আজ মঙ্গলবার ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:
গৌরীপুর বিশ্ব বই দিবস পালিত কোতোয়ালির ওসি তদন্ত আনোয়ার রেঞ্জে শ্রেষ্ট পুলিশ পরিদর্শক কাতারের সঙ্গে ৫ চুক্তি ও ৫ সমঝোতা স্মারক সই গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শরাফ উদ্দিন খান পাঠান আর নেই গৌরীপুরে কন্দাল ফসল চাষ বিষয়ক কৃষক প্রশিক্ষণ গৌরীপুরে ইউপি মেম্বারেই বন্ধ করে দিলো দু’টি পরিবারের চলাচল রাস্তা! ভালুকা মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ জেলায় শ্রেস্ট ওসি হিসেবে পুরস্কৃত স্বপদে ফিরলেন গৌরীপুরের সাময়িক বরখাস্তকৃত ইউপি চেয়ারম্যান রুবেল! গৌরীপুরে অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধের দাবিতে ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ কোতোয়ালির পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত আনোয়ার জেলায় শ্রেষ্ট পুলিশ পরিদর্শক
||
  • প্রকাশিত সময় : নভেম্বর, ২, ২০২০, ৭:১৯ অপরাহ্ণ




বাংলাদেশে পৌরসভার কাছে নাগরিক প্রত্যাশা ও বাস্তবতাঃ মোঃ আল ইমরান মুক্তা

পৌরসভা স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাসিত সরকারের অন্যতম একটি শাখা। এটি একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৫৯ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিটি পৌরসভা একটি প্রশাসনিক একাংশ বা ইউনিট হিসাবে গণ্য হইবে। এদেশে ৩২৯টি পৌরসভা বিদ্যমান। পৌরসভা আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হবার পূর্বে ৯০দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে হয়। আইনি বাধ্যবাধকতায় যথা সময়ে পৌরসভা নির্বাচন সম্পন্ন করা জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসির মুখপাত্র বলেন, আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে নির্বাচন উপযোগী পৌরসভার সংখ্যা ২৯১টি। এর মধ্যে আগামি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে মেয়াদ শেষ হবে ২৩৫ টি পৌরসভায় এবং এপ্রিলের মধ্যে মেয়াদ শেষ হবে ৫৬টি পৌরসভায়। তবে সীমানা জটিলতা ও মামলা জনিত কারণে আপাতত ৩৮টি পৌরসভায় নির্বাচন স্থগিত থাকবে।

নগরকেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার ইউনিট হিসাবে পৌরসভা অগ্রগণ্য। পৌরসভার মেয়াদ পাঁচ বছর। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন মেয়র ও নির্দিষ্ট সংখ্যক ওয়ার্ডে সমানসংখ্যক কাউন্সিলর ও নির্ধারিত সংখ্যক সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে থাকেন। সরকারি গেজেট প্রকাশিত নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ আইন দ্বারা আরোপিত কার্যভার গ্রহণ করেন। নির্বাচিত প্রতিনিধিগণের পদসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত ব্যক্তিগণ এসব পদে অধিষ্ঠিত হয়ে থাকেন। তাই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী আছে কি না লক্ষনীয় বিষয়। এক্ষেত্রে জনগণের করণীয় হলো যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচন করা। শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদণ্ড না থাকায় অশিক্ষিত অর্থপিপাসু শ্রেণির পদায়নের সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদণ্ড থাকা সময়োচিত বলে মনে করি। যিনি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার পদমর্যাদা পাবেন অথচ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত নয়, একেমন কথা। সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করেন, শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত না থাকা অমূলক।

পৌরসভা স্থানীয় শহর অঞ্চলে জনগণের অভিভাবক স্বরূপ। পৌরসভাকে জনগণের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও বহু উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ পৌরসভায় আবশ্যিক কিছু কার্যক্রমের বিচ্যুতি নজরকাড়ে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ, মাতৃসদন ও শিশুসদন ব্যবস্থা করা, অপরাধমূলক ও বিপজ্জনক খেলা ও পেশা নিয়ন্ত্রণ করা,উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ সংরক্ষণ, খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ, মাদকজাতীয় দ্রব্য অবাধে বিক্রি ও সরবরাহের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সন্ত্রাস দমন ও শাস্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা ইত্যাদি।

বর্তমান বিশ্বে সুশাসন প্রত্যয়টি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে টেকসই উন্নয়ন। কাজে স্বচ্ছতা ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা সুশাসনের অন্যতম শর্ত। একই সাথে অবাধ তথ্য প্রবাহের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। পৌরসভায় কার্যক্রমে অনেক সময় দেখা যায়, উন্নতর তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অপ্রতুল। অথচ, দ্রুত সময়ে নাগরিক সেবা প্রদানে উন্নতর তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে সুফল পাওয়া সম্ভব। এই সমস্যার মূলে রয়েছে,দক্ষ কর্মীর অভাব। তাই দক্ষ কর্মী নিয়োগ ও দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। অবহেলিত কাউন্সিলরদের মতে, মেয়রদের একাধিপত্যের ফলে তাঁদের ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনা। কখনও আবার মেয়রের একপেশি আচরণে অতি মাত্রা প্রকাশ পায়। যার ফলশ্রুতিতে কর্মপরিকল্পনায় কিছু সংখ্যক ওয়ার্ড বঞ্চিত হয়। এটা অনুচিত। তাই ওয়ার্ডভিত্তিক সমতা বজায় রেখে যে কোন উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও টেকসই বাস্তবায়ন জরুরী। আইনগত ভাবে পৌরসভার একটি মাস্টার প্ল্যান থাকা আবশ্যক। পৌরসভা আইন, ২০০৯ এর মাস্টার প্ল্যানে আছে, পৌরসভার সীমানার আওতাধীন উন্নয়ন পরিকল্পনার কাঠােমা; ভূমি ব্যবহার, পরিবহন ও ব্যবস্থাপনা , পয়ঃনিষ্কাশন এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনার নীতি ও কৌশল নির্ধারণ এবং সামগ্রিকভাবে পৌরসভার উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় নির্দিষ্ট বাস্তবায়নযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্পের কথা। পৌরসভায় বেশকিছু অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয় বটে কিন্তু অনেক সময় টেকসই এর বিচারের এগুলো প্রশ্ন বিদ্ধ।

পৌরসভা আইনে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনায় ওয়ার্ড কমিটির কথা বলা হয়েছে। আইনের বলা হয়েছে, পরিষদের অনুমোদনক্রমে, পৌর এলাকার প্রত্যেক ওয়ার্ডে অনধিক দশ সদস্য নিয়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে হবে এবং প্রতিটি ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর ঐ ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি হবেন। দশ সদস্যের মধ্যে ৪০% হবেন মহিলা। পৌরসভা সাধারণ আদেশ দ্বারা ইহা নির্ধারণ করে দিবে। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ওয়ার্ড কমিটির অন্যতম কাজ হবে উন্মুক্ত সভার মাধ্যমে ওয়ার্ডের নাগিরকগণকে পৌরসভার উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা৷পৌরসভার মেয়াদকালীন সময়ের জন্য, পরবর্তী উত্তরাধিকারী দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত ওয়ার্ড কমিটি কার্যকর থাকবে। আইনে থাকলেও বাস্তবে নাগরিকদের সম্পৃক্ততা অস্পষ্ট। তাছাড়া যাদেরকে নিয়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়, তারা কি সচেতন নাগরিক সমাজ? নাকি তেলবাজ ও সুবিধাবাদী মানসিকতার কেউ? তারা কি জনগণের সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত? এগুলো ভাবনার বিষয়।

নগরপিতা শব্দটি বড্ড বেমানান। গত ২৮ জানুয়ারি, ২০১৮ দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত একটি কলামে ইকতেদার আহমেদ এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, নগরপিতার পরিবর্তে নগর সেবক বলাই উত্তম। তাঁর সাথে একমত পোষণ করে বলতে চাই, নগরপিতার পরিবর্তে নগর সেবক বলার পাশাপাশি পৌর কাউন্সিলরদের ওয়ার্ড সেবক এবং সংরক্ষিত মহিলাদের সেবিকা বলা উচিত। এতে সম্মান কোন অংশে কমে যাবেনা। জনগণের সেবাই যাদের ব্রত তাদের কে সেবক ও সেবিকা বলা শোভনীয় মনে হয়। নির্বাচনের সময় অধিকাংশ প্রার্থী নিজেদেরকে জনগণের সেবক বলে দাবী করেন। তাহলে এক্ষেত্রে আপত্তি থাকার যৌক্তিকতা কোথায়? সত্যিকার অর্থেই জনপ্রতিনিধিগণ কখনও গড়পড়তা ভাবে নগরের সবার পিতা বা মাতা হতে পারে না। তাই জনগণের সেবার উদ্দেশ্যে যারা দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, তাদেরকে সেবক/ সেবিকা বলাই উত্তম প্রস্তাব।

আমরা যতই বলি না কেন, রাজনীতি ভালো না। কিন্তু চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়ে অবচেতন মনে রাজনৈতিক আলোচনায় প্রবেশ করি। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র বা বিশ্ব পরিমণ্ডলে রাজনীতির ছড়াছড়ি। বইয়ের পাতায় রাজনীতি। সংবাদমাধ্যমে রাজনীতি। কোথায় নেই বলুন? সত্যিকথা বলতে, আমরা রাজনৈতিক পরিবেশেই বিচরণ করি। তাই বলে,এটা দোষে নয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল বহুকাল পূর্বে বইয়ের পাতায় লিখেছেন, মানুষ মাত্রই সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। সুতরাং রাজনীতিকে অস্বীকার করা নেহাত এড়িয়ে চলার চেষ্টা মাত্র। মূলত রাজনীতি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবন থেকে লুকাতে হলে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়। মৃত্যুর মাধ্যমে ইহলৌকিক জীবন ফিরে পাওয়া অসম্ভব। সমাজে প্রচলন আছে, জনপ্রিয়তা যার বেশি তিনিই হবেন জনপ্রতিনিধি। কিন্তু মাঝেমধ্যে টাকা প্রীতি জনপ্রিয়তা কে গ্রাস করে ফেলে। তখন ধর্মের বাণী নিভৃতে কাঁদে। এই সুযোগে অযোগ্য লোকেরা ক্ষমতার মসনদে আরোহন করে। তারপর দিনদিন জনগণের চরম সর্বনাশ মাত্রা ছাড়ায়। তাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে আমাদের আরো সচেতন ও সচেষ্ট হওয়া দরকার। প্রতিনিধি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত দিকগুলোর প্রতি বিশেষ নজর রাখা উচিত। এগুলো হলো – শিক্ষাগত যোগ্যতা, সততা,চারিত্রিক দৃঢ়তা, দক্ষতা ও টেকসই উন্নয়নের সক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি। কেননা, ভুলে গেলে চলবেনা, ভুলের মাশুল আমাদেকেই গুণতে হবে। পরিশেষে আগামী পৌরনির্বাচনে প্রতিটি পৌরসভায় উন্নত মানুষকে প্রত্যাশা করি।

লেখকঃ মোঃ আল ইমরান মুক্তা
শিক্ষানবিশ আইনজীবী
জজ কোর্ট, ময়মনসিংহ।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০