আজ শুক্রবার ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

স্টাফ রিপোর্টার || দৈনিক বাহাদুর
  • প্রকাশিত সময় : মে, ১৮, ২০২৩, ৮:১১ অপরাহ্ণ




গৌরীপুরে একুশে পদক প্রাপ্ত সাহিত্যিক আসকার ইবনে শাইখের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদক প্রাপ্ত সাহিত্যিক আসকার ইবনে শাইখ এম. ওবায়দুল্লাহ এর বৃহস্পতিবার (১৮ মে/২০২৩) ১৪তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে গৌরীপুর যুগান্তর স্বজন সমাবেশের উদ্যোগে স্মরণসভা, শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ ও দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা স্বজন সমাবেশের সভাপতি মো. এমদাদুল হক। সঞ্চালনা করেন সাহিত্য সম্পাদক আমিরুল মোমেনীন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা জাতীয়পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর, ছড়াকার আজম জহিরুল ইসলাম, কবি অনামিকা সরকার, উপজেলা স্বজনের সহসভাপতি শামীমা খানম মীনা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক গোপা দাস, ক্লাব ৯৭ গৌরীপুর মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মাহমুদা আক্তার লিপি, নৃত্য শিল্পী তাইয়্যেবা জামান রায়না, স্বজন ইসরাত জাহান রেখা, নিতু সরকার প্রমুখ।

আসকার ইবনে শাইখের প্রকৃত নাম এম. ওবায়দুল্লাহ। তিনি গল্প লেখক, সংগঠক, অভিনেতা, গীতিকার, ভাষাসৈনিক, সাহিত্য সমালোচক, ইতিহাসবেত্তা ও শিক্ষাবিদ ছিলেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের মাইজহাটি গ্রামে। তিনি ১৯৬১সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৮৬ সালে একুশে পদক, ১৯৮৭সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ পুরস্কার, ১৯৮৯সালে টেনিশিনাস (টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার) পুরস্কারে ভূষিত হন।

১৯৪৭ সালে ‘বিরোধ’ নাটক প্রকাশের মাধ্যমে নাট্যকার হিসাবে আসকার ইবনে শাইখের আত্মপ্রকাশ। তখন থেকে প্রকাশিত নাটক-নাটিকা, দেশাত্মবোধক গানের সম্পাদক-সঞ্চালনা, ইতিহাসের গল্প, ইতিহাস, অনুবাদ ও অন্যান্য প্রবন্ধে গ্রন্থের সংখ্যা ৯০এর বেশি। সামাজিক ঐতিহ্যভিত্তিক লোকনাট্য, গীতনাট্য অন্যান্য অপ্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩২। শাইখ পেশাগত জীবন শুরু করেন ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে অধ্যাপনার মাধ্যমে। পেশা অধ্যাপনা হলেও নাটকে তার আগ্রহ তাকে এদেশের আধুনিক নাট্যজগতের ভিত্তিভূমিটি তৈরি করতে সহায়তা করে। তিনি ছিলেন একাধারে নাট্যকার, নাট্য সংগঠন পরিচালক, নির্দেশক, ও অভিনেতা। মঞ্চ, রেডিও, টেলিভিশন, সিনেমা সব মাধ্যমেই তিনি কাজ করেছেন।

তার সাহিত্য কর্মের মাঝে রয়েছে সামাজিক নাটক : বিরোধ (১৯৪৭), পদক্ষেপ (১৯৪৮), বিদ্রোহী পদ্মা (১৯৪৮), মৃত্যু-ক্ষুধা (১৯৫১, জাতীয় কবির মৃত্যু-ক্ষুধা উপন্যাসের একাংশের নাট্যরূপ), দুরন্ত ঢেউ (১৯৫১), শেষ অধ্যায় (১৯৫২), অণুবর্তন (১৯৫৩), বিল বাঁওডয়ের ঢেউ (১৯৫৫), এপার ওপার (১৯৫৫), প্রতীক্ষা (১৯৫৭), প্রচ্ছদপট (১৯৫৮), দেওয়ানা মদিনা (১৯৬০), কবি চন্দ্রাবতী (১৯৬৫), লীলা-কঙ্ক (১৯৬৫), অতল সায়র (১৯৬৬), ইন্টারভিউ (১৯৮১), পদ্মগোখরা (১৯৮৮, জাতীয় কবির পদ্মগোখরা উপন্যাসের নাট্যরূপ), বয়াতীর ভিটা (২০০৬)। ঐতিহাসিক নাটক : অগ্নিগিরি (১৯৫৮), তিতুমীর (১৯৫৭), রক্তপদ্ম (১৯৫৭), অনেক তারার হাতছানি (১৯৫৭), টিপু সুলতান (১৯৫৮), লালন ফকির (১৯৫৯), তাহ্মিনা (১৯৬৮), অশ্রæনিঝর (১৯৬৮), প্রতিধ্বনি (১৯৮০), মহাবিজয় (১৯৮০), আক্রান্ত যখন (১৯৮০), কর্ডোভার আগে (১৯৮০), রাজপুত্র (১৯৮০), রাজা-রাজ্য-রাজধানী (১৯৮১), মেঘলা রাতের তারা (১৯৮১), কন্যা জায়া জননী প্রথম খন্ড, (১৯৮৭), কন্যা-জায়া-জননী ২য় খন্ড (১৯৮৭) স্বপ্ন সোনারগাঁও (২০০৬)।

গীতিনাট্য : চান্দের ভিটা (১৯৬১), ঐতিহাসিক কাব্যনাট্য মীরজাফরের পালা, দৌলত আলীর সন্তানেরা, কিশোর কাব্যনাটক দৃষ্টিফুল (১৯৬২), বাদুড় (১৯৬৩), অণুবাদ নাটক দন্তচাপ (১৯৬৪), গানের সংকলন নবজীবনের গান (১৯৫৯), গল্প সংকলন কালো রাত তারার ফুল (১৯৮২), প্রবন্ধ গবেষনা ঃ বাংলা মঞ্চ নাটকের পশ্চাতভূমি (১৯৮৬), বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশ প্রসঙ্গে (১৯৯১)।
ইতিহাস : মুসলিম আমলে বাংলার শাসনকর্তা (১৯৮৬), ক্রুসেডের ইতিবৃত্ত (১৯৯৪), অণুবাদ বৈষয়িক উন্নয়নের গতিপথে (১৯৬৩), উত্তরণ (১৯৬৪), কাজের দিনের ভোর (১৯৬৫), মার্কিন পুঁজিবাদ (১৯৬৬), আমেরিকার অর্থনৈতিক সাধারণতন্ত্র (১৯৬৭)। এছাড়াও অপ্রকাশিত রচনাবলির মধ্যে রয়েছে সপ্তডিঙ্গা মধুকর (৭টি কিশোর গীতি-নাট্য), নদী নিরবধি (৭টি সামাজিক নাটক), বাংলাদেশের উদ্ভব কথা, বাংলাদেশে ইসলামের উন্মেষ, পলাশীর পথে ও মীরজাফরী নবাবী।
স্কুল জীবন থেকেই তাঁর প্রচন্ড ঝোঁক ছিলো নাটকের প্রতি। ১৯৩৫ সালে ঈশ্বরগঞ্জের চরনিখলা মধ্য ইংরেজি স্কুলে অধ্যয়নকালেই অভিনয় শুরু করেন। স্কুলজীবনের সিরাজের স্বপ্ন, বন্দীবীরসহ নানা নাটিকায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কৃত হন। ১৯৪১ সালে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর আনন্দমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পাশ করেন। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
বিদ্যালয়ে পড়াকালীন ভাষা আন্দোলনের পথিকৃৎ সংগঠন তমদ্দুন মজলিসের সাথে জড়িত হন। এ সংগঠন থেকে ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র ‘সাপ্তাহিক সৈনিকে’র পাশাপাশি ১৯৫২ সালে প্রকাশ হতো মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘দ্যুতি’। তিনি আসকার ওবায়েদ নামে পত্রিকাটির সম্পাদনা করতেন আর তাকে সহযোগিতা করতেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও অনেকেই। তার রচিত ৩০টির মত নাটক টেলিভিশনে ও ৮টি নাট্যসিরিজ এবং রেডিওতে ৫০টিরও বেশি নাটক প্রচারিত হয়।
‘বাংলা মঞ্চ-নাট্যেরপশ্চাৎভূমি’ নামক প্রবান্ধ-গ্রন্থে লেখক পরিচিতি প্রসঙ্গে তোফা হোসেন বলেন, শাইখ মঞ্চ-রেডিও-টেলিভিশনের জন্য নিয়মিত নাটক লিখে আসছেন এবং নির্দেশনা করছেন। এদেশের মানুষের মন ও মানস, তাদের জীবন সংগ্রাম ও আশা-বাসনার প্রতিফলন তার নাট্যকৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি অনলস নাট্যকর্মী। বাংলা নাটকের উন্নয়নে অবদান অসামান্য। চার দিকে আজ নাট্য-প্রয়াসের যে শুভ কর্মচাঞ্চল্য বিদ্যমান, তার সূচনাকারীদের প্রধান পুরুষ আসকার ইবনে শাইখ। পঞ্চাশ দশকের আরম্ভ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাইরে এবং ৭০ সাল থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত স্বগৃহে ‘নাট্য একাডেমি’ স্থাপন করে তিনি বহু উৎসাহীকে হাতে-কলমে নাট্য বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি একজন সফল অভিনেতাও।
তারপর নানা পরিবর্তনের মাধ্যমে ১৯৪৬ সালে শেষ করেন এবং ১৯৪৭ সালে আবদুল হাই মাশরেকীর সহায়তায় প্রকাশিত হয় কলকাতা থেকে বিরোধ। প্রকাশ করেন সওগাত পাবলিকেশন্সের মোহাম্মদ আলী। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি শাইখকে। একেরপর এক সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মের মাধ্যমে নতুন অধ্যায়ন রচনা করে তিনি।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০