আজ মঙ্গলবার ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:
||
  • প্রকাশিত সময় : জুলাই, ১৭, ২০২০, ৮:৪১ অপরাহ্ণ




মহিউদ্দিন রানার গল্প

           “অপলক দেখা হলোনা

আমি জানিনা, আমাদের পরিচয়ের স্মৃতিটা ওর মনে আছে কিনা! ওর সাথে আমার প্রথম কথা হয় ফেসবুকে। কোনো এক ঘটনার প্রেক্ষিতে ওর সাথে আমার কথা বলা শুরু হয়। কথা বলার মধ্য দিয়ে আমাদের দুজনের খুব ভালো একটা বন্ধুত্বও হয়ে যায়। তখনও আমরা দুজন কেউ কাউকে দেখিনি। তার কিছুদিন পর, ওর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল, কলেজ ক্যাম্পাসে বৈশাখী মেলায়।
যাকে দেখার জন্যে আমার ব্যাকুল হৃদয়, উতলা হয়ে উঠছিল! যাকে না দেখেও তাঁর কথার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। সেই অপর প্রান্তের প্রেয়সীটি আজ আমার সামনে। সবকিছুই যেনো স্বপ্ন মনে হয়েছিল । ওকে প্রথম দেখার পর,কালবৈশাখীর ঝাঁপটা আমার হৃদপিন্ডে কাঁপুনি তুলে দিয়েছিল। মনে হয়েছিল কত জনম জনমের চেনা সেই প্রিয় মুখ। যাকে দেখার দীর্ঘসময় প্রতিক্ষায় ছিলাম আমি। কিছুক্ষণের জন্যে আমার আমিকে হারিয়ে ফেলি ওর মাঝে।
প্রথম দেখাতেই দুজনার দুজনকে ভালো লেগে যায়। তারপর শুরু হয় আমাদের প্রেমের কাহিনী।
দিনের শুরুটা হতো আমাদের দুজনের ভালোলাগা, আর ভালোবাসা দিয়ে। রোজ প্রভাতে শিউলি কুড়িয়ে,মালা গেঁথে পড়াতাম ওর গলায়। প্রায় সময়েই পড়ন্ত বিকেলটা উপভোগ করতে, ওকে নিয়ে ছুটে যেতাম প্রকৃতির সান্নিধ্যে । বিশাল সুনীল আকাশের নিচে বসে দুজন নদ-নদীর স্বচ্ছজলে সূর্য ডোবা দেখতাম।
চারদিকে ভেসে আসতো প্রকৃতির হিমেল হাওয়া, আর পাখিদের কলকাকলি। ঘাসফড়িঙের বিচরণ ছিলো অসম্ভব মনোমুগ্ধকর।
ভালোবাসায় ভরে উঠেছিল আমাদের দুজনের জীবন।

কিন্তু এতো সুখ বোধহয় কপালে সইবার ছিলোনা। আমাদের সম্পর্কের ২ বছর পর, ও কেনো জানিনা আমার থেকে দূরে সরে যায়। হয়তো আমি ওর যোগ্য ছিলাম না, না হয় অনেক বড় কোনো ভুল ছিলো আমার! যার কারণে সে এমনটি করতে বাধ্য হয়েছে।
আমি আজোব্ধি হাজার চেষ্টা করেও জানতে পারিনি। আমার অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ভুলের কারণটি। যার জন্যে সে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল।
এখন আমার রাত্রিগুলো কাটে, রাতজাগা পাখির মতো, নিদ্রাহীন জেগে । সময় যযত পাড় হচ্ছে, ওর বিরহে হিয়ার মাঝে গড়ে উঠছে আকাশছোঁয়া কষ্টের পাহাড় ।

কিছুদিন পর, হঠাৎ ওর এক বান্ধবী বাসায় এসে হাজির । হাতে একটি বিয়ের কার্ড। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো ওর নিজের বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছে। কিন্তু না, কার্ডটি হাতে নিয়ে দেখতে পেলাম, অনেক বড় করে কার্ডের উপর লেখা, ” মুনীরার বিয়ে” তখন আর বুঝতে বাকি রইল না কার বিয়ে! ও হ্যাঁ, কার্ডের সাথে একটি চিঠিও ছিল । চিঠিতে লেখা ছিল ” ক্ষমা করো আমায়। আমি তোমাকে ইচ্ছে করে ঠকাতে চাইনি। পরিস্থিতি বাধ্য করেছিল তোমাকে দূরে সরিয়ে দিতে। আমি আর কিছুদিন পর সারাজীবনের জন্যে অন্যকারোর হয়ে যাব। তোমাকে নিয়ে যেই বুকভরা স্বপ্ন ছিল, তার পরিসমাপ্তি ঘটবে কিছুদিন পর।কখনও ভাবিনি আমি অন্যকারোর ঘরের ঘরনি হব। তবুও সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাটাকেই মেনে নিয়েছি। ২৬ তারিখ আমার গায়ে হলুদ।আর ২৭ তারিখ বিয়ে। আমি চাই আমার হলুদ সন্ধ্যায়, আমার গায়ে প্রথম হলুদটি তুমি মাখিয়ে দিবে। কি দিবেনা? প্রমিস করছি তোমাকে দেখে একটুও কাঁদবোনা। তুমি আসবে তো??প্লিজ জান তুমি আমার শেষ অনুরোধটি রাখো। এসো প্লিজ। আমি তোমার আসার অপেক্ষায় পথচেয়ে থাকবো। ইতি তোমার স্বপ্নময়ী। ”

খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, ওর চিঠিটা পড়ে। আকাশের বারিধারা ঝড়ছিল যুগল নয়নে। অগ্নিদাবানল-বিষাদের সীমাহীন যন্ত্রণায়, বুকটা ফেঁটে যাচ্ছিল আমার । প্রিয়জনকে হারানোর যন্ত্রণাটি কেবল সেই বুঝে, যার হারায়!
২৬ ফেব্রুয়ারি ওর গায়ে হলুদের দিন, আমার আব্বা স্টোক করে। আব্বাকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাই। এমন পরিস্থিতিতে ভুলেই যাই, ওর গায়ে হলুদের কথা। আমি যেতে দেরি করছে দেখে ও বার বার কল দিচ্ছিল। কিন্তু আমার মোবাইলে চার্জ না থাকায় ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালের নার্সের কাছ থেকে ফোনের চার্জার নিয়ে ফোনটি কোনোমতে অন করি, অন করার
কিছুক্ষণ পরেই ওর কল আসলো। ঠিক তখনই মনে হলো হলো ওর গায়ে হলুদের কথা। তারপর ওকে বিষয়টা বুঝিয়ে বললাম। আর এটাও বলে দিলাম, কাল তোমার বিয়েতে অবশ্যই আসবো। তোমাকে বধুর সাঁজে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে।
অামার কাছে ওর শেষ ইচ্ছে ছিল,সে অন্যকারোর হওয়ার আগে একটি বারের জন্য হলেও আমি যেন তার সামনে যাই। অপলক দেখবে বলে।

কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, ” অপলক দেখা হলোনা।”
যেদিন ওর হলুদ সন্ধ্যা ছিল, সেদিন রাতেই আব্বা মারা যায়।
পরেরদিন ওর বিয়ে। ও যখন বধুর সাঁজে সেঁজেছিল? তখন আব্বাকে কাফনের কাপড় পড়াচ্ছিল। ও যখন কবুল বলে বিয়ে করছিল, আমার কাঁদে তখন আব্বার লাশ!

একদিকে নিজের প্রিয় মানুষের বিয়ে!! অপরদিকে আব্বার মৃত্যু!! এই কষ্ট সইবার মতো ধৈর্য্য আমার ছিলোনা।
একই দিনে আমার জীবন থেকে সবকিছুই হারিয়ে যায়।
ওর বিয়ে হয়েছে ৫ বছর হলো। শুনেছি ওদের একটা মেয়েই হয়েছে। আর মেয়েটির নাম রেখেছে নাকি “মেহেরীন বিনতে সজীব ” এই নামটি আমাদের দুজনের পছন্দের একটি নাম। যেখানে এই নামটি আমাদের মেয়ে হলে, ওর নাম রাখবো বলে দুজনে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম।
কিন্তু সেটি কেবল আজ দুঃস্বপ্ন। শুনেছি সংসার নামের সুখকুটিরে স্বামী সন্তান নিয়ে অনেক ভালো আছে সে । ও চলে যাওয়ার পর, এখন আমার প্রতিটা মুহূর্ত কাটে ওর মহাশূণ্যতায়। দুঃখের অথৈ সাগরে ভাসছি-ডুবছি । তবুও ওর প্রতি আমার কোনো আক্ষেপ নেই। আমার শত কষ্ট হলেও আমি ওর জন্যে, প্রাণ ভরে দোয়া করি আমার ও যেনো অনেক বেশি সুখে থাকে।

লেখকঃ মহিউদ্দিন রানা

দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন

ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধি




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০