আজ শুক্রবার ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রধান প্রতিবেদক || দৈনিক বাহাদুর
  • প্রকাশিত সময় : মার্চ, ৬, ২০২২, ৮:৩১ অপরাহ্ণ




গৌরীপুরে এতিমের টাকায় প্রভাবশালীদের থাবা ॥ দাওয়াতে পেলেই এতিমদের ভাগ্যে জুটে ‘মাংস’

তীব্র শীত, ফ্লোরে প্রচন্ড ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে থাকাই যেখানে দায়; অথচ সেই ফ্লোরের মেঝেতে ঘুমিয়ে আছে ৮জন শিশু। ওরা এতিম! সরকারের নির্ধারিত বিছানাপত্র, স্বাস্থ্যসেবা, পড়ার টেবিল, খাদ্য তালিকা কিছুই নেই এই এতিমখানায়! এদের দেখিয়ে প্রতিমাসে ২৫জন শিশুর জন্যে ৫০হাজার টাকা সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ক্যাপিটেশন গ্রান্টের টাকা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে বিতরণ করা হয়। এমন বেহাল অবস্থার দেখা মিলে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মরিচালী গ্রামে ১৯৯৮সনে স্থাপিত আজিজুন্নেছা এতিমখানায়।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পিতা-মাতা না থাকায় অভিভাবকহীন অসহায় ২৫জন এতিমের জন্যে ৬মাস পরপর এ এতিমখানায় ৩লাখ টাকা করে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রদান করা হচ্ছে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি এতিমখানা হিসেবে আজিজুন্নেছা এতিমখানটি নিবন্ধনভুক্ত এতিমখানা। যার নিবন্ধন নং ০১৯৬১। প্রত্যেক এতিম শিশুর জন্যে প্রতিমাসে খাদ্য বাবদ ১৬০০টাকা, পোষাক খাতে ২০০টাকা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে ২০০টাকা বরাদ্দ পাচ্ছেন।

এদিকে সরজমিনে এ প্রতিনিধি এতিমখানায় উপস্থিত হলে এতিমখানার শিক্ষক হাফেজ মো. আল মামুন ভূইয়া জানান, এতিমখানায় বর্তমানে ১৬জন এতিম রয়েছেন। হাজিরাখাতায় তাদের উপস্থিতি থাকলেও কোনো রেজিস্টার দেখাতে পারেননি। ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টা ১৩মিনিটে রান্না ঘরে এতিমদের খাবার প্রস্তুত রয়েছে। ছোট মাছের তরকারিতে খোঁজে পাওয়া যায়নি ১৬টি মাছের টুকরা। এরপরেও এতিমখানার সুপার আব্দুস সালাম জানান, ১৬জনই আছে। এরপরে ১৯ ফেব্রুয়ারি ও ২২ ফেব্রুয়ারি দু’বার এতিমখানায় যাওয়ার পর বেড়িয়ে আসে নানা তথ্য। ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ১৯মিনিটে দেখা যায়, প্রচন্ড ঠান্ডার মাঝেও ফ্লোরের মেঝেতে ঘুমিয়ে আছে ৮জন এতিম শিশু। দরজায় রয়েছে ৮ জোড়া জুতা, ভিতরে ট্রাংকও ৮টি, ঘুমিয়েও আছে ৮জন শিশু। এরপরেও এতিমখানার শিক্ষক হাফেজ মো. আল মামুন ভূইয়া পূর্বের ন্যায় ১৬জনে এতিম বিষয়ে অনঢ় থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, কয়েকজন ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে গেছে।

অপরদিকে মাদরাসার সুপার আব্দুস সালাম জানান, এতিমদের উত্তোলিত টাকা থেকে তিনি প্রতিমাসে ৫হাজার টাকা, শিক্ষক মামুন হুজুর ৭হাজার টাকা, ক্বারী আলী হোসেন ৩হাজার টাকা, শিক্ষক কবির হোসেন ২হাজার ৫শ টাকা ও আয়া নিচ্ছেন এক হাজার টাকা। তিনি আরো জানান, এতিমখানায় আশপাশের লোকজনও সহযোগিতা করেন। এতিমদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যান, সেখানে ওরা ‘মাংস’ খায়। তবে এতিমখানায় খাদ্যের কোনো তালিকা নেই। এই এতিমদের ভাগ্নে মাংস কবে জুটে ছিলো তিনি তারও কোনো উত্তর দিতে পারেননি। খাদ্য তালিকায় প্রায়শঃ থাকে ডিম আর পাংগাস মাছ। তিনি টাকা উত্তোলন ও খরচের কোনো রেজিস্টার দেখাতে পারেননি। ব্যাংকের হিসাবও তিনি জানেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, সব জানেন এতিমখানার পরিচালক (সভাপতি) জাফরুল হোসেন। ব্যাংকের হিসাব বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কোনো হিসাব আমাদের নিকট নেই। আমাদেরকে মাসে মাসে যা দেন, সেটাই বলতে পারবো।

এদিকে সাইনবোর্ড আর কাগজপত্রে এতিমখানার স্থাপিত ১৯৯৮সন উল্লেখ থাকলেও এ সুপার জানান কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১০সনের পরে। ২০১৪সন থেকে সরকারি অনুদান মঞ্জুর হয়। এতিমখানার জমি সংক্রান্ত দলিল লেখা আছে, সম্পাদন এখনো হয়নি। অর্থাৎ এতিমখানাকে এখনো জমি লিখে দেননি প্রতিষ্ঠাতা মো. জাফরুল হোসেন।
অপরদিকে সরজমিনে দেখা যায়, এতিমখানার প্রধান তোরণে লেখা রয়েছে হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (র.) কমপ্লেক্স। কমপ্লেক্সের ভিতরেই অবস্থিত এতিমখানা। এতিমখানা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জাফরুল ইসলামের পুত্র, কন্যা, পুত্রবধু ও স্ত্রী’র নামে স্থাপন করা হয়েছে ‘সজিব, সামা, প্রিয়াংকা, মমতাজ শিরিন নূরানী ও হাফিজিয়া মাদরাসা’। এছাড়াও রয়েছে সিরাজ মেমোরিয়াল প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র এবং তার বাবার নামে ‘উসমত আলী স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা।’ পাশের রয়েছে বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ।

এলাকাবাসী জানায়, সাইনবোর্ড থাকলেও উসমত আলী স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা ও সিরাজ মেমোরিয়াল প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রের কোনো কার্যক্রম নেই। এতিমখানার সুপার জানান, মসজিদের ইমামও এতিমখানার হুজুর, হাফেজিয়া মাদরাসায়ও তিনি পড়ান। এসব প্রতিষ্ঠানের পৃথক কোনো জনবল নেই। এক সময় আমরা প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্যারাসিটামল, গ্যাষ্ট্রিকের ট্যাবলেট ও ওরস্যালাইন দিতাম।
এতিমখানার সভাপতি জাফরুল হোসেন এ প্রতিনিধিকে মুঠোফোনে জানান, শিশুরা এই শীতে ফ্লোরের মেঝেতে থাকে এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। আমি প্রতিমাসেই এতিমখানা পরিদর্শন করি। হিসাব-নিকাশের বিষয়টি সুপার দেখেন, আমি কিছু বলতে পারবো না।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ মিজানুল ইসলাম আকন্দ বলেন, এতিমদের রেজিস্টার, খাদ্য তালিকা, ক্রয় কমিটি এবং শিশুদের চিকিৎসা-শিক্ষা সব ব্যবস্থা থাকতে হবে। আমরা এবার যাছাই করে তারপর সরকারি বরাদ্দ প্রদান করবো। দ্রুত সময়ের মধ্যে এতিমখানাটি পরিদর্শনে যাবো। অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নিবো।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০