শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪ -|- ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০-বসন্তকাল -|- ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

মানব সমাজকে আত্মিক শক্তি জোগায় ধর্ম

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : মে, ১৫, ২০২০, ৫:২৮ অপরাহ্ণ

মঈন চিশতী

করোনা ভয়ে বায়তুল্লাহসহ মসজিদ মন্দির গির্জা প্যাগোডা দরগাহ খানকাহ গুরুদুয়ারা, অর্থাৎ সব ধরনের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে নিজেকে আইসোলেটেড রেখেছি আমরা। শারীরিক নিরাপত্তার জন্য এভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা জরুরি হলেও আমরা যে দিন দিন মানসিকভাবে নির্জীব হয়ে পড়ছি তা কি ভেবে দেখিছি? মন্দির মসজিদসহ দেবালয়গুলো মানুষের নৈতিক ও আ ত্মিক শক্তি বাড়ানোর উৎস। সেখানে পূজা-ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে মানুষের মনোবল বাড়ে। মানসিক শক্তিই একটি জাতি বা জনগোষ্ঠীকে জাগিয়ে তুলতে পারে। যা অন্য কোনো শক্তি পারে না। বদরের যুদ্ধের কথা ভাবুন। সংখ্যায় একতৃতীয়াংশ এবং অস্ত্রবলে কম হয়েও একটি সুসজ্জিত চৌকস যুদ্ধবাজ কোরাইশ বাহিনীকে পরাজয়ের পেছনে এ নৈতিক বলটিই কাজ করেছিল। ফলে নেমে এসেছিল খোদাই মদদ। আল্লাহ বলেন, ‘ওয়ালাক্বাদ নাসারাকুমুল্লাহু বিবাদরিন ওয়া আনতুম আজিল্লাহ। অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের বদরে সাহায্য করেছেন অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল।’ অথবা ভাবুন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা! একটি চৌকস আধুনিক সমরাস্ত্র বিদ্যায় পারদর্শী বাহিনীর মনোবল ভেঙে দিয়েছিল লুঙ্গি কাছামারা মুক্তিবাহিনীরা। ফলে মাত্র নয় মাসের যুদ্ধেই আমরা গৌরবোজ্জ্বল বিজয় অর্জন করেছি।

পশ্চিমা সভ্যতা ধর্ম তথা ঐশী শক্তিকে পেছনে রেখে বিজ্ঞানের ওপর ভরসা করে এগোতে চেয়েছে। আজ ছোট্ট একটি ভাইরাস তাদের সব আয়োজন স্তব্ধ করে দিয়েছে। তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানে ওপরে উঠলেও ধর্মীয় রীতিনীতিকে আইসোলেটেড রাখার কারণে নীতিনৈতিকতায় দারুণভাবে পিছিয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে তাদের সামাজিক ও পারিবারিক দুর্গ। তারা হয়ে গেছে চরম স্বার্থপর। ফলে সামান্য ভাইরাসের ভয়ে একে অন্য থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মূলত ভেতর জগতে শক্তিশালী না হওয়ার কারণেই আজ তারা এত দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু মুসলমানরা মানসিকভাবে শক্তিশালী জাতি। তাই এমন দুর্যোগময় সময়েও আমরা পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধনকে গুরুত্ব দিয়ে আসছি। আপনজনদের ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছি না। করোনায় মৃত ব্যক্তিকে আগুনে জ্বালিয়ে দিই না। বরং তাদের জানাজা এবং দাফনের সুন্দর ব্যবস্থা করি।

পশ্চিমারা দেখেছে, ১৯৭৯ সালে খোমেনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানকে নানাভাবে একঘরে করার পরও তারা এখনও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আফগানিস্তান ইরাককে তছনছ করে দেয়ার পরও তাদের নাগরিকদের মনোবল এখনও চাঙ্গা আছে। এটা কীভাবে সম্ভব? মুসলমানদের জামাতবদ্ধ সামাজিক জীবনের কারণেই এভাবে ভেঙে চুরমার হওয়ার পরও সাহস নিয়ে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে তারা।

মানুষের ভেঙে যাওয়া মনকে মেরামত করে শক্ত করে দেন পীর-ফকির, ধর্মবিদরা। যখনই কোথাও মানুষ ভেঙে পড়েছে, হতাশ হয়েছে, সেখানেই ধর্মের বাণী নিয়ে সাধু-সন্ন্যাসী, পীর-দরবেশরা এগিয়ে এসেছেন। যে কারণে ধর্মীয়ভাবে এগিয়ে থাকা দেশগুলোর মানুষ শত সমস্যায় জর্জরিত হওয়ার পরও তারা দমে যায়নি। অথবা বলা যায়, তাদের দমে যেতে দেয়া হয়নি। ফলে পাশ্চাত্যের বাহাদুররা ধর্মহীন পৃথিবীর যে অলীক স্বপ্ন দেখছে তা সফল হচ্ছে না। আদৌ সফল হওয়ার কোনো দূরতম সম্ভাবনাও নেই।

এ মুহূর্তে আমাদের করণীয় হল, কোরআন নাজিলের এ মাসে প্রতিটি মুসলমানকে কোরআনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা। আল্লাহ বলেন, ওয়া নুনাজ্জিলু মিনাল কোরআনি মা হুয়া শিফাউ ওয়া রাহমাতুল্লিল মুমিনীন। অর্থাৎ কোরআনে মানুষের জন্য শেফা নাজিল করা হয়েছে। আর মুমিনদের জন্য এটাকে রহমত আমি বানিয়ে দিয়েছি।’ তাই আসুন! কোরআন নাজিলের মাসে আমরা কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর গড়ি। আমাদের আ ত্মিক শক্তি বাড়িয়ে নিই। ভেতর জগতে কোনো মানুষ যখন শক্তিশালী হয়ে ওঠে, বাইরের ভাইরাস তখন তাকে কাবু করতে পারে না। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে দ্বীনের সহি বুঝ দান করুন।

লেখক : প্রাবন্ধিক

: mueenchishty@gmail.com