বুধবার, ১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ফিরে দেখা ২০১৯ ॥ সৌদি নাগরিক লাশ উদ্ধার ও মাদকের প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগ নেতা খুন

প্রকাশিত হয়েছে- সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : জানুয়ারি, ৬, ২০২০, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা ॥
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে মাদকের আখড়া থেকে সৌদি নাগরিকের লাশ উদ্ধার ২০১৯সালে ছিলো দেশ-বিদেশে আলোচিত। স্থানীয়ভাবে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় মাদক সিন্ডিকেটের হাতে ছাত্রলীগ নেতা খুনের ঘটনায় নিন্দা ও বিচারের দাবিতে উত্তাল ছিল গৌরীপুর। প্রতিবাদের ঝড় ছিল প্রিন্ট, ইলেকট্টনিক্স ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। এছাড়াও বছরজুড়ে ছিলো খুনের ঘটনা আর লাশ উদ্ধার! এ বছর একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৫জনের যাবতজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেন বিজ্ঞ বিচারক।
২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে আলদুসারী নাচ্ছের ফালেহ জি (৪৮) (আবু নাছের আল দুসারী) নামে এক সৌদি নাগরিকের লাশ উদ্ধার করে গৌরীপুর থানার পুলিশ। উপজেলার ডৌহাখলা গ্রামের আবু সাইদ সানীর মাদকের আখড়াবাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ডৌহাখলা গ্রামের করম আলীর পুত্র আবু সাঈদ সানীর সঙ্গে প্রায় ২০বছর পূর্বে ঢাকায় পরিচয় ঘটে এই সৌদি নাগরিকের। এ পরিচয়ের সূত্র ধরেই আবু নাছের আল দুসারী অবকাশ যাপনের জন্য গৌরীপুরে বসবাস শুরু করেন। সেই বাড়িতে চলতো দিনরাত মদের আসর। উদ্ধারকৃত সৌদি নাগরিকের লাশ সৌদি দূতাবাসের সেক্রেটারি টু চার্জ দ্য এফেয়ার্স ইয়াসিন মো. আব্দুস শহীদ চৌধুরীর কাছে ওই মাসের ১০তারিখে হস্তান্তর করেন গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এ দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুজ্জামান জনিকে ১৭ মে সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে নহাটা বাজারে কুপিয়ে হত্যা করে। তিনি কুমড়ী গ্রামের মৃত আবু সিদ্দিক মাস্টারের পুত্র। কাঁধে লাশ নিয়ে স্বজনরা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাঁসি জানায়। তার পরিবারের দাবি, এলাকার চিহ্নিত ও পুলিশের তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী নুরু মিয়ার অপকর্মের প্রতিবাদ করার কারণেই নুরুজ্জামান জনিকে মেরে ফেলে।
অপরদিকে আলু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের টেংগাপাড়া গ্রামে ইদ্রিস আলী সে বছরের ১০ জানুয়ারি মারা যান। এছাড়াও তার বড় ভাই হাদিস মিয়ার চোখ উপড়ে নেয় দুর্বৃত্ত্বরা। আরেক ভাই আজিজুল হাকিমের দু’পা ও দু’হাত ভেঙ্গে দেয়া, ভাতিজা কবির আহম্মেদ কাজলের বাম হাত ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনা ঘটে।
এ দিকে ২২জানুয়ারি উপজেলায় শ্যামগঞ্জ নেংটা বাবার মাজারের কর্মকর্তা শফিকুর রহমানকে গানের মঞ্চে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করে দুর্বৃত্তরা। নিহত শফিক উপজেলার মইলাকান্দা গ্রামের জহুর উদ্দিনের ছেলে। বছরের শুরুতে বোকাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ মোস্তাকিম হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ জনতা পুড়িয়ে দেয় অর্ধশত বাড়িঘর। তবে সেই ওয়ার্ডের নির্বাচনে ২৫জুলাই তার স্ত্রী আছমা বেগম বিজয়ী হন।
অপরদিকে গৌরীপুরের কলেজছাত্র শামীম আফতার বাপ্পীর লাশ ত্রিশাল উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে ৭জুলাই উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত কলেজ ছাত্রের বাড়ি উপজেলার লামাপাড়া গ্রামে। তার পালিত মা রৌশন আরা খানম সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন রেখে ছিলেন? আমার ছেলে গেলো ময়মনসিংহের আকুয়া বড়বাড়ি মসজিদে নামাজ পড়তে। ত্রিশালের নদে ওর লাশ গেলো কিভাবে? ওকে মেরে নদে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে ৮জুলাই ধান কাটাকে কেন্দ্র করে কৃষক আলাউদ্দিন হত্যা মামলায় পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন ময়মনসিংহ অতিরিক্ত দায়রা জজ ২য় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মুহাম্মদ নূরুল আমীন বিপ্লব। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন গৌরীপুর উপজেলার সিধলা ইউনিয়নের টেংগুরিপাড়ার খোরশেদ আলমের ছেলে কালা চাঁন (৫৫), মৃত আব্দুস সামাদের তিন ছেলে রুহুল আমীন (৫৭), নূরুল হক (৫৫), মঞ্জুরুল হক (৫২) ও নাসির উদ্দিনের ছেলে নবী হোসেন (৫৫)। এ সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০২ সালে ১৭ নভেম্বর সকালে সিধলা ইউনিয়নের টেংগুরিপাড়া গ্রামে বিরোধপূর্ণ জমির ধান কাটাকে কেন্দ্র করে আব্দুস ছাত্তারের ছেলে আলাউদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যা করা আসামিরা। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই নূরুল আমীন বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।