শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

গৌরীপুরের ঘোষপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ!

প্রকাশিত হয়েছে- বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক || দৈনিক বাহাদুর
  • প্রকাশিত সময় : জুন, ১৬, ২০২২, ১০:০৩ অপরাহ্ণ

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ঘোষপাড়া পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে একদিনে এসেই দৈনিক হাজিরা রেজিস্ট্রারে দুইমাসের হাজিরার স্বাক্ষর দেয়া, স্লিপের ও বিদ্যালয় মেরামত ফাণ্ড, প্রাকপ্রাথমিক শ্রেণির শিশুদের উপকরণের টাকা আত্মাসাৎসহ নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. হাদিউল ইসলাম জানান, গত ১৮এপ্রিল এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হয়। সেই সময় এলাকার অভিভাবকরা তাকে প্রত্যাহার ও শাস্তির দাবি জানান। সেইদিন থেকে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক সেলিনা আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ১৩জুন তারিখে সেই প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান এসে একদিনেই দু’মাসের দৈনিক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেন। এ বিষয়ে তিনি আমাকে কোনো অবগত করেননি। তিনি বর্তমানে কোনো বিদ্যালয়ে কর্মরত নন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন জানান, একদিনে এসে দু’মাসের দৈনিক হাজিরার স্বাক্ষর দেয়ার বিষয়টি শুনে আমি বিস্মৃত! এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আব্দুল মান্নান দু’মাস ধরে বিদ্যালয়ে যাননি, সেটাও জানা ছিলো না।
অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, আমি ঘোষপাড়া স্কুলেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। বিশৃঙ্খলতা এড়াতে স্কুলে যাইনি। সহকারী শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছি। এটা কর্ম দিবস হিসেবে গণ্য হবে। অন্যান্য অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেরামত ও স্লিপের ব্যয় নিয়মমাফিক হয়েছে। কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম হয়নি।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফাতেমা আক্তার জানান, এর আগে কাউরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুর্নীতির কারণে তাকে শাস্তিমূলক বদলি হিসেবে টেংগাপাড়ায় বদলি করা হয়। ২০১৯সনের ২৩এপ্রিল এবিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেলিনা আক্তার জানান, কবে থেকে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন তা আমার জানা নেই!
বিদ্যালয়ের ১২৯জন অভিভাবক স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে ঘোষপাড়া পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের স্লীপের টাকা হরিলুট, মেরামত ছাড়াই ভুয়া ভাউচারে টাকা আত্মাসাৎ, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপকরণ না কিনেই শিশু শিক্ষার্থীদের উপকরণের টাকা আত্মাসাৎসহ ৭টি বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের ৪৩শতাংশ জমির স্থলে শিক্ষা জরীপে বিদ্যালয়ের ১০শতাংশ জমি দেখিয়ে ৩৩শতাংশ জমি একটি চক্রের সঙ্গে আঁতাত করে বেহাতের পায়তারা করেন। শিক্ষা অধিদপ্তরের উপজেলা শিক্ষা অফিস এ স্মারকলিপি গত ৫এপ্রিল গ্রহণ করেন।
অপরদিকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন ও অভিভাবকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা ও কুদৃষ্টিতে তাকানোর বিষয়ে ৫জন অভিভাবক স্বাক্ষরে আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন নতুন ভবনের ৪০মন রড, ৩৫বস্তা সিমেন্ট, ৫শ বস্তা খালি সিমেন্টের বস্তা ও একটি রড কাটার মেশিন আত্মাসাতের অভিযোগ করেন ঠিকাদার আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, শিক্ষা বিভাগের হস্তক্ষেপে ১০বস্তা সিমেন্ট তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান শিক্ষক ফেরত দেন। অবশিষ্ট মালামাল আজও ফেরত দেয়নি। এছাড়াও বিদ্যালয়ের ফ্লোর মেরামতের জন্য সিমেন্ট নেন, স্লীপের টাকা আসলে ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও পরে সিমেন্ট ফেরত দেননি।