আজ বুধবার ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:
||
  • প্রকাশিত সময় : জুন, ৫, ২০২০, ১:৪৫ অপরাহ্ণ




মৃত্যুঝুকিতেও জাগ্রত চেতনা : পলাশ মাজহার

পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশে একজন নিরস্র কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার পর এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার
হাটু দিয়ে তার গলা চেপে ধরে নৃশংসভাবে হত্যা করে।৪৬ বৎসর বয়সী জর্জ ফ্লয়েড প্রাণ হারাণ যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে। আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে ৩ গুণ বেশী কৃষ্ণাঙ্গ মারা যায় এমন তথ্য প্রকাশ পায় এ ঘটনার পর থেকে।গড়ে উঠেছে Black Lives Matter. এই মুহুর্তে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণে আমেরিকা রীতিমত দিশেহারা। কিন্তু দিশা হরায়নি সেদেশের সাধারন মানুষের মানবিক মূল্যবোধ। প্রতিবাদে মুখরিত আমেরিকার বেশিরভাগ  রাজপথ। গনতান্ত্রিক চেতনার এমন দীপ্ত বহিপ্রকাশ যুগে যুগেই আমাদের ইতিহাসকে গৌরবান্বিত করে। আত্বগ্লানিকে মুছে দিয়ে সমুন্নত রাখে মানুষেরর আত্বমর্যাদাকে।
যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় বর্ণবাদী হত্যা-জুলুম- নির্যাতন – বৈষম্য -অবিচার নিত্যকার ঘটনায় পরিনত হয়েছে।আজকের আমেরিকার যে অার্থসামাজিক ব্যবস্থা তার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার Aperthied ব্যবস্থারর কোন পার্থক্য নেই।আমেরিকার সমাজব্যবস্থার পরতে পরতে সাদা- কালো বৈষম্য যা তাদের বিচার ব্যবস্থাতেও পরিলক্ষিত হয়।আমেরিকার কারাগার গুলোতে মোট বন্দির ৪০ শতাংশ হলো সে দেশের কালো মানুষ। একজন অপরাধী সাদা- কালো- বাদামী যে রঙেরই হোক না কেন তার সাজাতে কখনো বৈষম্য হতে পারে না।অথচ যুক্তরাষ্ট্রে কালোদের অপরাধকে যতটা বড় করে দেখানো হয় বিপরীতে একই অপরাধে অপরাধী সাদাদের ক্ষেত্রে এটিকে অপরাধ হিসেবে -ই গণ্য করা হয় না। প্রশ্ন হলো কেন কালো মানুষের প্রতি এমন বৈষম্য? অথচ সাদা- কালো মানুষ বাদ দিলে পৃথিবীতে বাদামী  মানুষের অস্তিত্ব ও রয়েছে।শুধুমাত্র গায়ের রঙের উপর ভিত্তি করে যে রাস্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা এবং দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠেছে এটাকেই আমরা বর্ণবাদ বুঝি। ইউরোপীয়রা এই মতাদর্শে বিশ্বাস করে যে- তারা  জন্মগত ভাবেই স্রেষ্ঠ।ফলে কৃষ্ণাঙ্গ মানবতা আজ ভুলন্ঠিত। এই মানসিকতা ভান্ত,মিথ্যা,কদর্যপূর্ন,অযৌক্তিক এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। আসুন এই মানসিকতাকে পরিহার ও ঘৃনা করি।
                        এবার এই বর্ণবাদ এর প্রভাব আমাদের দেশে কিভাবে বিস্তার ঘটছে তা একটু খোলাসা করা যাক। বৃটিশরা এই উপমহাদেশ শাসন করেছে প্রায় দু’ শ বছর। তাদের আচার -আচরন, শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছে – সাদা সু্ন্দর, কালো অসুন্দর। তাইতো রাস্ট্রীয় টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনে কালো মেয়েটিকে রং ফর্সাকারী ক্রীম ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়। বুঝানো হয়- কালো মেয়েটির হাজার গুণ থাকলেও সে অসুন্দর। ফর্সা না হলে সে জাতে উঠতে পারবে না।শুধু তাই নয় আজকাল ছেলেদেরও রঙ ফর্সাকারী ক্রীম ব্যবহার করার  পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তাইতো কালো রঙের মেধাবী শিক্ষার্থীকেও দোকানে রঙ ফর্সাকারী ক্রীমের জন্য দৌড়াতে হচ্ছে। এ যেন বর্ণবাদের এক আধুনিক সংস্করণ। বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় রঙ কালো বলে চাকুরী অথবা বিয়ে হচ্ছে না।
এমন সামাজিক আচার ও শ্রেণিবৈষম্যের  অবসান হোক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ডাকে ও তার নেতৃত্বে এদেশ স্বাধীন হয়েছিলো চারটি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে। সমাজতন্ত্র – গনতন্ত্র – ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতিয়াতাবাদ এই চার মূলনীতি অক্ষুণ্ণ রাখতে হলে আমাদের এরকম হীন মানসিকতা পরিহার করতে হবে।
আমাদের দেহ একই উপাদানে গঠিত।খাদ্য খেয়েই আমরা জীবন ধারন করি। অথচ এখনো তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের মুখে তাদের গোষ্ঠী, উচু-নীচু ও বংশ গৌরবের কথা শুনা য়ায়। দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল কংগ্রেসের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন মেন্ডেলা আমৃত্যু বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গিয়েছেন। তাকে কারাগারে অধিকাংশ
সময় বর্ণবাদ ইস্যুতে বন্দী থাকতে হয়েছিলো। যদিও ১৯৯৪ সালে বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলো কিন্তু শেতাঙ্গদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেনি।আজ ও করোনাভাইরাসের মত এই বর্ণবাদ প্রথা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে নানান ঢঙে,নানান রুপে। আমরা এর চির অবসান চাই। বিশ্বের সকল অমানুষ সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠুক। তাহলে আমরা সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে পারবো—-
জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে
সে জাতির নাম মানুষ জাতি।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০