনায়েম স্যার আমার স্মৃতিতে অম্লান-আনোয়ার হোসেন শাহীন

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : এপ্রিল, ২৫, ২০২০, ৭:১৫ অপরাহ্ণ
প্রথিতযশা লেখক,সাংবাদিক সকলের শ্রদ্ধাভাজন অধ্যাপক কাজী এম এ মোনায়েম স্যার আজ অামাদের মাঝে নেই। গত ২৪ এপ্রিল বেলা ১২টায় বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অবসান ঘটেছে। জীবনের স্বাভাবিক নিয়মে মৃত্যু তাঁকে নিয়ে গেছে অজানা দেশে। কিন্তু,এ জনপদের সাহিত্য সাংস্কৃতি ও সাংবাদিকতা অঙ্গনে পদচারনা তাঁকে অমর করে রাখবে। তিনি ছিলেন উত্তর ময়মনসিংহের সাংবাদিকতা জগতের উজ্জল নক্ষত্র।তিনি সত্তর দশকে ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৭৪ সনে ময়মনসিংহের বাংলার দর্পন, চট্টগ্রামের দৈনিক দেশ বাংলা,১৯৭৬ সনে খুলনার দৈনিক পূর্বাঞ্চল এবং ১৯৭৭ সনে ঢাকার দৈনিক দেশবাংলা, ১৯৮০ সনে ১ জুলাই থেকে দৈনিক সংবাদের নিজস্ব সংবাদদাতা ছিলেন।পরে সরকারী কলেজে চাকুরী নিয়োগের কারনে সাংবাদিকতা জীবনে ইতি টানেন।তিনি দৈনিক সংবাদের মফস্বল সংবাদদাতা ইউনিটের যুগ্ন সম্পাদক ছিলেন।১৯৭৭ সনে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের এডহক কমিটির সদস্য, গৌরীপুর প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি গৌরীপুর উপজেলা ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সুবর্ণ বাংলার উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন।বাংলাদেশ প্রেস ইনিস্টিটিউট এর সাংবাদিক অভিধান ২ খন্ডে৪৯ নং পৃষ্ঠায় তার জীবনী লিপিবদ্ধ রয়েছে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে তিনি ছিলেন আপোষহীন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে সময় ১৯৮৭ সনে এরশাদ সরকার বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার হন।সাংবাদিকতায় কাজী মোনায়েম ১৯৮৩ সালে গৌরীপুর উপজেলা পরিষদ কতৃক কৃতি সাংবাদিক পুরস্কার, ২০০৩ সালে ময়মনসিংহ জেলার শ্রেষ্ঠ বিএনসিসির শিক্ষক হিসাবে পুরস্কার লাভ,ও ২০১৪ সালে বীরাঙ্গনা সখিনা সিলভার এওয়ার্ড লাভ করেন।
ইতিহাস ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন গৌরীপুর। তিনি সাংবাদিকতা করতে যেয়ে বিলুপ্ত প্রায় স্থাপত্য কীর্তি নিদর্শন, ঘটনা প্রবাহ পত্রিকায় পাতায় তুলে ধরতেন।পরবর্তিতে অবসর জীবনে ‘গৌরীপুরের ইতিহাস ঐতিহ্য ও কিংবদন্তী ‘ নামে ২০১৫ সালে মুল্যবান গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার পূর্বে এই গ্রন্থের লেখাগুলো ‘ সুবর্ন বাংলা’ ধারাবাহিক ছাপা হয়েছে।স্যারের গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগে আমি উৎসাহিত হয়ে আমার সংগ্রহে ছবি লেখা দিয়ে সহযোগীতা করার চেষ্টা করেছি। স্যার এই গ্রন্থের ভূমিকায় উল্লেখ করেন- ‘ অনেক কষ্ট স্বীকার করে বিভিন্ন তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করে দিয়েছেন আমার স্নেহভাজন ছাত্র ও সাংবাদিক জনাব আনোয়ার হোসেন শাহীন’।তার সহযোগীতার জন্য ধন্যবাদ জানাই। পরবর্তিতে সাপ্তাহিক রাজগৌরীপুর প্রকাশ হলে তিনি নিয়মিত কলাম লিখতেন।১৯৭৮ সনে ১ আগস্ট শিক্ষাকতা পেশায় গৌরীপুর কলেজ বাংলা বিভাগের অধ্যাপনা শুরু করেন।পরে গুরুদয়াল,আনন্দ মোহন, মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর চাকুরী থেকে ২০১১ সালে ৮ জানুয়ারি অবসর জীবন শুরু করেন।পরে ময়মনসিংহ কমার্স কলেজ সর্বশেষে হাজী কাশেম আলী কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে কর্মরত ছিলেন।বিএনসিসি১৯৮৮ সনে পিইউও হিসাবে যোগদিয়ে লেফটেন্যান পদে পদন্নোতি লাভ করেন।
কাজী মোনায়েম শিক্ষকতা সাংবাদিকতার পাশাপাশি সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড করতে খুব পছন্দ করতেন। গৌরীপুর মকুল ফৌজ,সম্প্রতি উন্নয়ন ক্লাব,যুগান্তর স্বজন সমাবেশ, বন্ধুজন সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদে জড়িত ছিলেন।তিনি এত উদার ছিলেন বন্ধুজনের অনেক অনুষ্ঠান তার নিজ বাসায় করতে বলতেন এবং তা করেছি।২০১৩ সালে বন্ধুজনের উদ্যোগে শ্রদ্ধেয় স্যারের জীবন কর্মের উপর বিশিষ্ট লেখকদের লেখা নিয়ে কাজী মোনায়েম বিশেষ সংখ্যা ‘ অবয়ব’নামে ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়। ম্যাগাজিনটার সম্পাদনা করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। ২০১৬ সালে গৌরীপুর সরকারী কলেজে বন্ধুজন সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদের উদ্যোগে গৌরীপুরের ইতিহাস ঐতিহ্য ও কিংবদন্তী গ্রন্থের প্রকাশ করার জন্য স্যারকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে এসেছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশ প্রেস ইনিষ্টিটিউটের মহাপরিচালক বরেণ্য সাংবাদিক শাহ অালমগীর। স্যার সাংবাদিকতা বিষয়ে বলতেন, প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই ।সুবর্ণ বাংলায় কর্মরত অবস্থায় নিজে হ্যাননোট তৈরী করে সাংবাদিক প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতেন। সংবাদে কাজ করার সময় সাংবাদিকদের সাথে যোগযোগ রাখতেন। তেমনি বরেণ্য,চারন সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন তাঁকে পত্র লিখতেন।
সদা হাস্যময় সারল্যভরা প্রিয় স্যার চলে গেছেন পরপারে। তার সাথে আমারসহ অনেকেরই হাজারো স্মৃতি রয়েছে।তার অগনিত ছাত্র,অগনিত গুণগ্রাহী,স্বজন স্মৃতি বহন করবে, স্মরণ করবে,স্মৃতিতে অম্লান থাকবে। শুধু মনে কষ্ট রয়ে গেল ধেয়ে আসা করোনা নামক দানবের কারনে বিচ্ছিন্ন বৈরী পরিবেশে জানাযা অংশ নিতে পারিনি। নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই প্রশাসনের নির্দেশে জানাযা দয়া হয়। পরে নিজ গ্রাম বোকাইনগর কাজী বাড়ীতে পারিবারিক কবরস্থানে চির শায়িত করা হয়। আর এখানেই সারা জনমের জন্য স্যার ঘুমিয়ে থাকবেন। আগর বাতির ঘ্রাণ ছড়ানো, সাদা কাপড়ে পোষাকে ,বাঁশঘেরা এই স্থায়ী নিবাসে। অাল্লাহ যেন,এই মাটির ঘরকে বেহেস্তের ঘর বানিয়ে দেন।