আজ শনিবার ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:
আহত সাংবাদিক রফিক বিশ্বাসকে দেখতে গেলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান -এড,ফজলুল হক গৌরীপুরে কাউন্সিলর পদে আইনী লড়াইয়ে বিজয়ী হলেন এসএম আলী আহাম্মদ! ঈশ্বরগঞ্জে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী তারাকান্দায় পানিসম্পদ সেবা সপ্তাহের উদ্ভোধন তারাকান্দায় ৬ মাসে সড়কে ঝরল ১৮ প্রাণ ঈশ্বরগঞ্জে গাছের ডাল কাটাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১ তারাকান্দায় প্রেসক্লাবের সভাপতি রফিক বিশ্বাসকে হাসপাতালে দেখতে গেলেন ফুলপুর প্রেসক্লাব সভাপতি গৌরীপুরে পহেলা বৈশাখে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক উৎসব গৌরীপুরে স্বজন সমাবেশের উদ্যোগে বর্ষবরণ উৎসব মানবিক চিকিৎসক সোহানুর রহমান সোহান
||
  • প্রকাশিত সময় : ডিসেম্বর, ৩, ২০২০, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ




তিন সংকটে আটকা বিনামূল্যের পাঠ্যবই

বাহাদুর ডেস্ক :

তিন সংকটে আটকে যাচ্ছে বিনামূল্যের পাঠ্যবই। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাগজ ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বই মুদ্রণের ছাড়পত্র। ছাপা হওয়ার পরে বই সরবরাহের অনুমতি পেতে পার হতে হচ্ছে দীর্ঘ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।

এছাড়া কভারের ভেতরের অংশে জাতীয় ব্যক্তিত্বদের ছবি সংযুক্ত করায় মুদ্রণ প্রক্রিয়ায় নেমে এসেছে ধীরগতি। সব মিলে এবারের পাঠ্যবই মুদ্রণ ভয়ানকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এসব কারণে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এবার সর্বসাকুল্যে ৬০ শতাংশের মতো পৌঁছাতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ ও খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিতরণের জন্য এ বছরের সর্বমোট সাড়ে ৩৪ কোটি বই মুদ্রণ করছে সরকার। এর মধ্যে মাধ্যমিকের বই প্রায় ২৪ কোটি ৩৪ লাখ। বাকিটা প্রাথমিক স্তরের। বুধবার পর্যন্ত উভয় স্তরের মাত্র ২৪ শতাংশ বই পাঠানো সম্ভব হয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

যার মধ্যে প্রাথমিকের আছে ৫ কোটি ৫৫ লাখ। আর মাধ্যমিকের আছে ২ কোটি ৬৯ লাখ ৭৮ হাজার। এই হিসাবে প্রাথমিকের অর্ধেক আর মাধ্যমিকের মাত্র ১১ শতাংশ পাঠানো হয়েছে। অথচ শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে আছে আর মাত্র ২৮ দিন।

পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান  জানান, বই মুদ্রণের এই দুরবস্থার মূল কারণ তিনটি। এগুলো হচ্ছে- কাগজ, অনুমোদন আর নতুন পদ্ধতির কভার।

কাগজের ক্ষেত্রে দু’ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে। একটি হচ্ছে, পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান; আরেকটি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পরিদর্শক দল।

আমাদের সদস্যরা অভিযোগ করছেন যে, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাগজ না পেলে সংশ্লিষ্টরা অনুমোদন দিচ্ছেন না। এনসিটিবির তদন্ত দল হাতে ধরে কাগজের মান ভালো-মন্দ বলে মন্তব্য করছেন।

এই দুই ঘটনাই রহস্যজনক। এর নেপথ্যে কী আছে সেটা এনসিটিবি এবং গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে আসতে পারে।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছর পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান বই মুদ্রণ শেষে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে যাচাই করে বই মাঠপর্যায়ে পাঠানোর অনুমতি দিত।

কিন্তু এবার প্রত্যেকটি বই এনসিটিবির সম্পাদনা শাখা থেকেও আলাদা ছাড়পত্র লাগছে। এতে সৃষ্ট আমলান্ত্রিক জটিলতায় অনুমোদন পেতে বিলম্ব হচ্ছে।

অপর দিকটি হচ্ছে, এবার মাধ্যমিকের কভারের ভেতরে দুই পৃষ্ঠায় জাতীয় ব্যক্তিত্বদের ছবি যাচ্ছে। স্পর্শকাতর হওয়ায় এটা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ছাপতে হচ্ছে।

কেননা, ছবি নিয়ে কোনো ধরনের আপত্তি উঠলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিপাকে পড়তে পারে। এ কারণে আগের চেয়ে দ্বিগুণ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনগুণ সময় লাগছে কভার ছাপতে।

মুদ্রাকরদের অভিযোগ, সবচেয়ে বেশি সংকট মাধ্যমিকের বই নিয়ে। এই স্তরের বইয়ের দরপত্রের মূল প্রকৃতি দু’টি। একটি হচ্ছে, সাড়ে ৫ কোটি বইয়ের কাগজ এনসিটিবি সরবরাহ করেছে।

এই বই নিয়ে সংকট কেবল কভার পাতা। এতে জাতীয় ব্যক্তিত্বদের ছবি থাকায় ধীরগতিতে ছাপতে হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এসব বইয়ের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ছাপা কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

কিন্তু মূল সঙ্কট তৈরি হয়েছে মাধ্যমিকের বাকি পৌনে ১৯ কোটি বই নিয়ে। মুদ্রাকররা বাজার থেকে কাগজ কিনে এসব বই ছেপে থাকেন। তাদের আরও অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান পদে পদে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।

বিশেষ করে নির্দিষ্ট কয়েকটি মিলের কাগজ না কিনলে বই মুদ্রণের ছাড়পত্র মিলছে না। কাগজ পরীক্ষায় বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ওপর নেতিবাচক মন্তব্য করছে।

এই প্রক্রিয়ায় কাজ করা ৫০টির মধ্যে অন্তত ৩৫টি প্রতিষ্ঠানের কাগজেই নেতিবাচক মন্তব্য দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অন্তত আড়াই হাজার মেট্রিক টন কাগজ বাতিল করা হয়েছে।

আর একবার কোনো প্রতিষ্ঠানের কাগজ পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান বা এনসিটিবির পরিদর্শক দল কর্তৃক বাতিল হলে অন্তত ৭ দিন পিছিয়ে যায় ছাপার কাজ।

মুদ্রাকরদের দাবি, কাগজ পরীক্ষার প্রক্রিয়াও প্রশ্নবিদ্ধ। যে প্রতিষ্ঠান মান যাচাইয়ের কাজ পেয়েছে সেটির মেশিন মানসম্মত নয়।

সায়েন্স ল্যাবরেটরি বা অন্যত্র কাগজের পরীক্ষা করে তারা যে ফল পান তা পরিদর্শন প্রতিষ্ঠানটির পরীক্ষায় ভিন্ন হয়।

আবার এনসিটিবি যে মানের (জিএসএম) কাগজ দিতে বলেছে সেটার থেকে ২ শতাংশ কম-বেশি গ্রহণযোগ্য হিসেবে দরপত্রেই উল্লেখ আছে।

কিন্তু এর চেয়ে দশমিক ১-২ শতাংশ কম হলেও কাগজ বাতিল করে দেয়া হচ্ছে। এর নেপথ্যে নির্দিষ্ট মিলের সঙ্গে তার যোগসাজশের বিষয় খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন মুদ্রাকররা।

নাম প্রকাশ না করে একাধিক মুদ্রাকর অভিযোগ করেন, মাধ্যমিকের বইয়ের মান যাচাইয়ের কাজ পেয়েছে ইনডিপেনডেন্ট ইন্সপেকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

নবীন এই প্রতিষ্ঠানটির এনসিটিবির এতসংখ্যক বইয়ের কাজের অভিজ্ঞতা নেই। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আরেকটি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে চাকরি করতেন।

অথচ ওই ব্যক্তি উত্তরার মতো এলাকায় কীভাবে বাড়ি করেছেন সেটা বড় প্রশ্ন। এছাড়া মতিঝিলের মতো এলাকায় বিলাসবহুল অফিস খুলে বসেছেন। এত অর্থসম্পত্তির উৎস খুঁজে দেখার জন্য মুদ্রাকররা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান।

এ প্রসঙ্গে ইনডিপেনডেন্ট ইন্সপেকশনের স্বত্বাধিকারী বেলাল হোসেন বলেন, দরপত্রে বর্ণিত এখতিয়ার অনুযায়ী কাগজ পরীক্ষার কাজ করছেন তিনি।

তার প্রতিষ্ঠান জানতে চায় না কোন মিলের কাগজ কেনা হয়েছে। পরীক্ষায় যা আসছে সেই রিপোর্টই তিনি দিচ্ছেন। নিজের প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরিতে যুক্ত নতুন মেশিনে নিযুক্ত বিশেষজ্ঞরা যথানিয়মে পরীক্ষার কাজ করেন।

কেউ তার ব্যক্তিগত শত্রু নয়। তাই মুখ দেখে কারও কাগজের ছাড়পত্র দেয়া আর কাউকে না দেয়ার প্রশ্নই আসে না। বরং এনসিটিবির অন্য কোনো পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান এমন কাজ করছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা যেতে পারে।

বাজারে মানসম্মত কাগজের অভাব নেই। মুদ্রাকররা কম দামি কাগজ কেনেন বলেই পরীক্ষা উৎরাতে পারছেন না। তিনি বলেন, উত্তরার উত্তরখানে বাড়ির মালিক তিনি একা নন।

কয়েকজন মিলে গড়েছেন। আর পরিদর্শন প্রতিষ্ঠানটি তার পারিবারিক ব্যবসা। তিনি চাকরি করার সময়ই এটি প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানিয়েছেন।

আটটি মানদণ্ড পরীক্ষা শেষে কাগজ ছাড়পত্র পায়। এগুলো হচ্ছে, জিএসএম (কাগজের পুরত্ব), উজ্জ্বলতা, বার্স্টিং (কতটুকু টানে ছেঁড়ে) শক্তি, পাল্প (কাগজের কাঁচামাল), সাইজিং (ছাপানোর পর কালি লেপ্টে যায় কিনা), বাল্ক (পুরত্ব ও ওজনের সমন্বয়), আর্দ্রতা এবং অপাসিটি (ছাপানোর পর কালি অপর পাশে দেখা যায় কিনা)। তবে প্রথম তিনটিতে কাগজ কাক্সিক্ষত শর্ত পূরণ করছে না বলে প্রতিবেদন আসছে বেশি।

মুদ্রাকরদের নেতা তোফায়েল খান বলেন, বাজারে কাগজ সংকটের ব্যাপারে তারা বুধবার এনবিআরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

সংকট মেটাতে এই মুহূর্তে বিনা শুল্কে কাগজ আমদানির অনুমতি দরকার। আইনি দিক যাচাই এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ শেষে তিনি আমাদেরকে বার্তা জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন।

এখন কাগজ ও বইয়ের ছাড়পত্রের ব্যাপারে আমরা এনসিটিবির সঙ্গে দু’একদিনে বৈঠক করব। কারও লোভের কারণে যেন কোমলমতি শিশুদের বই বিঘ্নিত না হয় সেটা অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। সংস্থার সদস্য (প্রাথমিক) অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, প্রাথমিক স্তরের বইয়ের কাজ ভালোই চলছে।

কিন্তু কাগজ সংক্রান্ত জটিলতায় আশানুরূপ এগুতে পারছি না। তবে মুদ্রাকরদের অনুরোধ করেছি, দরপত্র অনুয়াী তারা যে সময়ই পান না কেন, যেন ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করে দেন।

আর বইয়ের তদারকির মূল দায়িত্ব পালনকারী সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, বইয়ের কাগজের ব্যাপারে মুদ্রাকররা মৌখিকভাবে বিভিন্ন কথা বলে গেছেন।

কিন্তু কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে মৌখিক হলেও বইয়ের স্বার্থে আমরা অভিযোগ খতিয়ে দেখব।

টি.কে ওয়েভ-ইন




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০