শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪ -|- ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০-বসন্তকাল -|- ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

তিনি আমাদের রাখাল রাজা

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ৭ মার্চ, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : মার্চ, ৭, ২০২০, ২:২৪ অপরাহ্ণ

বাহাদুর ডেস্ক :

আজ এক রাজার গল্প শোনাব। রূপকথার রাজা নয়, নয় কোনো সম্রাট অথবা শাহেনশাহ। তিনি আমাদের এই পাললিক ভূমির এক নান্দনিক রাখাল রাজা। ভালোবাসার রাজত্বে যিনি একচ্ছত্র সম্রাট। যে রাজার কণ্ঠে আমরা শুনেছি পাললিক গন্ধে ভরা গণমানুষের গান। যে গান শুনে আমরা উদ্বেলিত হয়েছি, হয়েছি মোহিত। অর্জন করেছি বিদ্রোহ করার মতো যোগ্যতা। আর সেই যোগ্যতার ওপরে দাঁড়িয়ে ছিনিয়ে এনেছি আমাদের স্বাধীনতা। একটি গান যে কতটা শক্তি রাখে, সে গান না শুনলে তা বোঝা দায় হয়ে ওঠে।

৭ মার্চ ১৯৭১, রেসকোর্স ময়দানে আমরা সে গান শুনেছিলাম। আমরা তো বটেই, গোটা পাললিক ভূমির প্রত্যেকটি মানুষের হৃদয়ে প্রথিত হয়েছিল সেই সুর, সেই বাণী ও কণ্ঠস্বর। আর সে কারণেই আমরা পেয়েছি একটি রাষ্ট্র, পতাকা এবং স্বাধীনতা। আমরা সেই রাখাল রাজার কথা বলছি, যিনি আমাদের বন্ধু। তার সম্পর্কে ১৯৬৯ সালের ৭ নভেম্বর পাকিস্তানে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মুজিব প্রকৃতপক্ষেই পূর্ব পাকিস্তানের মুকুটহীন সম্রাট’।

এ দেশের প্রায় প্রত্যেকটি মানুষই মনে করে, বাঙালির মুক্তি ও বঙ্গ রাজনীতিতে তিনি একজন পরিশুদ্ধ মানুষ। তাকে রাজনীতির কবি বলা হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে আন্দোলন, মুক্তি, মানবতা, শান্তি, সংগ্রাম, স্বাধীনতা, স্বাধিকার, সর্বোপরি রাজনীতির এক মহাকবি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন আমাদের রাখাল রাজা— বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

৭ মার্চ ১৯৭১, রেসকোর্স ময়দানে তিনি যে ঐতিহাসিক, অবিস্মরণীয় ভাষণের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতা শব্দটি পেয়ে যায় তার নিজস্বতা। বাঙালি পায় তার যুদ্ধে যাওয়ার পূর্ণাঙ্গ শক্তি। এই ভাষণই বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পরবর্তী সময়ে পাক বাহিনীর এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চতুর মুজিব আমাদের সামনে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেলেন, আমরা কিছুই করতে পারলাম না।’

আসলে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে যে রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করেছিলেন, তাতে ক্ষমতাসীন পাক পশ্চিমা শক্তি শুধু মাথার ওপর অস্ত্র তাক করে মহড়াই দিয়ে গেল, প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ পেল না। সবকিছুই যেন ভেসে গেল ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ কেবল দেশেই নয়, বৈশ্বিক পরিমন্ডলেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। তার কাব্যিক বক্তব্যে তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বাঙালিকে যুদ্ধে নামার সব প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনাসহ আগামী দিনের যে স্বপ্ন দেখান, তাতে তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রমাণ হিসেবে আজ ইতিহাসের পাতায় উঠে এসেছে। তিনি ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার কথা বলেছেন। বলেছেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণকে তাই ‘বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকো। ফলে সেই ভাষণ ইউনেসকোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার গৌরব অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

আজ বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণের মধ্যে অন্যতম একটি ভাষণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আমরা আমাদের রাখাল রাজার কাছে অনেক কিছুই পেয়েছি। তবে এই পাওয়ার একটির সঙ্গে অন্য কোনোটির তুলনা চলে না। আর সেটি হচ্ছে ৭ মার্চ ১৯৭১, রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ঐতিহাসিক সেই ভাষণ, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

টি.কে ওয়েভ-ইন