আজ মঙ্গলবার ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:
নিজস্ব প্রতিবেদক || দৈনিক বাহাদুর
  • প্রকাশিত সময় : জুন, ১২, ২০২২, ৩:৫৩ অপরাহ্ণ




নারী উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস : রুখতে হবে একসাথে

১৩ জুন নারী উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস বা ইভটীজিং প্রতিরোধ দিবস| ইভটিজার কতিপয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের পক্ষ নেয় এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও নীতি-নৈতিকতাহীন সমাজের কতিপয় ভদ্র মানুষ। তাদেরকেও সামাজিকভাবে বয়কট করা প্রয়োজন। ময়মনসিংহের গৌরীপুরেও একাধিক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এ ধরণের আচারণের পরেও তাদেরকে বদলি করেই দায় এড়িয়ে চলে কর্তৃপক্ষ! নতুন প্রতিষ্ঠানে নতুন আঙ্গিকে চলে সেই শিক্ষকের উত্ত্যক্তকরণ, যতক্ষণ- বোমা ফাটানোর মতো কোনো ছাত্রী চিৎকার না দিবে ততক্ষণ সেখানেও চলবে এমন অপকর্ম।
ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে যৌন নিপীড়নের মতো ভয়াবহ ব্যাধি থেকে নারীসমাজকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৩ জুনকে ইভটিজিং প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং ২০১০ সাল থেকে নিজস্ব কার্যক্রম নিয়ে জাতীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছে দিনটি|
আমরা জানি, নারী উত্ত্যক্তকরণ বা ইভটিজিং হলো একটি সামাজিক ব্যাধি। কাল ১৩ জুন ইভটিজিং বা নারী উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস। প্রতি বছর বখাটেদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইভটিজিং বা নারী উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়।
ইভটিজিং বিষয়টা ৬০-এর দশকের বেশি মনোযোগ পায় গণমাধ্যমে। যখন অধিকসংখ্যক মেয়ে বিদ্যালয় ও কর্মক্ষেত্রে যেতে থাকে পুরুষের সহচর্য ছাড়াই। এই অবস্থায় প্রশাসন ইভটিজারদের ধরতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে মহিলা পুলিশের প্রয়োগ ফলপ্রসূ হয়। বিভিন্ন শহরে মহিলা পুলিশের বিশেষ স্টেশন, মহিলাদের জন্য হেল্পলাইন চালু ও পুলিশের মাঝে ইভটিজিংবিরোধী সেল গঠন করা হয়। এ সময়ে প্রচুর অভিযোগ আসতে থাকে ইভটিজিং এর। তথাপিও ইভটিজিংয়ের মাত্রা বাড়তেই থাকে। একসময় তা পৌঁছে যায় অ্যাসিড সন্ত্রাস পর্যন্ত। এ সময়ে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ইভটিজিং বা নারী উত্ত্যক্তকরণ বলতে কোনো নারী, যুবতী, কিশোরীবা মেয়ে শিশুকে তার স্বাভাবিক চলাফেরায় বাধাদান, তার চলার পথে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা অবস্থায় অশ্লীল বা অশালীন মন্তব্য করা, যেকোনো ধরনের ভয় প্রদর্শন, তার নাম ধরে ডাকা বা বিকৃত নামে তাকে সম্বোধন, চিৎকার চেঁচামেচি করা, তার দিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো কিছু ছুড়া, ব্যক্তিতে লাগে এমন ধরনের মন্তব্য করা, যোগ্যতা নিয়ে টিটকারী করা, তাকে নিয়ে অহেতুক হাস্যরসের উদ্রেক করা, রাস্তায় হাঁটতে বাধা দেওয়া, অশ্লীল বা অশালীন অঙ্গভঙ্গি করা, ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা দেওয়া, সিগারেটের ধোঁয়া গায়ে ছুড়া, উদ্দেশ্যেমূলকভাবে পিছু নেওয়া, অশ্লীলভাবে প্রেম নিবেদন করা, উদ্দেশ্যেমূলকভাবে গান-ছড়া বা কবিতা আবৃত্তি করা, চিঠি লেখা, পথ রোধ করে দাঁড়ানো, প্রেমে সাড়া না দিলে হুমকি প্রদান ইত্যাদি ইভটিজিংয়ের মধ্যে পড়ে। সাধারণত কিশোরী মেয়ে, মেয়েশিশু, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী ছাত্রী, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত নারী শ্রমিক, আইনজীবী, সাংবাদিক, ডাক্তারসহ সবস্তরের নারীরা। এ ছাড়া পাবলিক পরিবহনে বিশেষ করে বাস, ট্রেন, সিএনজি অটোরিকশায়ও নারীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন।
বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৫০৯ ধারায় ইভটিজিং সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো কোনো ব্যক্তি কোনো নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে সে নারী যাহাতে শুনিতে পায় এমনভাবে কোনো কথা বলে বা শব্দ করে কিংবা সে নারী যাহাতে দেখিতে পায় এমনভাবে কোনো অঙ্গভঙ্গি করে বা কোনো বস্তু প্রদর্শন করে কিংবা অনুরূপ নারীর গোপনীয়তা অনাধিকার লঙ্ঘন করে, তাহা হইলে সেই ব্যক্তি এক (১) বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদন্ডে কিংবা অর্থদন্ডে কিংবা উভয় দন্ডেই দন্ডিত হবে।’ ৩৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারীর শালীনতা নষ্ট করার অভিপায় বা সে তা দ্বারা তার শালীনতা নষ্ট করতে পারে জেনেও তাকে আক্রমণ করে বা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করে তাহলে সে ব্যক্তি ২ বৎসর পর্যন্ত যেন কোনো বর্ণনার কারাদন্ডে বা জরিমানা দন্ডে বা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডিত হবে।’
মূলত এই ইভটিজিং বন্ধে করণীয় হলো:- পরিবারের সদস্যদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ইভটিজিং বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেসব কর্মক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী কর্মীরা একসঙ্গে কাজ করেন, সেসব কর্মক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মীরা নারী সহকর্মীর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ নারী উত্ত্যক্তকরণ বা ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে ইভটিজিংবিরোধী সভা, সমাবেশের আয়োজন করতে পারেন। এতে জনসচেতনতা সৃষ্টি হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ইভটিজিংয়ের ব্যাপারে সোচ্চার ভূমিকা নিতে হবে। ইভটিজিং যে বা যারা করবে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করার পদক্ষেপ নিতে হবে জনপ্রতিনিধিদের।
সকল নারী জাতিকে মা বোনের দৃষ্টিতে দেখে সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।
সর্বোপরি ইভটিজিং বা নারী উত্ত্যক্তকরণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কোনো ধরনের ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটলে সবাইকে ভিকটিমের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিকারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশের প্রতিটা নারীর অধিকার রয়েছে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করার। আমরা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে অবশ্যই আমাদের কন্যা, জায়া ও জননীদের পথচলা হবে নিরাপদ। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, ” নারীশক্তি সর্বশক্তির আঁধার”।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০