শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪ -|- ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০-বসন্তকাল -|- ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

দু’বিদ্যালয়ের পাশে ইটভাটা-পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়সারা অভিযান : গৌরীপুরে চেয়ারম্যনের ইটভাটা প্রকাশ্যে পুড়ছে লাকড়ী

প্রকাশিত হয়েছে- বৃহস্পতিবার, ১৯ মার্চ, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : মার্চ, ১৯, ২০২০, ৭:৩৮ অপরাহ্ণ

প্রধান প্রতিবেদক :
নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করে ইটভাটা চলছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। ভ্রাম্যমান আদালতের গুড়িয়ে দেয়া ভাটায় তৈরি হচ্ছে ইট। দু’বিদ্যালয়ের ঘেঁষে দু’ইটভাটা! চেয়ারম্যানের ভাটায় লাকড়ি পুড়ানোর মহোৎসব। সবভাটা গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি আর জমির মাটি। ত্রিফসলী জমিতে একের পর এক ভাটা স্থাপন চলছে। নিশ্চুপ প্রশাসন! পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়সারা অভিযান; পরিবেশ হচ্ছে ভুলুন্ঠিত।

এ দিকে সবুজ অরণ্যে আঘাত করছে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া। প্রকাশ্যে আর গোপনে কাঠ পোড়ানো চলছে সব ভাটায়। সন্ধ্যা নামার সঙ্গেই বাড়ছে কাঠ পোড়ানোর মাত্রা। বাসা-বাড়ি আর স্বজনের বাড়িতেও রাখা হয় এসব কাঠ। ইটভাটায় রক্ষিত কয়লা শুধুই শোবিজ। জৈব সার দিয়ে ফসল উৎপাদনের সেই পুষ্টি মাটিও গিলে খাচ্ছে ইটভাটা। পুড়ছে জীব-বৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর বদলে যাচ্ছে জলবায়ু। কৃষি বিভাগের অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে এসব ভাটা। এ উপজেলায়

অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবুল হাসেমের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে অনুমোদনবিহীন তানিয়া ব্রিকস ফিল্ডের চিমনি ও ভাটা গুড়িয়ে দেয়া হয়। তারা ব্রিকসের একাংশ ভেঙ্গে দেয়া হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে। ব্রিক ফিল্ডের চিমনি ও পুরো ভাটা অবশিষ্ট অংশও সরিয়ে নেয়ার আদেশ তিনি। এ ঘটনা ঘটে ২০১৯সালের ২৫ নভেম্বর। অথচ এ দু’ভাটায়ও তৈরি হচ্ছে ইট। নিষিদ্ধ ঘোষিত ও গুড়িয়ে দেয়া ইটভাটা প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক নূর আলম জানান, আবারও ইট তৈরি ও পুড়ানোর খবর তিনি জানেন না। নিষেধ অমান্য করে গর্হিত অপরাধ করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, গুড়িয়ে দেয়া আর নিষিদ্ধ করা একটি আইওয়াশ কর্মসূচী।

এদিকে বোকাইনগর ইউনিয়নের দারিয়াপুর গ্রামে তানিয়া ব্রিকসের কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে চারপাশের বৃক্ষরাজি। একপাশে চলছে বোরো মৌসুমের ধান রোপন, অন্যপ্রান্তে চলছে ইট তৈরি ও পুড়ানো। ফসলি জমিতে ইটভাটা নিষিদ্ধ হলেও এ নিষেধাজ্ঞা কাগুজে সীমাবদ্ধ থাকছে! নিষিদ্ধকরণ প্রসঙ্গে তানিয়া ব্রিকসের ম্যানেজার মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান, সব মিটমাট হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসক ও পরিবেশের ছাড়পত্র প্রসঙ্গে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান; এটা মালিক জানেন। ইটভাটার মালিক মোঃ কামাল উদ্দিন লিটন বলেন, ইটভাটা সমিতির মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

অপরদিকে গৌরীপুর-বেখৈরহাটি সড়কের দারিয়াপুরে এমটিবি ব্রিকস, বোকাইনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ হাবিব উল্লাহ হাবিবের এসএইচবি ব্রিকস ও কামাল উদ্দিন লিটনের মেসার্স তানিয়া ব্রিকসে প্রকাশ্যে চলছে কাঠ জ্বালানোর মহোৎসব। প্রতিটি ইটভাটায় বন-জঙ্গল উজাড় করে কেটে এখানে লাকড়ির পাহাড় তৈরি করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করেই চলছে মো. জাইদুল ইসলামের জননী বিকস, বলুহায় মোঃ সাইফুল ইসলামের মেসার্স এসএম (সিমি) ব্রিকস, শিবপুরে মোঃ শামছুল ইসলাম ভূঞার সামছু ব্রিকস, বলুহায় মোঃ সাফায়েত হোসেন ভূঞার শাফায়েত ব্রিকস, রামগোপালপুরে মোঃ মোবারক হোসেন বাবুল ও মোঃ গিয়াস উদ্দিনের এজিএম ব্রিকস, গুজিখাঁয় আব্দুল জলিল ভূইয়ার বিসমিল্লাহ ব্রিক ফিল্ড, মোঃ গনি মিয়ার চাচা-ভাতিজা, রসুলপুরে মোসলেম উদ্দিনের মেসার্স আয়েশা ব্রিকস, দারিয়াপুরে মুজাহিদুল ইসলাম বাবুলের মেসার্স শাপলা ব্রিকস, ডৌহাখলায় জেবিআর ব্রিকস, গৌরীপুরে আলহাজ্ব মোঃ ফারুকুল ইসলাম রতনের এস ইসলাম এন্ড কোম্পানীসহ ১৬টি ইটভাটা চালু রয়েছে।
ইট পোড়ানোর আইন ২০১৩ অনুযায়ী কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। কাগজে এ আইনের বাস্তবায়ন নেই ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। এ আইন লঙ্ঘন করে কৃষি জমিতে ইটভাটা করার একের পর এক অনুমতি দিচ্ছে কৃষি অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তর। শুধু তাই নয়, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ৮ধারায় বলা আছে- কৃষি জমি, আবাসিক এলাকা, সরকারি বা ব্যক্তিগত বন, অভয়ারণ্য, বাগান, জলাভূমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। আাবাসিক, ফলের বাগান, ত্রিফসলী জমিতে স্থাপন হচ্ছে ইটভাটা। আবার ৮এর ২ ধারায় বলা আছে- নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার মধ্যে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ অনুমতি বা ছাড়পত্র কিংবা লাইসেন্স প্রদান করতে পারবে না। এ ধারা এখানে অধরা! এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক নূর আলম জানান, অবৈধ ও ছাড়পত্রবিহীন ইটভাটা বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইটেরভাটার কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে লাখো ফলজ, বনজ, ঔষধী বৃক্ষারাজির সবুজ অরণ্য। ইটভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ৫০টি বৃক্ষ বা ৫০টি পরিবার বসবাস করে এমন এলাকা থেকে ৩কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর, কৃষি বিভাগ আর বন বিভাগ আইন বাস্তবায়নে উদাসীন। অভিযোগ রয়েছে, এ দপ্তরে অর্থের বিনিমিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেঁজুতি ধর জানান, কাঠপোড়ানো হলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টি.কে ওয়েভ-ইন