আজ বুধবার ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:
তাসাদদুল করিম || শান্তির র্ধম ইসলাম
  • প্রকাশিত সময় : আগস্ট, ৬, ২০২১, ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ




নেককার সন্তান পরকালে বাবা-মার মুক্তির উপায়

মহান আল্লাহতায়ালার অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে বাবা-মার জন্য অন্যতম একটি নিয়ামত হচ্ছে সন্তান-সন্ততি। কারণ আল্লাহতায়ালাই একমাত্র সন্তান-সন্ততি দানের মালিক।

এই পৃথিবীতে এমন অনেকে মানুষ আছে, যাদের ধন সম্পত্তির কোনো কমতি নেই। কিন্তু কোনো সন্তান-সন্ততি নেই। আবার অনেকে আছে দিনে আনে দিনে খায়, তার চার পাঁচ সন্তান আছে।

পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ধন, ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের অলঙ্কার-শোভা (সুরা কাহাফ: ৪৬)।

অন্যত্র আল্লাহতায়ালা বলেন, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই। তিনি যাকে ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদের দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষামাশীল (সুরা শুরা: ৪৯-৫০)।

এজন্য বাবা-মার জন্য সন্তান-সন্তুতিকে বলা হয় আল্লাহর পক্ষ হতে শ্রেষ্ঠ উপহার। সন্তান-সন্তাতি জন্ম দেওয়ার পরই বাবা-মার কাজ শেষ নয়। তাদের সৎ পথে পরিচালিত বাবা-মার অন্যতম নৈতিক দায়িত্ব। কারণ সন্তান দুই ধরণের হয়- সুসন্তান ও কুসন্তান।

সুসন্তান বাবা-মার জন্য দুনিয়াত ও আখিরাতের জন্য কল্যাণকর। আর কুসন্তান বাবা-মার জন্য অভিশাপ। কারণ কুসন্তানের জন্য বাবা-মা দুনিয়াতে অপমানিত হওয়ার পাশাপাশি হাশরের ময়দানে আল্লাহর দরবারে আসামি হিসেবে দাঁড়াতে হবে।

সুসন্তানকে ইসলামের পরিভাষায় নেককার সন্তান বলা হয়। নেককার সন্তান এই দুনিয়ার জন্য বরকতময় আবার পরকালেরও সঞ্চয়পত্র। মানুষ মৃত্যুর পর আমলের সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু কিছু আমল দুনিয়ায় থাকাকালীন অবস্থায় করে যাওয়ার কারণে তার সাওয়ার মৃত্যুর পরও পেতে থাকে।

হজরত আবু হুরাইয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায়, তখন তার আমলের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল কখনো বন্ধ হয় না। এক, সদকায়ে জারিয়া, দুই, ওই ইলম যা দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয়, তিন, নেককার সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (সহিহ মুসলিম: ১৬৩১, সুনামে আবু দাউদ: ২৮৮০)

মৃত্যুর পরবর্তী জীবন খুব কঠিন। মৃত্যুর পর যেখানে এই পৃথিবীর কোনো ধন-সম্পত্তি, ঐশ্বর্য কাজে আসবে না। কেউ চাইলেই নিজের ভুলগুলো সংশোধন এবং আমল বাড়িয়ে হাশরের ময়দানে নাজাতের ব্যবস্থা করতে পারবে না। কিন্তু, মৃত্যুর পরও তিনটি পদ্ধাতি আমল জারি থাকে।

এই তিনটি আমলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নেককার সন্তান।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র আল-কুরআনে পৃথিবীর সকল সন্তানদের তাদের বাবা-মার জন্য তিনটি দোয়া শিখিয়েছেন। বাবা-মা জীবিত কিংবা মৃত্য যে অবস্থায় থাকুক না কেন, প্রত্যেক সন্তানের দ্বায়িত্ব হলো প্রতিদিন এ দোয়াসমূহ পাঠ করা।

এ দোয়াসমূহ হলো, এক. রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা। অর্থ: (হে আমাদের) পালনকর্তা ! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর, যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন। (সুরা বনি ইসরাইল: ২৪)

দুই. রাব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনাও জ্বালিমিনা ইল্লা তাবারা। অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমাকে, আমার বাবা-মাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং আপনি জালেমদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না। (সুরা নূহ:২৮)

তিন. রাব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলুমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।

অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। (সুরা ইব্রাহিম: ৪১) এই দোয়াগুলাতে রয়েছে সন্তান-সন্ততি ও মুমিন নারী-পুরুষ সবার জন্য কল্যাণকর।

প্রত্যেক বাবা-মার উচিত আল্লাহতায়ালার নিকট নেককার সন্তানের জন্য দোয়া করা। হযরত জাকারিয়া আলাইহিস সালামের নেক সন্তান চাওয়ার পদ্ধতিটি আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় ছিল। হযরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর আল্লাহর নিকট বলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একা রেখো না। তুমি তো উত্তম ওয়ারিস দানকারী (সুরা আম্বিয়া: ৮৯)।
আল্লাহতায়ালা হযরত জাকারিয়া আলাইহিস সালামের দোয়া কবুল করেছিলেন এবং তাকে হযরত ইয়াহিয়া আলাইহিস সালাম দান করেছিলেন। আবার মুসলিম জাতির পিতা হয়রত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম যখন ৮৬ বছর বয়সে আল্লাহ নিকট দোয়া করলেন, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে এক সৎকর্মশীল সন্তান দান করেন (সুরা আস-সাফফাত-১০০)।

অতঃপর আল্লাহতায়ালা তাকে ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে দান করেন। কিন্তু আমাদের দেশে সন্তান-সন্ততি আল্লাহর নিকট না চেয়ে  বিভিন্ন মাজার, দরগাহ কিংবা পীর বাবার নিকট চাই। এগুলোকে কখনো ইসলাম সমর্থন করে না।

আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ সন্তন-সন্ততি দিতে পারে এ রকম বিশ্বাস করা শিরক। আর শিরক হচ্ছে জঘন্যতম জুলুম। পৃথিবীর সকল পিতাদেরকে  আল্লাহতায়ালা একটি দোয়া আল-কুরআনে শিখিয়ে দিয়েছিলেন।

দোয়াটি  হলো: রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াঝিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আইয়ুনি ওয়াঝআলনা লিলমুত্তাক্বিনা ইমামা।

অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করেন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য আদর্শস্বরূপ করেন। (সুরা ফুরকান:৭৪)

তাই  প্রত্যেক বাবা-মার উচিত তাদের সন্তানদের ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করা। আল্লাহতায়ালা সকল মুসলমানদের নেককার সন্তান দান করুক এবং বাবা-মাকে সন্তানের প্রতি দ্বায়িত্ব পালন করার তৌফিক দান করুক।

পরিশেষে, মুসলমানের সন্তান-সন্তাতি যেন পরকালে যেন তাদের বাবা-মার মুক্তির কারণ হয় এই কামনা করছি।

লেখক: ইসলামিক লেখক ও শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০