আজ শুক্রবার ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

||
  • প্রকাশিত সময় : ডিসেম্বর, ২৫, ২০২০, ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ




ভারতবর্ষে ঐশী প্রেমের সুবাস ছড়িয়েছেন খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী

বাহাদুর ডেস্ক :

খাজা কুতবুদ্দীন বখতিয়ার কাকীর আসল নাম বখতিয়ার। কুতুবুদ্দীন তার উপাধি। তিনি হোসাইনী সাইয়্যিদ ছিলেন। তার বংশ পরম্পরা ইমাম জাফর সাদিক হয়ে হোসাইন ইবন আলী (রা.) পর্যন্ত পৌঁছে।

তার পিতার নাম ছিল সাইয়্যিদ কামালুদ্দীন আহমদ।  মাওরাউন্নাহারের আনজুদহন বা আজুদহনের শহরতলী ওশ বা আউশ নামক স্থানে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

এজন্য তাকে ওশী বা আউশী বলা হয়। তাকে কাকী কেন বলা হয় তা নিয়ে অনেক অসমর্থিত বর্ণনা পাওয়া যায়। (মাওলানা নূরুর রহমান,তায্কেরাতুল আওলিয়া, খণ্ড-৪,পৃষ্ঠা-২০৬)

খাজা বখতিয়ার কাকীর মাত্র দেড় বছর বয়সে তার পিতা মৃত্যুবরণ করেন। ৫ বছর বয়সে তার মাতা শায়খ আবু হাফস ওশীর কাছে ভর্তি করেন।

কোরআনুল কারীম হিফয করার পর অল্প বয়সেই তিনি ইলমের বিভিন্ন শাখায় পারদর্শিতা অর্জন করেন। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশ করেন।

ফকিহ আবুল লায়ছ সমরকান্দীর মসজিদে তিনি খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর হাতে বায়াত হোন এবং ৪টি তুর্কি টুপি প্রাপ্ত হোন।

অন্য বর্ণনা মতে তিনি ইসফাহানে গিয়ে তার মুরিদ হোন। তখন তার বয়স মাত্র ১৭ বছর।

আওয়ারিফুল মাআরিফ গ্রন্থের লেখক শায়খ শিহাবুদ্দীন আবু হাফস সোহরাওয়ার্দী, শায়খ দাউদ কিরমানী বর্তমান ছিলেন।

অতঃপর ২০ বছর পর্যন্ত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর সান্নিধ্যে থেকে আধ্যাত্মিক দীক্ষা লাভ করেন এবং তার সঙ্গে বায়তুল্লাহ ও দূর-দূরান্ত সফর করেন। (ইসলামী বিশ্বকোষ, খণ্ড-৮,পৃষ্ঠা-৩১৫)

তারাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের পূর্বে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী আজমীর আগমন করলে খাজা বখতিয়ার কাকী মুর্শিদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে ভারতবর্ষে আগমন করেন।  তখন চিশতী তাকে দিল্লিতে ইসলাম প্রচারের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। (ইসলামী বিশ্বকোষ, খণ্ড-৮,পৃষ্ঠা-৩১৬)

শায়খ বখতিয়ার কাকী মুর্শিদের আদেশে দিল্লিতে দাওয়াত,তাবলিগ ও তাযকিয়ার কাজ করতে থাকেন। তিনি মালিক ইযযুদ্দীনের মসজিদের কাছে ফকির দরবেশী জীবনযাপন শুরু করেন।

শাহী দরবারের সঙ্গে কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা পছন্দ করতেন না। তৎকালীন সুলতান শাসমুদ্দীন আলতামাশ তাকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করেন কিন্ত তিনি তার হাদিয়া-তোহফা, জায়গির, ভূ-সম্পত্তি গ্রহণ করা হতে বিরত থাকেন।

অবশেষে তার দরবারে শহরবাসীদের আনাগোনা এমনভাবে বেড়ে চলে যে, সে যুগের শায়খুল ইসলাম নাজমুদ্দীন সুগরার (যিনি উসমান হারুনীর খলিফা ও খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর বন্ধু ছিলেন) মনেও তার প্রতি ঈর্ষা সৃষ্টি হয়।
শায়খ মঈনুদ্দীন চিশতী দিল্লি আগমন করলে শায়খ নাজমুদ্দীন সুগরা বখতিয়ার কাকী সম্পর্কে তার কাছে অভিযোগ করেন।

এতে খাজা চিশতী স্বীয় মুরিদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বাবা বখতিয়ার!  অতি তাড়াতাড়ি তুমি এতো প্রসিদ্ধি লাভ করেছ যে,আল্লাহ বান্দাদের মনে তোমার প্রতি ঈর্ষা সৃষ্ট হয়েছে। তুমি এ জায়গা ছাড় এবং আজমীর চলে আসো। তুমি যেখানেই অবস্থান করবে তোমার খেদমতের জন্য আমি সব সময় প্রস্তুত আছি।

উত্তরে শায়খ বখতিয়ার বলেন, মাখদুম তো দূরের কথা,আমি শায়খের খেদমত করার যোগ্যতা রাখি না; বসা তো অসম্ভব ও অকল্পনীয়।  (সিয়ারুল আউলিয়া,পৃ-৫৪)

অবশেষে মুর্শিদের নির্দেশে শায়খ বখতিয়ার কাকী আজমীরের দিকে রওয়ানা হোন। এ সংবাদ দিল্লিতে পৌঁছতেই শহরে হাঙ্গামা শুরু হয়ে যায়।

শহরবাসী এবং স্বয়ং সুলতান আলতামাশ শহরের বাহিরে এসে তার অনুগামী হোন। যেখানেই খাজা কুতুবুদ্দীনের কদম মুবারক পড়ছিল সেখানের ধূলি লোকেরা তাবারুক মনে করে উঠিয়ে নিচ্ছিল আর অস্থির ও হতবিহ্বল হয়ে কান্না করছিল।(সিয়ারুল আউলিয়া-৫৫)

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী মুরিদের অস্বাভাবিক আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা উপলব্ধি করতে পারলেন। আর এই জনপ্রিয়তা স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত, নিজস্ব অর্জনের কোনো বিষয় নয়।

তিনি আপন মুরিদকে নির্দেশ দিলেন, বাবা বখতিয়ার! তুমি দিল্লিতেই থাক। তোমার প্রস্থানের সংবাদে আল্লাহর এতগুলো বান্দা ব্যথাতুর হয়েছে। যাও, এ শহরকে আমি তোমার আশ্রয়ে রেখে গেলাম। (আবুল হাসান আলী নদভী, তারীখে দাওয়াত ওয়া আজিমাত,খণ্ড-৪, পৃ-৩৭)

খাজা কুতবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী তার মুর্শিদ ও শায়খ খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর মৃত্যুর পর ৪-৫ বছর বেঁচে ছিলেন। কিন্তু তার বদৌলতে ভারতবর্ষে চিশতিয়া সিলসিলার শুধু ভিত্তিই প্রতিষ্ঠিত হয়নি বরং যে সুমহান উচ্চ লক্ষ্য নিয়ে খাজা মঈনুদ্দীন ভারতবর্ষকে নিজের অবস্থানস্থল ও কর্মক্ষেত্ররূপে মনোনীত করেছিলেন তা অত্যন্ত সুষ্ঠুতার সাথে সার্থকতা লাভ করে। (আবু সাঈদ মু. উমর আলী অনূদিত,সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস,খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪০)

মাত্র ৫০ বছর বয়সে এই মহান সাধক ভারতবর্ষে ঐশী প্রেমের হাটের আয়োজন করে ৬৩৩ হিজরিতে দিল্লিতে ইন্তেকাল করেন।

সুলতান শামসুদ্দীন আলতামাশ তার জানাজায় ইমামতি করেন। তার খলিফার সংখ্যা ৯ অথবা ১০ জনের মতো ছিল।

লেখক: শিক্ষক,গবেষক

টি.কে ওয়েভ-ইন




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০