শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪ -|- ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০-বসন্তকাল -|- ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

পণ্য বয়কটের পর এবার ভারতীয় কর্মীদের ভিসা বাতিল

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২
বাহাদুর ডেস্ক || ওয়েব-ইনচার্জ
  • প্রকাশিত সময় : জুন, ৭, ২০২২, ৫:২৭ অপরাহ্ণ

ভারতে দীর্ঘদিন ধরেই সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং মুসলমানদের কোণঠাসা করে রাখা হচ্ছিল। বিশেষ করে, সম্প্রতি হিজাব এবং মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা নিয়ে যে বিতর্ক গড়ে তোলা হচ্ছিল, তাতে খুবই চাপের মুখে পড়ে ভারতের মুসলিমরা। তবে শাসকদলের দুই মুখপাত্রের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যে এ মুহূর্তে বড় ধরনের বিপাকে পড়েছে ভারত। বিশ্বজুড়ে দেশটির বিরুদ্ধে নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।

ali al jamal

ইয়েমেনের ব্যবসায়ী শেখ আলী আল জামাল

মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে গত রোববার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এক বিবৃতিতে জানায়, কোনো ধর্মের প্রতি অবমাননা তাদের দল সমর্থন করে না। এর কিছু সময় পর মহানবীকে (সা.) অবমাননা করে বক্তব্য দেওয়া নুপুর এবং জিন্দালকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।

সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতার, কুয়েত, ইরান ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে মহানবী (সা.) সম্পর্কে মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে। কাতার দাবি করেছে ভারত সরকারকে এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ অভিযোগ করেছেন, ভারতের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের সময় সংখ্যালঘু মুসলমানরা বিপন্ন।

boris johnson partyনুপুর ও জিন্দাল

কেবল এ কয়টি দেশই নয়, বিশ্বজুড়ে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। নানা ধরনের কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছেও বিভিন্ন দেশ। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আরব দেশ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া ভাষায় এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। কুয়েতে শুরু হয়েছে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক। বিভিন্ন মার্কেট থেকে ভারতীয় পণ্য সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।

এর সাথে নতুনভাবে শুরু হয়েছে ভারতীয় শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত ও বহিষ্কারের বিষয়টি। সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় ব্যবসায়ীদের কোম্পানিগুলো থেকে অমুসলিম ভারতীয় কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের ভিসা স্থগিত করা হচ্ছে এবং লেনদেন মিটিয়ে তাদেরকে বাড়ির পথ দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

নিজের টুইটারে শেখ আলী আল জামাল নামে ইয়েমেনের এক বড় ব্যবসায়ী লিখেছেন, আমি আমার কোম্পানিতে থাকা সব অমুসলিম ভারতীয় শ্রমিককে বরখাস্ত করেছি। তাদের সমস্ত বকেয়া-পাওনা রিটার্ন টিকিটের সাথে দিয়ে দিয়েছি। শিগগিরই ভারতের তৈরি সব পণ্যের লেনদেন ও ব্যবসা-বণিজ্য বন্ধ করে দেব। কারণ আমার আবেগের সবচেয়ে দুর্বলতম জায়গা, আমার বিশ্বাস ও ভালোবাসা নবীর প্রতি।

উল্লেখ্য, উপসাগরীয় অঞ্চলে কর্মরত ভারতীয়দের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। এদের মধ্যে অমুসলিম কর্মীর সংখ্যাও অনেক। মহামারি করোনা ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে অর্থনীতি এমনিতেই বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র এক সপ্তাহ ভারতের পণ্যসামগ্রী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বয়কট করলে ভয়ংকর অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি হবে ভারত।

২০১৪ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ ক্রমশই বৃদ্ধি পেলেও মোদি সরকারের পক্ষ থেকে এক ধরনের নীরব সমর্থনের দ্বারা উৎসাহিত হয়েছে। এর ফলে সাম্প্রতিক ইস্যুতে বিশ্বে বিশেষকরে উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের আন্তর্জাতিক অবস্থান বেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে।

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর উপদেষ্টা সুধেন্দ্র কুলকার্নি বলেন, ভারত সরকারের দেখা উচিত ছিল দেশে কী হচ্ছে। সক্রিয়ভাবে এই সমস্ত ঘৃণামূলক প্রচার, রাজনীতি ও কার্যকলাপ বন্ধ করা উচিত ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, শাসক দল উল্টো এটিকে প্রচার করছে। ফলে এখন এটি কেবল বিজেপি নয়, পুরো দেশকেই মুসলিমবিরোধী রাজনীতির মূল্য বহন করতে হবে।