নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার বরপা এলাকার মেসার্স ভূইয়া এগ্রো অ্যান্ড ডেইরি ফার্মে রাখাল কাঞ্চন মিয়াকে (৪০) জবাই করে হত্যা করা হয়। তার লাশ সোমবার (১১এপ্রিল/২০২২) সন্ধ্যায় বাড়িতে আসে। রাতে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরাস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের শহরআহাম্মদপুর গ্রামের আব্দুল মুন্নাফের পুত্র।
সন্ধ্যায় বাড়িতে সন্তানের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা কুলসুম বেগম। তিনি বারবার বলছিলেন, আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিন। স্বজনদের আহাজারীতে শোকের ছায়া নেমে আসে।
নিহতের ছোট ভাই মো. সেকান্দর মিয়া (৩০) জানান, দীর্ঘদিন যাবত তার ভাই কাঞ্চন মিয়া গরুর ফার্মে কাজ করতো। রোববার সকালে তাকে ফোনে জানানো হয় তার ভাইয়ের গলাকাটা অবস্থায় পাওয়া গেছে। তিনি নিজেই বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। নিহতের বাবা আব্দুল মুন্নাফ জানান, তার ছেলে অত্যন্ত সহজ সরল ছিলো। তিনি তার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসির দাবি জানান। খবর পেয়ে ছুটে আসেন মাওহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আল ফারুক। তিনি শোকাহত পরিবারকে শান্তনা দেন।
এদিকে লাশ নিয়ে জানাযার পূর্বে শত শত মুসুল্লী ও পরিবারের স্বজনরা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাাঁসি দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন। এ দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে মাওহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আল ফারুক বলেন, হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
মামলা ও রূপগঞ্জ পুলিশ সূত্র জানায়, কাঞ্চন মিয়াকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তার ভাই সেকান্দর মিয়া বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার বরাত দিয়ে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির মোল্লা জানান, কোনো কারণে আক্রোশ বশত খামার মালিক তারাব পৌরসভার সাবেক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর (১,২,৩) আছমা বেগমের স্বামী শফিকুল ইসলাম আপেল, তার ছেলে আশফাক আহমেদ ও ইসতিয়াক আহমেদসহ তাদের সহযোগী ৭/৮ জন গত শনিবার রাতের যেকোনো সময় ধারালো চাকু দিয়ে মেসার্স ভূঁইয়া এগ্রো অ্যান্ড ডেইরি খামারের রাখাল কাঞ্চন মিয়া (৪০) জবাই করে হত্যা করে। পুলিশ রাতেই মামলার প্রধান আসামি খামারের মালিক শফিকুল ইসলাম আপেল, তার ছেলে আশফাক ও ইসতিয়াককে গ্রেফতার করেন।
অপরদিকে মেসার্স ভূইয়া এগ্রো অ্যান্ড ডেইরি ফার্মের মালিক শফিকুল ইসলাম আপেল জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ২৫ জানুয়ারি রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ওই ডায়রীতে তিনি উল্লেখ করেন জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে গত ২৪ জানুয়ারি তাকে দিবালোকে হত্যার হুমকি দেয় বরপা এলাকার তৈয়ম আলী শিকদার, তৈয়ব আলী শিকদারের ছেলে দুলাল হোসেন, মালেকের ছেলে সোলায়মান ও সোলায়মানের ছেলে ইসতিয়াক। হুমকির একদিন পর অভিযুক্তরা আবার ২৫ জানুয়ারি ওই ফার্মে গিয়ে আপেলকে না পেয়ে ফার্মের রাখাল কাঞ্চন মিয়াকে একা পেয়ে হত্যা এবং খামারের ব্যাপক ক্ষতি করা হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএফএম সায়েদ জানান, হত্যাকাণ্ডে রহস্য উন্মোচনে কাজ করছে পুলিশ। প্রতিপক্ষের লোকজনদের ফাঁসাতে, নাকি অন্য কোনো কারণে ডেইরি খামারের রাখাল কাঞ্চন মিয়াকে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়টিও ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। রোববার গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। বিজ্ঞ আদালত ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামিদের থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে ওসি জানান।