শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪ -|- ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০-বসন্তকাল -|- ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

বিএনপির পাশে নেই জামায়াত

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : জানুয়ারি, ২১, ২০২০, ২:২৩ অপরাহ্ণ

বাহাদুর ডেস্ক :

সিটি ভোট নিয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে জামায়াত উপস্থিত হয়নি। পরে আরো একটি মিটিং ডাকা হলেও সেখানেও জামায়াত যায়নি। বৈঠকে না যাওয়া জামায়াত নেতারা নির্বাচনী মাঠেও সক্রিয় নেই। স্থানীয় পর্যায়ের নেতারাও গুরুত্ব দিচ্ছেন না সিটি ভোটকে। তবে শেষ সময়ে ভোট দেওয়ার পরিবেশ থাকলে অনেকেই বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। বিএনপির পাশে জামায়াত কেন নেই এই বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কোনো সঠিক বক্তব্য পাওয়া যায় না।

তবে বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত কর্নেল অলির জাতীয় মুক্তির মঞ্চের ব্যানারে সক্রিয় হওয়ায় বিএনপিও অনেকটা বিরক্ত জামায়াতের ওপর। অলির মুক্তির মঞ্চ মূলত জামায়াতকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠার চেষ্টায় ছিল। কিন্তু বিএনপির পিছুটানের ফলে সেই মঞ্চ আলোর মুখ তো দেখেইনি, উল্টো ক্ষতির মুখে পড়েছে অলির এলডিপি। যেটি বর্তমান দুইভাগে বিভক্ত। সেই মঞ্চ চেষ্টার পরই মূলত জামায়াত ও বিএনপির সম্পর্ক তলানিতে আছে। তাছাড়া সিটি নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে জামায়াতের প্রার্থী নিয়ে গত উপনির্বাচনে বেশ তোড়জোড় থাকলেও এবার চুপই থেকেছে দলটি। এ ক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বর্তমান ব্যবস্থায় জামায়াত আর কোনো নির্বাচনে যেতে রাজি নয়। জোটের কোনো দল যদি অংশ নেয় তাতে সঙ্গ দেবে না জামায়াত। এ রকম একটি অবস্থানের কারণেও জামায়াত মাঠে সক্রিয় নয়। এর বাইরে বিএনপিকে আপাতত এড়িয়ে চলার নীতি নিয়েই এগোচ্ছে দলটি।

জামায়াতের দলগত অবস্থানের মতোই ভাবছে বিএনপিও। তারাও চায় আপাতত জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হাতে নেবে না বিএনপি। ভাবনা হচ্ছে, দূরে আছে দূরেই থাকুক। তবে বিএনপি নেতারা মনে করছেন, দলটি নির্বাচন থেকে দূরে থাকলেও ভোটের মাঠে তাদের রায় বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষেই যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একদাশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে এখনো অটল আছে জামায়াতে ইসলামী। অপরদিকে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাওয়ায় জামায়াত-বিএনপির ওপরে নাখোশ হলেও প্রকাশ্যে তা বলতে রাজি নয়। কৌশলগত বক্তব্য দিয়ে তারা এ ব্যাপারটিকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে।

সিটি নির্বাচন নিয়ে ২০ দলীয় জোটের হওয়া বৈঠকে জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। সার্বিক প্রেক্ষাপটে ২০ দলের বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ২০ দল অটুট আছে। শিগগিরই জোর কদমে সিটি নির্বাচনের মাঠে তাদের দেখা যাবে।

বিএনপির সংসদে যোগ দেওয়া ও বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ২০১৮’র ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে আমরা যে দৃশ্য দেখলাম, তারপর ২০ দলীয় জোট সে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। আমরা বললাম যে, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাব না। আমরা সবাই মিডিয়াতেও বলেছিলাম, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আমরা আর কোনো নির্বাচনে যাব না। এটা বিএনপিও বলেছিল, আমরাও বলেছিলাম। আমাদের দলের কেন্দ্রীয় যে পরিষদ আছে সেখানে বারবার বসে আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, যে রকম অবস্থায় আমরা ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, বাংলাদেশ সেই অবস্থানেই আছে। তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। নির্বাচন কমিশন, সরকারের দলীয়করণ, আগের দিন ভোট বাক্স ভর্তি করা, ভোটারদের ভোট দিতে যেতে না দেওয়া, এজেন্ট বের করে দেওয়া, রাতেই ভোট হয়ে যাওয়া, সব পরিস্থিতি আগের মতোই বহাল। ফলে আমাদের নির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্ত হলো, যেহেতু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি, আমাদের সিদ্ধান্তেরও কোনো পরিবর্তন হবে না।

বিএনপির ব্যাপারে জামায়াতের মনোভাব জানতে চাইলে এ নেতা বলেন, বিএনপির বক্তব্য বিএনপি দেবে। আমাদের বক্তব্য আমি দিলাম। কেউ কোনো কথা বলে যদি সেটা রক্ষা করতে না পারে সে দায়িত্ব তাদের।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে কোনো কর্মকান্ডে যোগ দেবে কিনা জানতে চাইলে গোলাম পরওয়ার বলেন, আমি আমার জবাব দিয়ে দিয়েছি। আর কোনো নতুন ভাষা আমার কাছে নেই। দেশের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে আমাদের সিদ্ধান্তেরও কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটাই আমাদের জবাব।

তারপরও সাধারণ মানুষের কাছে জামায়াত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবে কিনা জানতে চাইলে নেতা বলেন, আমি যে বক্তব্য দিয়েছি সেটা লিখলেই জনগণ বুঝে নেবে। এর চেয়ে ক্লিয়ার করার দরকার নেই। জনগণ খুব ভালো বুঝে।

এদিকে জামায়াতের এই বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কারো কথা হয়নি। আর জামায়াত আমাদের সঙ্গে ভোটের মাঠে নামবে কিনা তাও জানি না। তবে প্রার্থীরা তো সবার কাছেই ভোট চাইতে পারেন।

বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে ২০ দলীয় জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনের বিষয়ে প্রার্থী মনোনয়নের সময় একদিন জোটের বৈঠক ডেকে সবাইকে জানানো হয়েছে। তখন জোটের সবাই বিএনপির প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছে। ওই বৈঠকে জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল না। তারা বিএনপির প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছে কিনা তাও জানি না।

টি.কে ওয়েভ-ইন