শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

নগর আলোকিত করতে প্রতিটি সড়কে সড়কবাতি স্থাপন করতে চান মসিক মেয়র- টিটু

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০২১
এম. এ আজিজ || প্রধান প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ।
  • প্রকাশিত সময় : অক্টোবর, ১২, ২০২১, ৫:৩৯ অপরাহ্ণ

এম এ আজিজ, স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের এলাকায় আধুনীকরণ এলইডি বিদ্যুতায়ন সড়কবাতি স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ৪৯ কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষে ৩৩টি ওয়ার্ডের ১৭১ কিলোমিটার সড়কে ৬৬৬৩টি জিআই পুল (খুটি) ও সমসংখ্যক এলইডি বাতি লাগানোর কাজ চলছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক না হলেও প্রাথমিক অবস্থায় শুরু হয়েছে। অবশ্য এ প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে ময়মনসিংহ পৌরসভার কার্যকালে। ঐ সময়ে বর্তমান সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ছিলেন।

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ৯০.১৭ বর্গ কিলোমিটার। এই বিশাল আয়তনের সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ ওয়ার্ড আলোকিত করতে কমপক্ষে ৫ শত কোটি টাকার প্রয়োজন রয়েছে।
আধুনীকরণ এলইডি বিদ্যুতায়ন সড়কবাতি স্থাপনের চলমান কাজটি ২০২০-২১ অর্থ বছরে শেষ হবার কথা ছিল। দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ার ট্রেড লিঃ, প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট এবং ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড যৌথভাবে এ কাজ সম্পন্ন করছেন। কোবিড-১৯ এর কারনে প্রকল্পটির কার্যক্রম বাস্তবায়নের শুরুর দিকে বাধাগ্রস্থ হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক ও সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের রাস্তাগুলোর দুইপার্শ্বে বিদ্যুৎ উন্নয়নের বোর্ডের ঢালাইকৃত বা সিসি দ্বারা নির্মিত পিলার সহ বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে। যার কারণে সিটি কর্পোরেমনের জিআই পুল বা খুটি স্থাপনে মারাত্¦ক সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক্ষেত্রেই পিডিবির ৩৩ হাজার কেভি, ১১ হাজার কেভি ভোল্টের লাইনের বিদ্যুৎ লাইনে সিটির খুটি স্থাপনকালে দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। অপরদিকে মাটির নীচে রয়েছে গ্যাস সংযোগ ও পানির লাইন। আধুনীকরণ এলইডি বিদ্যুতায়ন সড়কবাতি স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে শেষ করতে সিটি মেয়র ইকরামুল হক পিডিবিকে মাষ্টার প্লান অনুযায়ী রাস্তার একপাশ দিয়ে বিদ্যুতের খুটি বসানোর জন্য বারবার অনুরোধসহ তাগিদ দিলেও পিডিবি কর্ণপাত করছেনা বলেও জানা গেছে।

সিটি কর্পোরেশনের সড়ক আলোকিত করার চলমান এই প্রকল্পটি পৌরসভা থাকাকালীর নেয়া হয়েছে। ঐ সময়ে ২১টি ওয়ার্ড এবং আয়তন ছিল অনেক কম। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশন হওয়ার পর ২০১৯ সালে প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মিঞার তত্বাবধানে শুরু হয়। পরবর্তীতে তিনি অন্য একটি প্রকল্পের দায়িত্ব নেয়ায় নির্বাহী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। আকুয়া ও বয়ড়ার মত বিশাল দুটি ইউনিয়নের পুরো এলাকা এবং দাপুনিয়া, খাগডহর, চরঈশ্বরদিয়া, নিলক্ষিয়া ও ভাবখালি ইউনিয়নের কতক অংশ নিয়ে বর্ধিত সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ টি ওয়ার্ডে আধুনিক আলোকবাতি সজ্জিত করতে কমপক্ষে ৫ শত কোটি টাকার প্রয়োজন রয়েছে।
সিটি সুত্র জানায়, বর্তমানে আলোকিত সড়কবাতি স্থাপনে প্রতিটি জিআই পুল ও আলোকবাতি বসানো কাজে ব্যয় হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। ৬৬৬৩টি জিআই পুলের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার পুল বসানো সম্পন্ন হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে এ সব পুলে এলইডি বাতি লাগানো হবে।

সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক জিল্লুর রহমান জানান, সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু সিটির ৩৩টি ওয়ার্ডে ইউরিপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড মত করে প্রতিটি সড়কে সড়কবাতি স্থাপন করে পুরো নগরকে আলোকিত করতে চান। এ পরিকল্পনায় ইন্টিলেজেন লাইট সার্ভার স্থাপন করে স্থাপিত সড়কবাতির কোথাও কোন সমস্যা কিংবা কোথাও বাতি জ্বলছে কিনা তা তাৎক্ষনিক জানা যাবে। এ পদ্ধতিতে কোথাও বাতির পাওয়ার কম বেশির প্রয়োজন হলে তাও নিরুপন করা সম্ভব হবে। একই সাথে এই ব্যবস্থায় লোকবল কম, আর্থিক অপচয় রোধ এবং ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সহজ হবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, ইউরিপিয়ান আদলে বা স্টাইলে নগর আলোকিত করতে ডিজিটাল সার্ভের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বর্ধিত অংশসহ ময়মনসিংহ সিটিতে কমপক্ষে ২ হাজার কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এই দুই হাজার কিলোমিটার সড়ক পুরোপুরি আলোকবাতি দ্বারা আলোকিত করতে কমপক্ষে ৫ শত কোটি টাকার প্রয়োজন রয়েছে। নগরবাসির প্রত্যাশা ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনকে আধুনিক ও মডেল সিটি গড়তে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিবে।
করোনা পরিস্থিতির পরও চলমান এই কাজটি এগিয়ে চলছে। কাজের গতিকে বাধাগ্রস্থ এবং উন্নয়নে ঈর্শ্বান্বিত হয়ে কতক কুচক্রিমহল বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে সিটি কর্পোরেশনের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা করছে বলে নির্বাহী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমানসহ অনেকেই মত প্রকাশ করেন। এর পরও চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই চলমান বিশাল এই প্রকল্পটি শেষ হবে বলে তিনি দাবি করেন। সড়কবাতি আলোকিতকরণ ও নগর সজ্জিতকরণ প্রকল্পটি শেষ হলে নগরীর চেহারা পাল্টে যাবে। রাতে নগরীতে মনোরম সৌন্দর্যময় ও আনন্দের দৃশ্য চোখে ভেসে আসবে।
মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, সিটি কর্পোরেশনের অত্যাধুনিক এলইডি সড়ক বাতির কাজ শেষ হলে শহরের মানুষ অন্ধকার সড়ক খুজে পাবেন না। ময়মনসিংহ শহর মনোরম সৌন্দর্যময় শহরে রুপ নিবে। তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে শহরের বিদ্যুৎ লাইন আন্ডার গ্রাউন্ডে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও বিষয়টি সময় সাপেক্ষ এবং বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বৃদ্ধির সম্পর্কে তিনি বলেন, পরিস্থতি বুঝে বিষয়টি মন্ত্রনালয়ের সাথে পত্রালাপ করা হবে।
মেয়র আরো বলেন, সকলের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে মেয়র হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর ময়মনসিংহবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। পরিকল্পনাবিহীন ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপসারন করে নতুন করে পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন ড্রেন নির্মান করা হয়েছে। বর্তমানে নগরীতে জলাদ্ধতা নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের লোড শেডিং ময়মনসিংহবাসীকে স্পর্শ করতে পারবে না। বর্জ থেকে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।
মেয়র আরো বলেন, কোবিড-১৯ ৩য় ধাপ অতিবাহিত হচ্ছে। শুরু থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দের্শনা অনুযায়ী মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রচারপত্র ও মাস্ক বিতরন, সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখাসহ ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়ে আসছি। এছাড়া রাস্তার মোড়ে মোড়ে সাধারণ মানুষের হাত ধোয়ার জন্য সাবান পানি করা হয়েছে। যা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত নর্দমা, আবর্জনা, বাড়ির আঙ্গিনাসহ হাজামজা পুকুরগুলো পরিস্কার করার কর্মসূচী বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখা হয়েছে। ডেঙ্গু ও কোবিড-১৯ প্রতিরোধে মশক নিধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফলে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোবিট-১৯ সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুবরণ অনেক কম। এর পরও যারা মারা গেছেন এদের বেশিরভাগই অন্য জায়গা থেকে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, সিটি কর্পোশেনের বাসিন্দারা আমাদের কথাবার্তা শুনেছেন এমন দাবি করে তাদের ধনবাদ জানিয়ে বলেন, কোবিড-১৯ প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী যথা সময়ে মানুষের মধ্যে সঠিকভাবে বিলিবন্টন করা হয়েছে। সিটির সকল কাউন্সিলর, কর্মকর্তা কর্মচারীগনের সহযোগিতায় সুষ্ঠভাবে বিতরণ সম্ভব হয়েছে। তিনি আরো বলেন ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধন অভিযান চলছে। অভিযানে কোথাও এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় ৬ হাজার সাতশত খুটি বসানোর কাজ চলছে। সমপরিমাণ খুটিতে উন্নমানের এলইডি বাতি লাগানো হবে। এ পর্যন্ত ৩০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।