আজ বুধবার ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:
প্রধান প্রতিবেদক || দৈনিক বাহাদুর
  • প্রকাশিত সময় : নভেম্বর, ১, ২০২২, ৭:০৪ অপরাহ্ণ




গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রী (অনার্স) কলেজে অধ্যক্ষের চেয়ার ছাড়ছেন না আ’লীগ নেতা!

ময়মনসিংহের গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রী (অনার্স) কলেজে চাকুরির মেয়াদ শেষ হলেও অধ্যক্ষের চেয়ার ছাড়ছেন না উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন। মেয়াদ উর্ত্তীণ হওয়ার পরেও জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের পত্র গোপন করে বেতন উত্তোলন, কলেজে কর্মচারী নিয়োগ, একাধিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণসহ রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর/২০২২) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন নিজকক্ষে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে আছেন। পাশের একটি কক্ষে সাধারণ চেয়ারে বসে দায়িত্ব পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহমুদা ইয়াসমিন। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অধ্যক্ষের কক্ষে চলে আসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহমুদা ইয়াসমিন। তবে তখনও অধ্যক্ষের চেয়ার নিজের দখলেই রেখে ছিলেন আ’লীগ নেতা মো. রুহুল আমিন।

জানা যায়, কলেজের অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন এর চাকুরীর মেয়াদ ২০২১সনের ১৫ মে শেষ হয়। এ দিনে তার বয়স ৬০বছর পূর্ণ হয়েছে। কলেজের গভর্ণিং বডির সভাপতি ম. নূরুল ইসলাম বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১-এর ১১.১১ অনুযায়ী ও জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর ১৫নং বিধানমতে ২০২১সনের ২ মে তারিখে ২৫হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করে ২বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করেন। এ নিয়োগের প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেন এ অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন।

এ দিকে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর আদেশক্রমে কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত ২০২১সনের ১০অক্টোবর তারিখে পত্রাদেশ দেন। ওই পত্রে সাবেক অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন এর শিক্ষক হিসাবে চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদনটি বিবেচনার সুযোগ নেই মর্মে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কে অবহিত করা হয়। পত্রে উল্লেখ রয়েছে বেসরকারি শিক্ষকদের চাকুরী বিধি সংশোধিত রেগুলেশন ২০১৯ অনুযায়ী বিধি সম্মত হয়নি। এ পত্রের আদেশ গোপন করেই অধ্যক্ষ পদে বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন। অভিযোগ রয়েছে, মেয়াদ উর্ত্তীণ এ অধ্যক্ষের স্বাক্ষরে কর্মচারীদের নিয়োগও দেয়া হয়েছে। এছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (কলেজ-৩) তপন কুমার দাস জানান, সাবেক অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন এর চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন এখন পর্যন্ত মঞ্জুর হয়নি। এ প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, চাকুরীবিধি লঙ্ঘন করে একদিনও দায়িত্ব পালন, অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।

অপরদিকে এইচএসসির ৩৭৩জন পরীক্ষার্থীর টাকা কর্তনবিহীন ফেরতের দাবিতে ২০২১সনের ১৬জুন অবস্থান কর্মসূচী, বিক্ষোভ ও স্মারকলিপিসহ নানা আন্দোলন করতে হয়। এ সময় কলেজের সকল দুর্নীতি বন্ধের তারা দাবি জানান। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, দিচ্ছে ৪৮০টাকা আর স্বাক্ষর নিচ্ছেন ১হাজার ৬৫টাকার কলামে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান লিটা সে সময় সাংবাদিকদের জানান, স্বাক্ষর দিতে কেউ অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তাদের ধমক ও হুমকি দিয়ে স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে। ওই সময় ইউএনও হাসান মারুফ জানান, কলেজের অধ্যক্ষ তাকে জানিয়েছেন এ ফাÐের টাকা করোনাকালীন সময়ে অন্যখাতে খরচ হয়ে গেছে। আন্দোলকারীরা শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপিতে সে সময় উল্লেখ করেন দুই বছর অধ্যয়নকালে তাদের নিকট থেকে নানা অজুহাতে অতিরিক্ত অর্থ নেয়া হয়েছে। কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরী ফি, বার্ষিক ক্রীড়া ফি, মিলাদ ও পূজা ফিসহ নানা চাঁদা। এসব খাতে বছরের পর বছর চাঁদা দিয়েও তারা কোন সেবা পায়নি।
এ দিকে গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রী (অনার্স) কলেজে পাঠাগারের অর্থে নয়-ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। এ কলেজে ১হাজার ৭০৯জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। কলেজের হিসাব রক্ষক আশিকুর রহমান খান পাঠান জানান, প্রতিবছর প্রত্যেক ছাত্রীর নিকট থেকে পাঠাগারের নামে ১শ টাকা করে আদায় করা হয়। এ হিসাব অনুযায়ী বছরে পাঠাগার খাতে আসে ১লাখ ৭০হাজার ৬শ টাকা। তবে এ কলেজের প্রভাষক (গ্রন্থাগার) মো. কামাল হোসেন জানান, তিনি সাত বছরেও পাঠাগারের কোনো বরাদ্দ পাননি। নিয়মিত কোনো পত্রিকাও রাখা হয়না বা বই ক্রয় সংক্রান্ত কোনো তথ্যও তার জানা নেই।

অপরদিকে অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন জানান, গভর্ণিং বডির নিয়োগ অনুযায়ী তিনি ২বছরের জন্য অধ্যক্ষ। অনুমোদনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে ২০২১সনের ৬ মে আবেদন করেন। সেই আবেদনের বিষয়ে এখনো তিনি কোন সুরাহা পানি, তাকে হ্যাঁ-না কিছু জানো হয়নি। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের পত্রের প্রেক্ষিতে গভর্ণিং বডির সভার সিদ্ধান্তক্রমে এবছরের ১ অক্টোবর থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে মাহমুদা ইয়াসমিনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি এখন ছুটিতে আছেন, ডিজির সিদ্ধান্ত পেলে সপদে (অধ্যক্ষ) ফিরে আসবেন।
পদ ছাড়লেও চেয়ার ছাড়ছেন না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে বিষয়টা এমন না! আমি কলেজ আসি, কলেজে যারা আছেন তাদের দেখাশোনা করি, পরামর্শ দেই, খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য আসি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে মাহমুদা ইয়াসমিন পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পালন করছেন।
পাশের চেয়ারে বসা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহমুদা ইয়াসমিন বলেন, আমি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছি। এখনো অর্থনৈতিক বিষয়সহ অনেক কিছুই বুঝে পাইনি। তিনিও (সাবেক অধ্যক্ষ) নিয়মিত কলেজ আসছেন। আমি উনাকে এ কথা বলেছি, আপনিও কলেজ আসলে- লোকজন বলে কলেজে দু’জন অধ্যক্ষ, বিষয়টা খারাপ দেখায়। এরপরেও তিনি আসেন, আমি কী করবো?

কলেজের গভর্ণিং বডির সভাপতি ম. নূরুল ইসলাম জানান, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের পত্রের বিষয়টি এক বছর পেরিয়ে গেলেও অধ্যক্ষ আমাদেরকে আগে অবহিত করেন নাই। বিশ^বিদ্যালয় থেকে জানানোর পর গভর্ণিং বডির সভার সিদ্ধান্তক্রমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে মাহমুদা ইয়াসমিনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সাবেক অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন বোর্ডের বা বিশ^বিদ্যালয় থেকে মেয়াদ বাড়াতে পারলে সপদে বহাল হবেন।

 

#tk__1997




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০