ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র শবেবরাত পালিত হয়েছে। দিবসটি পালন উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিভিন্ন বাড়িতে সেমাই, মিষ্টি-রুটি বিতরণ করতে দেখা যায়। মসজিদে বিশেষ নামাজ, দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও এ উপলক্ষে অনেকেই রোজা পালন করেন।
শবেবরাত রাতে যে আমল করা উচিত :
পবিত্র শবেবরাত। ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ অর্থ সৌভাগ্য। আরবিতে একে বলে ‘লাইলাতুল বরাত’। অর্থাৎ ‘শবেবরাত’ শব্দের অর্থ ‘সৌভাগ্যের রাত’। ১৫ শাবানের এ রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এবাদত-বন্দেগি ও জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে কাটান। বিভিন্ন বর্ণনামতে, এ রাতে মহান আল্লাহ বান্দাদের জন্য তার রহমতের দরজা খুলে দেন।
শবেবরাতে যে আমল করবেন
যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ শুক্রবার (১৮ মার্চ) দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত হচ্ছে হিজরি শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে পালিত মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রাতকে ভাগ্যরজনি বলা হয়ে থাকে।
শবে বরাতের নফল নামাজ ও ইবাদত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে (ইবনে মাজাহ)। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখ। কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন; কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিকপ্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৪)।
এদিন রাতে যেসব ইবাদত করা প্রয়োজন সেগুলো হচ্ছে-
১. নফল নামাজ পড়া
২. নামাজে কিরাআত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা।
৩. পরের দিন নফল রোজা রাখা;
৪. কোরআন তিলওয়াত করা
৫. দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া;
৬. তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা;
৭. দোয়া-কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির-আসকার ইত্যাদি করা;
৮. কবর জিয়ারত করা;
৯. নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সকল মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা।
ফজীলত
হাদিস শরীফে এসেছে- ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, পাঁচটি রাত এমন আছে, যে রাতে বান্দার কোনো দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। আর তা হলো-
জুমআর রাতের দোয়া, রজব মাসের প্রথম রাতের দোয়া, নিসফা শাবান তথা অর্ধ শাবানের রাতের দোয়া, ঈদুল ফিতর তথা রোজার ঈদের রাতের দোয়া, ঈদুল আজহা তথা কুরবানির ঈদের রাতের দোয়া।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)
আরও পড়ুন : আজ পবিত্র শবেবরাত
তাই আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের জন্য নিচের দোয়াটি বেশি বেশি পড়তে পারেন-
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি, ওয়া ওয়াসসি’লি ফি দারি, ওয়া বারিক লি রিজকি। (নাসাঈ)
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার গোনাহ মাফ করে দাও। আমার জন্য আমার বাসস্থান প্রশস্ত করে দাও। এবং আমার রিজিকে বরকত দিয়ে দাও।
এ ছাড়া হযরত উমর ইবনু আব্দিল আযিয রহ., ইমাম শাফেয়ী রহ. প্রমুখ মনীষীদের থেকেও এ রাতের ইবাদতের সপক্ষে রেওয়ায়াত রয়েছে। অন্তত বারোজন সাহাবি থেকে শবেবরাতের ফজিলত সংক্রান্ত হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এখানে বিখ্যাত দুটি হাদিস তুলে ধরা হলো-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, আল্লাহ তায়ালা শাবান মাসের মধ্যরজনীতে সমস্ত মাখলুকের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং বিদ্বেষ পোষণকারী ও হত্যাকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন [মুসনাদু আহমাদ, হাদিস নং ৬৬৪২]। অন্য বর্ণনায় রাসূল সা. বলেন, মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী [তাবারানি- হাদীস নং ২০৩]।
হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, এ রাতে আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং কালব গোত্রের মেষপালের পশমের চাইতেও অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ মাফ করেন [ইবনু মাজাহ- হাদিস নং ১৩৮৯]।
মূল কথা এই যে, এসব রাত উৎসবের নয়, ইবাদত-বন্দেগী ও তওবা- ইস্তেগফারের রাত। তাই রসম-রেওয়াজের অনুগামী হয়ে এ রাতে উপরোক্ত কাজকর্মে লিপ্ত হওয়া নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বরাতের মহিমান্বিত রাতে শরিয়তসম্মত পন্থায় ইবাদত বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।