আজ শুক্রবার ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

||
  • প্রকাশিত সময় : আগস্ট, ১৪, ২০২০, ৯:৩০ অপরাহ্ণ




জাতির জনক হত্যার প্রতিবাদে যাবজ্জীবন সাজা ভোগকারী মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎ কুমার নন্দী সন্মানী ভাতা ছাড়া কিছুই পায়নি

এম এ আজিজ, স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎ কুমার নন্দী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হন। এ সময় ৫ বীর মুক্তিযোদ্ধা গুরিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎ নন্দীকে ১১৫দিন সেনা হেফাজতে অত্যাচার, নির্যতন, নিপীড়ন শেষে একই বছরের ৬ ডিসেম্বর কারাগারে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঢাকার ২ নম্বর সামরিক (মার্শাল কোর্ট) আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎ কুমার নন্দীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
মৃত্যুদন্ডের রায়ে বিশ্বজিৎ নন্দীর মুক্তির আন্দোলন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির সরাসরি হস্তক্ষেপে সেনা সরকার বিশ্বজিতের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। যাবজ্জীবন (১৪বছর) কারাভোগের পর প্রতিবাদকারী মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎ নন্দী ১৯৮৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগার থেকে মুক্তি পান। যাবজ্জীবন সাজা ভোগকারী মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎত নন্দী কারাভোগের ৪৪ বছর অতিবাহিত হলেও মুক্তিযোদ্ধা সন্মানী ভাতা ছাড়া সরকারের কাছ থেকে আজ পর্যন্ত কোন স্বীকৃতি পায়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী যাবজ্জীবন কারাভোগকারী মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎ নন্দীর পরিবার থাকার জন্য একটি বাড়ি এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পূর্ণবাসনের জন্য তার গর্ভধারিনী মাতা শুভাষিনী নন্দী প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও লাল সবুজের পতাকা যারা মেনে নিতে পারেনি সেই সব পরাজিত শুক্ররা ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট রাতের আধারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে। সন্তানের সামনে পিতাকে হত্যা করলে সন্তানের যেমন লাগে, তেমনি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎ নন্দীর মনে লেগেছিল। বাঙ্গালি জাতিকে ইতিহাসের দায়মুক্তি এবং কলংক মুক্তির লক্ষে মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তম বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার প্রতিশোধ নিতে ১৯৭৬ সালে বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যু বাষির্কীতে দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়। হরতাল সফল করতে এবং মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে মহান মুক্তিযুদ্ধের মত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর আহবানে সাড়া দিয়ে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের মুক্তাগাছার বানার ব্রীজটি ৬ মুক্তিযোদ্ধা বন্ধু ১৩ আগষ্ট ভেঙ্গে উড়িয়ে দিয়ে রাতে উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়ের মহিষ তারা গ্রামে মকবুল চেয়ারম্যানের বাড়িতে আশ্রয় নেন।
সেই গ্রামের এক বিডিআর সদস্য সেনাবাহিনীকে খবর দেয়। সেনাবাহিনী বাড়িটি ঘিরে তাদেরকে আর্ত্মসমপর্ণের আহবান করে। আর্ত্মসর্মপনের প্রস্তাব নাকচ করলে সেনাবাহিনীর সাথে সাড়ে আট ঘন্টা যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধকালীন কোম্পানী কমান্ডার জবেদ আলী মুক্তিযোদ্ধা নিখিল দত্ত, সুবোধ ধর, দিপাল দাস ও মফিজ উদ্দিন শহীদ হন এবং মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎ নন্দী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন ।

সেনাবাহিনী হেফাজতে ১১৫দিনের অত্যাচার, নির্যতনা নিপীড়নের কথা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের রনাঙ্গনের সাহসী সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার প্রতিবাদকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎ নন্দী বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, ভালবাসার তাগিদে জাতির প্রতি দায়িত্ব কর্তব্যবোধের তাড়নায় বাঙ্গালি জাতিকে ইতিহাসের দায়মুক্তি দেয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে অত্যাচার, নির্যাতন ও কারাভোগ করেছি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎ কুমার নন্দীর বড় ভাই বীরমুক্তিযোদ্ধা সুজিত কুমার নন্দী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে দুই ভাই এক সাথে ভারতে প্রশিক্ষন নিয়ে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছি। দেশ স্বাধীনের পর পরাজিত শুক্ররা মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে, সেই মহান নেতার হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে আমার ভাই সেনা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে, সামরিক জিয়া সরকারের আমলে মার্শাল কোর্টে আমার ভাইয়ের ফাসিঁর হুকুম হয়েছিল। ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির সরাসরি হস্তক্ষেপে আরেক সামরিক সরকার এরশাদ মৃত্যুদন্ড রহিত করে যাবজ্জীবন সাজা দেয়ায় বিশ্বজিৎ প্রাণে বেচে যান। এখন দুই ভাই এক সাথে আছি ভাল আছি। বিশ্বজিৎ নন্দীর চাচাতো ভাই নির্মল নন্দী বলেন, পরিবারের দুই মুক্তিযোদ্ধা সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সন্মানী ভাতা ছাড়া তাদের পরিবার কিছুই পায়নি। যাবজ্জীবন কারাভোগকারী এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সরকারীভাবে একটি বাড়ি করে দিয়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে পূর্ণবাসনের জন্য বিশ্বজিৎ নন্দীর দুই ভাই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ফাসিঁর কাষ্ট থেকে বেচেঁ যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎ কুমার নন্দীর গর্ভধারনী মাতা শুভাষিনী নন্দী বলেন, দেশকে স্বাধীন করতে আমার গর্বের ধন ২ ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করে দেশ স্বাধীন করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করায় পাকিস্তানীরা আমার বাড়ি পুড়ে দেয়। সেই পুড়া টিনের ঘরে এখনো বসবাস করছি,একটু বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে। অর্থের অভাবে ঘরটি মেরমত করতে পারছিনা। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি আরো বলেন, শেষ বেলায় সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি আমার ছেলেরা যাতে ভালভাবে বসবাস করতে পারে সেইজন্য সররকার একটি বাড়ি করে দিবেন ।
বিশ্বজিৎ কুমার নন্দী ও তার ভাই সুজিত নন্দী বড়মাপের মুক্তিযোদ্ধা উল্লে¬খ করে মুক্তাগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা সরকার বলেন, আমি তাদের বাড়িতে গিয়ে ছিলাম। বাড়ির অবস্থা বেশী ভাল না, তারা যাতে সরকার থেকে একটি বাড়ি পায় সেই ব্যবস্থা করা হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় যাবজ্জীবন সাজা ভোগকারী মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎ কুমার নন্দীর ব্যাপারে বিশেষ বরাদ্ধের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে সুপারিশ পাঠানোর দাবিও করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী মুক্তিযোদ্ধারা কোন সাহায্য সহযোগিতা চাননি, সরকারের কাছে তাদের দাবি, প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি এবং আগামী প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানার জন্য স্কুল-কলেজের পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভুক্তির জন্য যাবজ্জীন সাজাভোগকারী মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎ নন্দী সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০