বৃহস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

গৌরীপুরে তরমুজের দামে আগুন!

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২১
||
  • প্রকাশিত সময় : এপ্রিল, ২৭, ২০২১, ৪:২৯ অপরাহ্ণ
শামীম খান স্টাফ রিপোর্টার।

রমজান মাসে ইফতারিতে বাহারি ফলের সমাহারের মধ্যে তরমুজ অন্যতম, এক টুকরা তরমুজ রোজদারদের মাঝে এনে দেয় তৃপ্তি। তার উপর তীব্র গরমে মানুষ অতিষ্ঠ। এই গরমে মানুষ তাঁর শরীরের পানির চাহিদা মেটাতে খাবারেও খোঁজে তরল-পানীয়। তরমুজ তার মধ্যে অন্যতম।
এবার গরম আর রোজায় ময়মনসিংহের গৌরীপুরে তরমুজ হয়ে উঠেছে বিলাসবহুল ফল। যেখানে মাত্র সপ্তাহ দশ দিন আগেও ছোট সাইজের (২-৩) কেজি একটি তরমুজ বিক্রি হতো ৫০-৭০ টাকায়, মধ্যম সাইজের তরমুজ (৪-৫) কেজি একটি তরমুজ বিক্রি হতো ৮০-১২০ টাকায়, বর্তমানে ছোট সাইজের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায় আর মধ্যম সাইজের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। এমন দামে ক্রেতারা আক্ষেপ করে বলছেন, গৌরীপুরে তরমুজ এবার যেন বড় লোকের ফল। মঙ্গলবার গৌরীপুর উপজেলার পৌর শহরের মধ্যবাজার, শ্যামগঞ্জ বাজার, শাহগঞ্জ বাজার, কলতাপাড়া বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
জানা গেছে, রমজান মাসের পূর্বে গৌরীপুরে তরমুজের দাম তেমন বেশি ছিল না, চাহিদাও ছিলো কম। ছোট সাইজের একটি তরমুজ ৫০-৭০, মধ্যম সাইজের ৮০-১০০ কিংবা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। আর বড় সাইজের তরমুজের দাম ছিল ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে। রোজা শুরু ও গরম বাড়তে থাকায় ফল ব্যবসায়ীরা তরমুজের দাম বাড়িয়ে দেন প্রায় কয়েকগুণ। শুরুতে তরমুজ পিস হিসেবে বিক্রি করলেও হঠাৎ করে তারা কেজি হিসেবে বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে তরমুজের আকাশচুম্বী দামে ক্রেতারা একবারে দিশেহারা!
মঙ্গলবার দুপুরে মধ্যবাজারে তরমুজের দোকানে তরমুজ কিনতে আসেন অচিন্তপুরের শরিফ। কিন্তু তরমুজের এমন আগুনে দাম শুনে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। তিনি বলেন, এই গরমে এক টুকরো তরমুজ একটু তৃপ্তি দেয়। কিন্তু এই দামের কারণে সেই তৃপ্তি আর পূরণ করা গেলো না বলেন তিনি।
তরমুজ কিনতে আসা শাজাহান বলেন, বরিশালে কৃষকরা তরমুজ প্রতি পিস বিক্রি করছেন ৮-১২ টাকায়, আর আনতে প্রতি পিস তরমুজে খরচ সর্বোচ্চ ১০ টাকা। কিন্তু বিক্রেতেরা পিস হিসেবে কিনে আনলেও বিক্রি করছে কেজি হিসেবে। প্রতি কেজি ৭০ টাকা দরে। তিনি আরো বলেন, বাজার মনিটরিং এর অভাবে ব্যবসায়ীরা এই সিন্ডিকেট তৈরী করে তরমুজ বিক্রি করছে। তিনি গৌরীপুর উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য আপনাদের যদি কিছু করার থাকে, তাহলে তা করুন। কারণ সিন্ডিকেট ব্যাবসায়ীরা যাই করুক, দোষ কিন্তু সাধারণ মানুষ ব্যাবসায়ীদেরকে দিবেনা। দিবে সরকারকে। আর প্রশাসনতো সরকারেরই অংশ।
গৌরীপুর পৌর শহরের মধ্যবাজারের তরমুজ বিক্রেতা ইসলাম মিয়া বলেন, ঢাকা থেকেই আমরা বেশি দাম দিয়ে কিনে আনছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ সময় তার কাছে তরমুজ কেনার রশিদ দেখতে চাইলে তিনি বলেন, রশিদ সাথে নেই বাসায় আছে পরে দেখাতে পারবো।
তরমুজ বিক্রেতা ফেরদৌস বলেন, আমরা তরমুজ আনি ঢাকা, গাজীপুর থেকে। তরমুজের দাম বেশি বলেই আমাদেরকে বেশি দামে কিনতে হয়। তরমুজ কিনে গৌরীপুর বাজার পর্যন্ত আনতে আমাদের খরচ হয় ২২-২৫ টাকা। প্রতিদিনই ৫-৭টা তরমুজ নষ্ট হয়ে যায়। যার জন্য আমাদেরকে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, তরমুজের দাম নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার পর সোমবার ময়মনসিংহের নতুন বাজারের কয়েকটি ফলের আড়ৎ ও দোকানে অতিরিক্ত দাম ও ভুয়া রশিদ দেখানোয় জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বিক্রেতাদের জরিমানা করা হলেও গৌরীপুরে এখন পর্যন্ত কোন অভিযান পরিচালিত হয়নি।
এ বিষয়ে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ বলেন, তরমুজের দামের বিষয়ে বাজার মনিটরিং করা হবে। আর একটি ফলে ভোক্তা অধিকার আইনে বিক্রেতারা সর্বোচ্চ কতো টাকা লাভ করতে পারবে, এ বিষয়টি জানা নেই বলে জানান তিনি।
টি.কে ওয়েভ-ইন