আজ শুক্রবার ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাহাদুর ডেস্ক || ওয়েব ইনচার্জ
  • প্রকাশিত সময় : এপ্রিল, ১, ২০২৩, ১২:২৬ অপরাহ্ণ




তারাবিহ পড়ে প্রশান্ত হয় মুমিনের হৃদয়

পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা দিনে রোজা রেখে ও রাতে এশার সালাতের পর দীর্ঘক্ষণ তারাবিহর নামাজের কষ্ট আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেন। সারা দিনের ক্লান্তি উপেক্ষা করে দীর্ঘ সময়ের এ সালাতে নিমগ্ন থাকা আল্লাহতায়ালার প্রতি একান্ত আত্মনিবেদন ও তার পাক কালামের প্রতি অনুরাগের প্রমাণ।

তা ছাড়া প্রতিদিন এশার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে যখন আল্লাহর পবিত্র বাণীর তেলাওয়াত চলতে থাকে, তখন পুরো পরিবেশে বিরাজ করে অনুপম আবহ। কুরআন মাজিদের তেলাওয়াতে বেহেশতি সুর মূর্ছনায় মুগ্ধ হন মুসল্লিরা।

জামাতের সঙ্গে সালাতুত তারাবিহর বর্তমান নিয়মটি চালু হয়েছে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুকের (রা.) সময় থেকে। এর আগে অর্থাৎ রাসূলে পাক (সা.) ও হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) এর সময়ে, এমনকি হজরত ওমর ফারুকের (রা.) খেলাফতকালের প্রথম ভাগেও মুসলমানরা রমজানের রাতগুলোতে এশার নামাজের পর অতিরিক্ত যে সালাত আদায় করতেন, তা একাকী করতেন। এজন্য জামাত বা সম্মিলিত রূপের আয়োজন ছিল না।

তবে নবি করিম (সা.) রমজানে কিয়ামুল লাইল বা রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগির বিশেষ উৎসাহ দিয়েছেন এবং এজন্য অশেষ পুরস্কারের সুসংবাদ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত একটি হাদিস উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) রমজানের রাতগুলোতে ইবাদত করার জন্য আমাদের উৎসাহ দিতেন। কিন্তু জোরালো আদেশ দিতেন না। তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি রমজানে ইমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে কিয়াম করবে, তার ইতঃপূর্বেকার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। এভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাতের ইবাদত করার নিয়ম চালু ছিল তার জীবদ্দশায়। হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.)-এর সময়ে একই নিয়ম চালু ছিল। এটিই বহাল ছিল হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর খেলাফতকালের প্রথম ভাগেও। (বুখারি শরিফ)

হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর সময়ে জামাতের সঙ্গে সালাতুত তারাবিহ চালু হওয়া সম্পর্কে একটি সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন আবদুর রহমান ইবনে সায়েব ইবনে আবদুল কারি নামে এক তাবেয়ি। তিনি বলেন, রমজানের এক রাতে হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর সঙ্গে আমি মসজিদে নববিতে গেলাম। দেখলাম লোকজন বিক্ষিপ্তভাবে ইবাদত করছে। কেউ একাকী, আবার কারও সঙ্গে কয়েকজন যোগ দিয়ে নফল নামাজ আদায় করছেন। হজরত ওমর (রা.) বললেন, এদের সবাইকে একজন তেলাওয়াতকারীর পেছনে একত্র করে দিলে ভালো হতো। পরে হজরত উবাই ইবনে কা’বকে ইমাম নিযুক্ত করা হয়। কেননা হজরত উবাই (রা.) ছিলেন সাহাবিদের মধ্যে সবচেয়ে শুদ্ধ ও মধুর কণ্ঠে কুরআন মাজিদ তেলাওয়াতকারী। এরপর একদিন আবারও বের হলেন হজরত ওমর (রা.)। বর্ণনাকারী আবদুর রহমান বলেন, হজরত উবাই (রা.)-এর ইমামতিতে তখন এ নামাজ চলছে। পরিবেশটি দেখে হজরত ওমর মুগ্ধ হলেন এবং বললেন, চমৎকার আবিষ্কার এটি।

তবে তিনি একই সঙ্গে একটি মন্তব্যও করলেন। বললেন, তোমাদের ঘুমের সময়টা তোমাদের জেগে থাকার সময় থেকে ভালো অর্থাৎ হজরত ওমর (রা.)-এর ব্যক্তিগত পছন্দ ছিল লোকজন প্রথম রাতে এশার নামাজের পরই ঘুমিয়ে পড়ুক আর মধ্যরাতের পর ইবাদতে মশগুল হোক। কিন্তু তা সাধারণভাবে কষ্টের কাজ। লোকজন এমনটি অভ্যাস করতে পারবে বলে তিনি মনে করলেন না। বিশেষ করে সাহাবায়ে কেরামের যুগেই যখন ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটছিল, তখন নতুন মুসলমানদের পক্ষে এমন কষ্ট সহ্য করা সহজ হবে না বলে মনে করলেন ইসলামের খলিফা। তা ছাড়া একাকী দীর্ঘক্ষণ সালাত আদায় করার চেয়ে জামাতের সঙ্গে আদায় করা কম কষ্টকর। তেমনি কুরআন মাজিদের বড় বড় সুরা সবার মুখস্থ থাকে না। এসব দিক বিবেচনা করে সবার জন্য যা সহজ হয় তারই ব্যবস্থা করলেন তিনি।

এমন একটি বর্ণনাও পাওয়া যায়, হজরত আলী (রা.) এদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন হজরত ওমর (রা.)-এর। এভাবে যে নামাজ চালু হয় তা তারাবিহ নামে আখ্যায়িত হওয়ার কারণ মাঝখানের বিরতিগুলো। ২০ রাকাত নামাজ আদায় করতে গিয়ে প্রতি চার রাকাতের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার রীতি ছিল। কেননা এ সালাত আদায় করা হয় দীর্ঘ সময় ধরে। আরবি তারবিহ অর্থ বিশ্রাম। আর তারবিহ শব্দের বহুবচন তারাবিহ।

সালাতুত তারাবিহ জামাতের সঙ্গে আদায়ের আয়োজন থাকায় অনেক মানুষ একই সঙ্গে কুরআন মাজিদ শুনতে শুনতে দীর্ঘ সময় ধরে নফল নামাজ আদায় করতে পারেন। তেমনি সম্মিলিত আকারে আদায়ের কারণে রোজাদার মুসলমানদের মধ্যে গড়ে উঠতে পারে ঐক্য ও সম্প্রীতির আরও দৃঢ় বন্ধন। এজন্য হজরত ওমর (রা.) এর সময় থেকে এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে রমজানুল মুবারকে সিয়াম সাধনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে গেছে তারাবিহ সালাতের জামাত। শহর এলাকার বেশির ভাগ মসজিদে খতম তারাবিহ হয়ে থাকে। ফলে যারা নিয়মিত তারাবিহ নামাজে অংশ নেন, তাদের পক্ষে পুরো কুরআন মাজিদ একবার শোনার সুযোগ হয়। অতএব বিশেষ কোনো অসুবিধা না থাকলে রমজান মাসে সিয়াম পালনের পাশাপাশি সালাতুত তারাবিহ নিয়মিত আদায়ে সচেষ্ট থাকা উচিত।

লেখক : ইমাম, দারোগা আমীর উদ্দিন ঘাট মসজিদ, বাবুবাজার, ঢাকা




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০