বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

চারদিকে রঙিন বঙ্গবন্ধু’র প্রতিকৃতি মলিন!

প্রকাশিত হয়েছে- বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক || দৈনিক বাহাদুর
  • প্রকাশিত সময় : মার্চ, ১৭, ২০২২, ৭:৪৩ অপরাহ্ণ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মোৎস ও জাতীয় শিশু দিবস। দিবসটিকে পালন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা, আওয়ামী লীগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বর্ণিল কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। ভবনে ভবনে সন্ধ্যায় জ¦লছে রঙিন আলোক সজ্জার ঝিলিক। তবে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বঙ্গবন্ধু চত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনালী রঙের প্রতিকৃতি এখন মলিন! কালচে হয়ে গেছে, চত্বরে আবর্জনা, ধুলা-বালির কারণে খালি পায়ে বেধিতে উঠাও যেন অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
বুধবার (১৬মার্চ/২০২২) সরজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু চত্বরের চারদিকের স্টিলের সৌন্দর্য্যময় সীমানা গাইডলে ধুলোর আস্তরণ পড়েছে। বঙ্গবন্ধু’র সপরিবারের ছবিটি ময়লা-আবর্জনার কারণে বিবর্ণ রূপ ধারণ করেছে। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু ও জাতি চারনেতার প্রতিকৃতিতে ধুলাবালিতে কালচে ও মলিন হয়ে গেছে। সাত বীরশ্রেষ্ঠের ছবিতে মাকড়শার জালে ডেকে গেছে।
উপজেলা পরিষদের সামনে জোড়াপুকুরপাড়ে বঙ্গবন্ধু চত্বরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন প্রয়াত স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এমপি। তিনি নিজস্ব উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতার সোনালী প্রতিকৃতি, মৃৎকারুকার্য্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু’র সদস্যের পারিবারিক ছবি, ৬৯’র গণঅভ্যূত্থান, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের দৃর্শ্যপট তুলে ধরেন।
একই সাথে তিনি ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের কলতাপাড়ায় ৫৩ফুট উচ্চতায় ৭মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর এশিয়ার সর্ববৃহ’ ভাষ্কর্য্য নির্মাণেও উদ্যোগ নেন তিনি। প্রয়াত মুজিব বঙ্গবন্ধু’র ৯৭তম জন্মদিনে এ প্রতিনিধিকে বলেছিলেন, সহস্রযুগ ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের নিকট বাঙালী জাতির স্রষ্টা আর মুক্তিযুদ্ধের বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্যই এ উদ্যোগ নেন। তবে নিজস্ব উদ্যোগে সর্বোবৃহৎ ভাষ্কর্য্য ও বঙ্গবন্ধু চত্বর রক্ষায় ছিলো না ‘সুরক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ’ কমিটি। এ নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখেই তিনি না ফেরার দেশে চলে যান ২০১৬ সালের ২ মে।
উপজেলা পরিষদের জোড়া পুকুরপাড়ে বঙ্গবন্ধু চত্বরে চিত্রশিল্পী মৃণাল হক সোনালী রঙের পিতলে তৈরী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতিকৃতি ও দু’পাশে রয়েছেন জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতি। বঙ্গবন্ধুর বাম পাশে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী, ডানপাশে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও অর্থমন্ত্রী এম কামরুজ্জামান। একপাশে রয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলতুনন্নেছা মুজিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পুরো পরিবারের একটি মৃৎশিল্পে চিত্রায়নের পারিবারিক ছবি। এ ছবির কাজ করেন মৃৎশিল্পী মোহনগঞ্জের সুকেশ কুমার।
বঙ্গবন্ধু চত্বরে আরো রয়েছে পাথর কেটে কেটে তৈরি করা হয়েছে অপরূপ দৃষ্টির এ ছবিটি। অন্যপাশে চিত্রশিল্পী এম.এ মাসুদ পাথরে ফুটিয়ে তুলেছেন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, রুহুল আমিন, মুন্সী আব্দুর রব, সিপাহী হামিদুর রহমান, মোস্তফা কামাল, নুর মোহাম্মদ। তৈরি করা হয়েছে কর্ণেল তাহের’র প্রতিকৃতিও।
পামবীথি সড়কের প্রতিটি গাছের গোড়ায় চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিনের অমর সৃষ্টি চিত্রকর্মের চলছে সুসজ্জিকরণ কাজ অংকিত ছবি। রয়েছে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বিশিষ্টজনের প্রতিকৃতিও। আওয়ামী লীগকে স্থানীয়ভাবে সুসংগঠিত করতে যাঁরা অবদান রেখেছেন তাঁদেরও রয়েছে প্রতিকৃতি। চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেন বাহাদুর পাথর কেটে চত্বরটিকে আলপনা খুদাই করেন। প্রয়াত মুজিব পর্যটকদের নিকট দৃষ্টিনন্দন করতে বসা স্থান, ফ্যান, নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা নানা আয়োজন করেন। যা তাঁর মৃত্যুর পরেই আর নেই।
এ দিকে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের কলতাপাড়ায় বঙ্গবন্ধু’র ৭মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আদলে এশিয়ার সর্ববৃহৎ ভাষ্কর্য্য বঙ্গবন্ধু’র ছবি নির্মাণ করেন প্রয়াত ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিব। শিল্পী এম.এ মাসুদ জানান, ১৮ ফুট দৈর্ঘ্যে আর ৯ফুট উঁচু ভিতের উপরে রয়েছে ৪৪ ইঞ্চির দ্বিতীয় স্তর। এই দ্বিতীয় স্তরে বঙ্গবন্ধুর পা স্পর্শ করে উপরে তাকালে দেখা যায় এক আকাশচুম্বী বঙ্গবন্ধু। মনে হয়, এখানে দাঁড়িয়ে আজও বঙ্গবন্ধু বলছেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা। এ ভাষ্কর্য্যরে নিচে তাকালে দেখা যাবে উন্নয়নের মাতা শেখ হাসিনা ছবি গ্যালারী। যেখানে দুলর্ভ ১৪২টি ছবি স্থান পেয়েছে। মাতৃস্নেহে বঙ্গবন্ধু আর পিতৃস্নেহে শেখ হাসিনার ছবিও পর্যটকদের মন ভরে দিবে। পুরো পরিবারের ছবিটি দর্শককে নিয়ে যাবে ৭১’র পরবর্তী প্রতিটি ঘটনা প্রবাহে।
অপরূপ সৌন্দর্য্যরে পুরোধা সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চলে যাওয়ার সাথে সাথেই অবহেলা, অপরচ্ছিন্ন ও দেখভালের অভাবে বঙ্গবন্ধু’র ভাষ্কর্য্য ও বঙ্গবন্ধু চত্বরে ‘বঙ্গবন্ধু’র প্রতিকৃতিও ময়লাযুক্ত, বিবর্ণ ও কালচে রঙের হয়ে গেছে। পর্যটকরাও বিমুখ।