আওলাদ হোসেন জসীম :
“তিথি”, আমি কাঁদতে চাইনি -তবু কেঁদেছি।
তোর অকাল মৃত্যুর প্রতিবাদ করতে জ্বলে উঠতে চেয়েছিলাম।
পারিনি।
চেয়েছিলাম ঘাতক ট্রাকের বুকে লাথি মারি
যে ট্রাকের চাকায় তুই পিষ্ট হয়েছিস
সেই ঘাতকের বুক চেপে ধরি চাকার তলায়।
পারিনি।
আমি কাঁদতে চাইনি, তবু কেঁদেছি।
মিছিলের অগ্রভাগে ছবি তুলতে তুলতে
সাংবাদিক রইছ’কে কাঁদতে দেখেছি
তোর প্রিয় বান্ধবীরা কেঁদেছে
প্রিয় শিক্ষক কেঁদেছে।
তোর অকাল মৃত্যুর কথা বলতে বলতে
পথচারী কেঁদেছে।
তোর প্রিয় বিদ্যাপীঠ নীরবে রোদন করেছে।
ঘন কুয়াশায় ভেজা ধুলোয় তোর টুকরো টুকরো শরীর
লাল রক্ত। ভাঙ্গা হাড়। কালো পথটা ভিজে গেলো।
স্কুল ব্যাগটা তখনো তোর কাঁধে।
মায়ের হাতে বিনুনি করে দেয়া মাথার চুল লুটাচ্ছে ধুলোয়।
বই,খাতা,একটা কলম তোর পাশে লাশ হয়ে পড়ে ছিলো।
মেধার শবদেহ। এই দেশে যেমন লুটায় প্রতিদিন।
মাঘের কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের চোখ
তখনো পৃথিবী দেখেনি। কাক ডাকা ভোর তখন।
” মা,আমি যাই”- বলে বের হলি ঘর থেকে
তারপর আর ফিরলি না। মা তোর অপেক্ষায় ছিলো।
তোর মা বুঝি কান্নার প্রতীক্ষায় ছিলো!!
কাঁন্না থামাতে পারেনি কেউই।
আচ্ছা তিথি, তুই কি বলতে পারিস
আমরা এতো কাঁদলাম কেনো???
এ কান্নার মানে কি শুধুই তোর প্রতি ভালোবাসা?
তোকে এমন অকালে হারানোর যন্ত্রনা শুধু?
নাকি তোর ঘাতকের বিচারটুকুও পাবো না বলে
খুব অসহায়ের মতো কেঁদেছি!!
আমাদের সমস্ত ক্ষোভ, সব যন্ত্রণা অক্ষম হয়ে
তোর ভালোবাসার সাথে মিশে রোদন করেছে!!
“তিথি”, আমি কাঁদতে চাইনি
জ্বলে উঠতে চেয়েছিলাম।
আমরা কেউই কাঁদতে চাইনি
আমরা সবাই জ্বলে উঠতে চেয়েছিলাম।
পারিনি।
অক্ষমেরা শুধু কাঁদে। আমাদের মতো কাঁদে।
তোর মতো মেধাবীরা হারিয়ে যায়।
আর আমরা শুধু কাঁদতে থাকি। কাঁদতে থাকি।
(মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী ” তিথি”র মৃত্যুতে,,,,,