প্রধান প্রতিবেদক :
ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভা নির্বাচন কাল শনিবার (৩০জানুয়ারি/২০২১)। নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪২ জন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে ১৪জন প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে উপজেলা নির্বাচন অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জমে উঠেছে নৌকা ও গাছের মধ্যে ভোটযুদ্ধ, রাত পোহালেই ভোট, কে হচ্ছেন পৌর পিতা?
আজকের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত সাবেক মেয়র মো: শফিকুল ইসলাম হবি (নৌকা), গৌরীপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ রফিকুল ইসলাম (নারিকেল গাছ), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনোনীত আতাউর রহমান আতা (ধানের শীষ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) মনোনীত ফারুক উজ্জামান খান ফারুক (কুঁড়েঘর), আব্দুল কাদির স্বতন্ত্র প্রার্থী (মোবাইল), আওমীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তাহরিমা আক্তার চুমকি (জগ) ও আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতা আবু কাউসার চৌধুরী রন্টি (চামচ)।
গৌরীপুর পৌরসভা নির্বাচনে নয়টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪২জন। (কাউন্সিলরদের তালিকা দিতে হবে।) তিনটি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এদিকে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১নং ওয়ার্ডে দিলুয়ারা আক্তার (চশমা), তানজিনা হাবিবা (আনারস), মোছাঃ কবিতা আক্তার (জবাফুল), ২নং ওয়ার্ডে মোছাঃ রোজিনা আক্তার চৌধুরী (অটোরিক্সা), মোছাঃ শামীমা সুলতানা (আনারস), মোছাঃ শিউলী চৌধুরী (চশমা), জোহারা বেগম (মেট্টোরেল), মোছাঃ সেলিনা খাতুন (জবা ফুল), ৩নং ওয়ার্ডে জেসমিন আক্তার (চশমা), মোছাঃ জহুরা আক্তার (টেলিফোন), মোছাঃ মনোয়ারা বেগম (আংটি), সালেহা আক্তার (জবা ফুল), জয়ন্তী রানী দাস (অটোরিক্সা), জ্যোতি রানী সরকার (আনারস) প্রতীক পান।
অপরদিকে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১নং ওয়ার্ডে আব্দুর রউফ মোস্তাকিম (উটপাখি), মোঃ নাহিদ পারভেজ (পাঞ্জাবি), দেওয়ান মাসুদুর রহমান খান সুজন (পানির বোতল), মোঃ মোজাম্মেল হোসেন (ডালিম), প্রদীপ বাগচী (গাজর), বিপুল কুমার চন্দ (টেবিল ল্যাম্প), ২নং ওয়ার্ডে মো. মোস্তফা কামাল (টেবিল ল্যাম্প), মো. দেলোয়ার হোসেন (ডালিম), মো. মতিউর রহমান (উটপাখি), ৩ নং ওয়ার্ডে শাহ আরমান কবীর (উটপাথি), মো. মাসুদ মিয়া রতন (পানির বোতল), মো. তারিফ উদ্দিন আকন্দ (পাঞ্জাবি) প্রতীক পেয়েছেন। কাউন্সিলর প্রার্থী ৪ নং ওয়ার্ডে মো. আশরাফুল ইসলাম খান (উটপাখি), মো. নুরুল ইসলাম (ডালিম), মো. যোবায়ের সোহান (পানির বোতল), মো. গোলাম আলিমেল হাকিম মুন্সী (পাঞ্জাবী), ৫ নং ওয়ার্ডে জিয়াউর রহমান জিয়া (ব্ল্যাক বোর্ড), মো. সাজ্জাদুর রহমান (টেবিল ল্যাম্প), মো. জাইদুল ইসলাম (উটপাখি), মো. আবুল হোসেন (পানির বোতল), মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ (পাঞ্জাবি), ৬ নং ওয়ার্ডে মো. মোখলেছ (ব্ল্যাক বোর্ড), জাহাঙ্গীর আলম (পানির বোতল), মো. এমরান (উটপাখি), মো. আনোয়ার হোসেন মীর (পাঞ্জাবি), মুহাম্মদ শাহ আলমগীর কবীর (ডালিম) প্রতীক বরাদ্দ পান। ৭ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী আজিজুল ইসলাম (ডালিম), মো. এমদাদুল হক (উটপাখি), মো. আবু সুফিয়ান (ব্রিজ), মো. নাজিম উদ্দিন (পাঞ্জাবি), মো. রফিকুল ইসলাম (পানির বোতল), ৮ নং ওয়ার্ডে আল সানিয়ান সানি (পাঞ্জাবি), মো. আনোয়ারুল ইসলাম খান (পানির বোতল), মো. আব্দুর বারেক (উটপাখি), কাজী গোলাম মোস্তফা (ব্ল্যাকবোর্ড), মো. সাইফুল ইসলাম (ডালিম), মো. সাদেকুর রহমান সাদেক (টেবিল ল্যাম্প), ৯ নং ওয়ার্ডে মো. লাল মিয়া (পানির বোতল), এস এম আলী আহাম্মদ (ডালিম), মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম ভূইয়া (উটপাখি), রবিকুল (টেবিল ল্যাম্প) ও মোঃ রিপন মিয়া (পাঞ্জাবি)।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্র্থী শফিকুল ইসলাম হবির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রিয় কমিটি, জেলা কমিটি ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম হবি’র বিজয় নিশ্চিত করতে একাট্টা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও সমন্বয়কারী হিসাবে যুগ্ম সম্পাদক শওকত জাহান মুকুল দায়িত্ব পালন করছেন। গৌরীপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন খান জয়-বিজয়ে বড় ফ্যাক্টর। তিনি সেটা প্রমাণ করছেন যুবলীগের সম্মেলন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। তিনিও নৌকাকে বিজয়ী করতে এবার মাঠে নেমেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপিও রয়েছেন নৌকার পক্ষে। এমপি পুত্র তানজীর আহমেদ রাজীব সার্বক্ষনিক মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। এবার নির্বাচনে নৌকার জন্য সুখকর বার্তা দুই’বিদ্রোহী প্রার্থী সরে দাঁড়িয়ে তারাও নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে ব্যালটে থাকছে বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল কাদিরের মোবাইল ও সন্ত্রাসী হামলায় নিহত মাসুদুর রহমান শুভ্র’র স্ত্রী তাহরিমা আক্তার চুমকীর জন্য বরাদ্দকৃত জগ প্রতীক।
এদিকে নৌকা প্রতীকের গণসংযোগ ও পথসভায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ ডক্টর সামীউল আলম লিটন, কেন্দ্রীয় আ’লীগের উপকমিটির সহ-সম্পাদক মুর্শেদুজ্জামান সেলিম, জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভিপি বাবুল ও দুই শতাধিক নেতাকর্মী নৌকার গণসংযোগ ও পথসভায় অংশ নিচ্ছেন। নৌকাকে বিজয়ী করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক সুব্রত পাল, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম আফজালুর রহমান বাবু এবং কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মী নৌকার প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মেয়র প্রার্থী মাসুদুর রহমান শুভ্র হত্যাকাণ্ডের পর তার স্ত্রী তাহরিমা আক্তার চুমকী (জগ) বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম হবির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল কাদিরও (মোবাইল) প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে শফিকুল ইসলাম হবিকে সমর্থন জানান। আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী আবু কাউছার চৌধুরী রন্টি (চামচ) প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম হবি দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে তার বিজয় নিশ্চিত করতে পাড়ামহল্লায় ভোট প্রার্থনা করে চলেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামও তার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান আতা ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবু কাউসার চৌধুরী রন্টিও মাঠে রয়েছেন। ভোটরা জানিয়েছেন এবারের নির্বাচনে নৌকা ও নারিকেল গাছের মধ্যে লড়াই হবে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার সজল চন্দ্র সরকার জানান, গৌরীপুর পৌরসভায় মোট ভোটার ২১ হাজার ২১২ জন। তাদের মধ্যে নারী ভোটার ১০ হাজার ৮৪৬ জন এবং পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৩৬৬ জন। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রে ৫৬ ভোট কক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য ৯জন প্রিজাইডিং, ৫৬জন সহকারী প্রিজাইডিং ও ১১২জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে স্থানীয় প্রশাসন সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: বোরহান উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রসহ গৌরীপুর পৌর এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ জানান, ৯টি কেন্দ্রে ৯জন বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে ২জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনের দিন থাকবেন। এছাড়াও বিজ্ঞ জুডিসিয়াশল ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন।
এছাড়াও র্যাব-১৪, বিজিবি ট্রাইকিং ফোর্স ছাড়াও প্রত্যেকটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ, সাব-ইন্সপেক্টর থাকবেন বলে জানা গেছে। উপজেলা আনসার ও ভিডিপি অফিসার মোঃ রাকিবুল হাসান জানান, প্রত্যেক কেন্দ্রে ২জন অস্ত্রধারী আনসার ও ৯টি কেন্দ্রে ৫০জন পুরুষ ও ২৭জন।