বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪ -|- ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০-বসন্তকাল -|- ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

গৌরীপুরে গুড়িয়ে দেয়া ইটভাটায় বের হচ্ছে আস্ত ইট!

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : ফেব্রুয়ারি, ১৮, ২০২০, ১০:১০ অপরাহ্ণ

প্রধান প্রতিবেদক :

ভ্রাম্যমাণ আদালদের রায়ে গুড়িয়ে দেয়া ইটভাটা থেকে বের হচ্ছে আস্ত ইট! প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে এবার ইটভাটায় তৈরি হচ্ছে নতুন ইট; নিশ্চুপ কর্তৃপক্ষ। জনমনে প্রশ্ন; গুড়িয়ে দেয়া ইটভাটায় ইট তৈরি হয় কিভাবে- এই গুড়িয়ে দেয়ার অর্থ কী?
জানা যায়, ২০১৯সালের ২৫ নভেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবুল হাসেমের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে অনুমোদনবিহীন তানিয়া ব্রিকস ফিল্ডের চিমনি ও ভাটা গুড়িয়ে দেয়া হয়। তারা ব্রিকসের একাংশ ভেঙ্গে দেয়া হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে। ব্রিক ফিল্ডের চিমনি ও পুরো ভাটা অবশিষ্ট অংশও সরিয়ে নেয়ার আদেশ তিনি। অভিযান চলাকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবুল হাসেম সাংবাদিকদের জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অনুমতিপত্র, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের লাইসেন্স না থাকায় মেসার্স তারা ব্রিকস ও মেসার্স তানিয়া ব্রিকস ফিল্ডকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সঙ্গে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনোরঞ্জন বর্মন, মাস্তুরা আমিনা, পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক নূর আলম, সহকারী পরিচালক সাবিকুন্নাহার। এ অভিযানের সংবাদটি দৈনিক যুগান্তরসহ একাধিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে।
এ দিকে সরেজমিনে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রæয়ারি/২০২০) ইটভাটা ঘুরে দেখা যায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ইটভাটায় চলছে ইট তৈরির ধুমধাম কর্মযজ্ঞ। বোকাইনগর ইউনিয়নের দারিয়াপুর গ্রামে তানিয়া ব্রিকসের ইতোমধ্যে লাখ লাখ ইট বাজারজাত হয়েছে। ইটের ভাটায় তৈরি হয়েছে আরো কয়েক লাখ ইট। ইট পুড়ানোর কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে চারপাশের বৃক্ষরাজি। একপাশে চলছে বোরো মৌসুমের ধান রোপন, অন্যপ্রান্তে চলছে ইট তৈরি ও পুড়ানো। ফসলি জমিতে ইটভাটা নিষিদ্ধ হলেও এ নিষেধাজ্ঞা কাগুজে সীমাবদ্ধ থাকছে! জনশ্রæতি রয়েছে, গুড়িয়ে দেয়া আর নিষিদ্ধ করা একটি আইওয়াশ কর্মসূচী।


অপরদিকে ভেঙ্গে ফেলা অংশে লেগেছে ইট-সিমেন্টের জোড়াতালি। সেই ভেঙ্গে ফেলা অংশের চিত্রও পাল্টে গেছে। নতুন ইটের বিশাল স্তুপের নিচে চাপা পড়েছে ‘গুড়িয়ে দেয়া’ অভিযানের ক্ষত অংশটুকু। এ প্রসঙ্গে তানিয়া ব্রিকসের ম্যানেজার মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান, সব মিটমাট হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসক ও পরিবেশের ছাড়পত্র প্রসঙ্গে তিনি জানান, এটা মালিক জানেন। ইটভাটার মালিক মোঃ কামাল লিটন বলেন, ইটভাটা সমিতির মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
এ দিকে তারা ব্রিকসের ভেঙ্গে ফেলা অংশ আবারও জোড়া লেগেছে। ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চলাকালে একাংশ ভেঙ্গে পুরো অংশ ভাঙার নির্দেশ দেন। তবে অভিযান সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে ভাঙার অভিযান। অভিযান চলাকালে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূর আলম জানান, এ ইটভাটা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ, কোনভাবেই ইট প্রস্তুত করতে পারবে না। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক ও অনুমোদনবিহীন প্রত্যেকটি ইটভাটায় এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অপরদিকে মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত এ ইটভাটার একদিকে তৈরি হচ্ছে নতুন ইট, অন্যদিকে পুড়ানো ইটও বের হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তারা ব্রিকসের ম্যানেজার মোঃ রেজাউল করিম সুমন জানান, তাদেরকে ভাঙার বা নিষিদ্ধ হওয়ার কোনো আদেশ দেয়নি। ভেঙে ফেলার কোন পত্রও পাননি।
নিষিদ্ধ ঘোষিত ও গুড়িয়ে দেয়া ইটভাটা প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক নূর আলম জানান, আবারও ইট তৈরি ও পুড়ানোর খবর আমার জানা নেই। নিষেধ অমান্য করে গর্হিত অপরাধ করেছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।