বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) সার সিন্ডিকেটের খব্জায় বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ মুল্যে। গোডাউন থেকে সার ও বীজ উত্তোলন হলেও ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বিএডিসির সিংহভাগ ডিলারদের দোকান নেই। তাদের মধ্যে কয়েকজন ডিলার গোডাউনের গেইটে উচ্চমূল্যে কালো বাজারে সার বিক্রি করে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও কয়েকজন ডিলার তাদের লাইসেন্স বিসিআইসি সার ডিলার সিন্ডিকেট চক্রের নিকট ভাড়ায় বন্ধক দিয়েছেন। এ সিন্ডিকেট চক্র বাজারে সাড়ে ৭শ টাকার এমওপি সারের বস্তা ১৪শ টাকা থেকে ১৬শ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে কৃষককে সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ মূল্যে সার ক্রয় করতে হচ্ছে।
বোকাইনগর ইউনিয়নের গড়পাড়া গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান জানান, তিনি এমওপি ৫০ কেজি সারের বস্তা ১৩শ টাকায় ক্রয় করেছেন। সহনাটী ইউনিয়নের ধোপাজাঙ্গালিয়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান বুরহান জানান, তিনি কোনো দোকান থেকেই ১৪শ টাকার নিচে এমওপি সারের বস্তা বিক্রি করছেন না। পৌর শহরের কৃষক আব্দুর রহিম জানান, ন্যায্যমূলে নেই, উচ্চমূল্যে (দ্বিগুণ) সার সরবরাহ স্বাভাবিক!
গৌরীপুর বিএডিসি সার ডিলার সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দুলালের মেসার্স দেলোয়ার বীজ ভান্ডার নামীয় দোকানের কোনো সাইনবোর্ড বা গুদাম খোঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, তার দোকানের নামে বরাদ্দকৃত সার মেসার্স শ্যামল বসাকের পরিচালক আক্তার ভাইয়ের গোডাউনে রাখা হয়েছে। পাশ^বর্তী মেসার্স সুদীপ বীজ ভান্ডার ও মেসার্স কামাল বীজ ভান্ডারেও কোনো সারের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে মেসার্স শ্যামল বসাকের পরিচালক আলী আক্তার খান পাঠান জানান, এই তিনটি ডিলারের মালামাল তিনি এনেছেন। তার গোডাউনে আছে। এদিকে আলী আক্তার খান পাঠান পৌর শহরের একজন খুচরা সার ব্যবসায়ী। মেসার্স শ্যামল বসাকের নামেও বিএডিসি’র সার বরাদ্দ পেয়েছে। তিনি এ সিন্ডিকেটের প্রধান বলে এ প্রতিনিধির নিকট স্বীকার করেন।
অপরদিকে উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের পাছার বাজারে মেসার্স বাশার ট্রেডার্সের মালিক আবুল বাশারের দোকানে উচ্চ মূল্যে সার বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। আবুল বাশার দীর্ঘদিন যাবত কোরিয়া প্রবাসী ছিলেন। এ দোকানেও এলাকার কৃষক আবুল বাশারকে দেখেননি। বড় ভাইয়ের লাইসেন্সে ব্যবসা পরিচালনা করেন ছোট ভাই মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, তার ভাই প্রায় ১০বছর যাবত কোরিয়া ছিলেন। সম্প্রতি এসেছে। তবে দোকান তিনি পরিচালনা করে আসছেন।
এদিকে বিএডিসি’র তালিকাভূক্ত ডিলার মেসার্স লিলি এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের সার দোকান বন্ধ পাওয়া যায়। পৌর শহরের বালুয়াপাড়া মোড় ও সহনাটী ইউনিয়নের পাছার বাজারে গোডাউন রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন মেসার্স ট্রেডার্সের মালিক মো. মোক্তার উদ্দিন চৌধুরী। পৌর শহরের উত্তর বাজারে মেসার্স আশরাফ উদ্দিন ট্রেডার্সের দোকান খোঁজে পাওয়া যায়নি। ডৌহাখলা ইউনিয়নের ডৌহাখলা নামক একবাজারেই বিএডিসির রয়েছে ৬ডিলার; এগুলো হলো মেসার্স দুইভাই এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রতন সরকার, মেসার্স বাপ্পীবাবু এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স তন্নীমোনা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স বাপ্পী এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স চয়ন এন্টারপ্রাইজ। এ প্রসঙ্গে রতন সরকার জানান, মেসার্স দুইভাই এন্টারপ্রাইজ রামগোপালপুর বাজারে, মেসার্স রতন সরকার ডৌহাখলা বাজারে, মেসার্স বাপ্পীবাবু এন্টারপ্রাইজ ভাংনামারীর অনন্তগঞ্জ বাজারে, মেসার্স তন্নীমোনা এন্টারপ্রাইজ মাওহার ভুটিয়ারকোনা বাজারে, মেসার্স বাপ্পী এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স চয়ন এন্টারপ্রাইজ ডৌহাখলায়।
অপরদিকে জাতীয় বাতায়নে ময়মনসিংহ বিভাগীয় ও জেলা বিএডিসি’র কর্মকর্তা ও তাদের কার্যক্রমের তথ্য নেই। নেই কৃষকদের উন্নয়নে এ বিভাগের সরকারের গৃহিত কর্মসূচীর বিবরণও। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশে কৃষক পর্যায়ে সেবা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার লিপি জানান, প্রত্যেক বিএডিসি ডিলার ১২২বস্তা করে এমওপি সার পেয়েছেন। প্রত্যেক ডিলারের দোকানে একজন করে উপসহকারী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, গৌরীপুরের বরাদ্দকৃত একবস্তা সারও অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে পারবে না, এটা নিশ্চিত করা হবে।
উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ইউএনও হাসান মারুফ বলেন, প্রত্যেকটি সারের দোকানের মনিটরিং কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হবে, কোনরূপ অনিয়ম পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।