নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশ ও বিশ্ব করোনা ভাইরাসে’ স্তম্ভিত! করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অগ্রসৈনিক ডাক্তার। করোনাযোদ্ধারাও আজ কুভিড-১৯ এ আক্রান্ত হচ্ছেন। তেমনি এক ডাক্তার দম্পত্তি আক্রান্ত হন ময়মনসিংহে। তারা হলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস্ এন্ড গাইনি বিভাগের ডাক্তার মুসফিকা সুলতানা শান্তা আর অপর হলেন হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ ডাঃ খায়রুল হাসান খান। তার স্বামী-স্ত্রী। তারা জানান, গর্ভবতী মহিলার চিকিৎসা দিতে গিয়ে ডাঃ মুসফিকা সুলতানা ও অপর জন্য উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন।
মানুষের সেবা দিতে গিয়ে দু’জন আক্রান্ত হন কুভিড-১৯। অথচ মানুষের আচারণে তারা বিস্মৃত! একই ছাদের নিচে আছেন; তারপরেও ৪বছরের মেয়ের সঙ্গে একবার সাক্ষাত করতে পারছেন না। চার দেয়ালের বন্দিদশায় শোনছেন- দু:খজনক, কটু কথাও। দোকানদার সাফ জানিয়ে দিলেন, এবার কেউ কেন তার দোকানে না আসেন। অথচ এই ডাক্তার দম্পত্তিই এই ক’দিন আগেও ছিলো তাদের সেরা কাস্টমার। শান্তার বাড়ি গৌরীপুরে। তার ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস মুর্হূতের মাঝে ভাইরাল হয়ে যায়। শত শত মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হন এ ডাক্তার দম্পত্তি।
‘দুর্ভাগ্যজনক এবং দু:খজনক’ উল্লেখ করে পোস্ট শেয়ার করেন গৌরীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোঃ শফিকুল ইসলাম হবি। তিনি বলেন, ‘এমন নিঃসঙ্গ বন্দি সময় কাটাতে হয়নি তাদের-এক ছাদের সন্তা আছে, সাক্ষাত করতে পারছেন না, তারা আছেন নানু আর নানার সঙ্গে।’ তিনি রোগীদের উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, চিকিৎসকের কাছে তথ্য গোপন করা থেকে বিরত থাকুন। কানিজ লুবনা মন্তব্য করেন, তোমাদের মতো ডাক্তার আছে বলেই, বেঁচে আছি। দ্রুত আরোগ্য কামনা করে লাইশা ইয়াসমিন লিজা লেখেছেন, ‘কিছু বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি। আমরা যে জাতি হিসেবে এতটা নীচু মানসিকতার, করোনা আমাদের সেটাই বুঝিয়ে দিল।’ এছাড়াও শত শত শুভকাঙ্খী তাদের দ্রুত সুস্থ্যতা কামনা করে মন্তব্য, লাইক ও শেয়ার করেছেন।
স্ট্যাটাসে ডাঃ মুসফিকা সুলতানা শান্তা জানান, গত ১৬এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেরপর নকলা থেকে সাত মাসের গর্ভবতী মহিলা খিচুনি, শ^াসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হন। রোগী ছিলো অচেতন। সকলের শিফটের ডাক্তাররা তাকে চিকৎসা দেন। রাতের ডাক্তারগন অপারেশন করেন। অবস্থার অবনতি হলে নেয়া হয় আইসিইউতে। ১৯এপ্রিল জানা যায়, সে রোগী করোনা আক্রান্ত। এ কারণে গাইনী ইউনিট এক ও দুই এর ডাক্তাররা করোনা পরীক্ষা করান। সেখানে ডা: মুসফিকা সুলতানা শান্তা ও আরো ২জন পজেটিভ আসে খ ইউনিটের আর ক ইউনিটের একজনের পজেটিভ আসে। তিনি আরো জানান, তার স্বামী ডাঃ খায়রুল হাসান খান ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার। সে হাসপাতালে একজন করোনা আক্রান্ত রোগী আইসোলশনে আছে। একজন ডাক্তারও আক্রান্ত। তাই তারও করোনা টেস্ট করতে দেই। তারও করোনা পজেটিভ আসে।
করোনযুদ্ধের বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি জানান, তার ৪বছরের কন্যা নুসাইবাহ। আজ ওর মা-বাবা করোনা আক্রান্ত। মেয়েটার কাছ থেকে কতদিন দূরে থাকতে হবে জানিনা। মেয়েটা তার নানুমনিকে জিজ্ঞস করে, মা কখন অফিস থেকে আসবে? বারান্দায় দাঁড়ানো বিড়াল দেখে বলে ওকি ওর মার কাছে যাচ্ছে? এসব শোনতে কোন মায়েরই ভালো লাগে না। আবেগ-আপ্লেুত ভাষায় লিখেছেন, কতদিন ধরে মেয়েটাকে জড়িয়ে ঘুমাতে পরি না, একটু হাত ধরতে পারি না, একটু আদর করতে পারি না, একটু চুমু খেতে পারি না.. এই কষ্ঠ প্রতিটা ডাক্তার মা আর বাবার।
করোনা আক্রান্ত ডাক্তারদের প্রতি চারপাশের মানুষের আচারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এরকম হবে জেনেও আমরা ডাক্তাররা চিকিৎসা দিয়েছি। অনেকে চিকিৎসা এখনো দিচ্ছি। শুধু কিছু মানুষকে বাঁচানোর জন্য কিন্তু সাধারণ মানুষ তা বুঝেনা। মানুষ কোরোনায় আক্রান্ত হলে চায় ডাক্তার তার ট্রিটমেন্ট করুক। আর তার ট্রিটমেন্ট দিতে গিয়ে ডাক্তার আক্রান্ত হলে তখন চায় সেই ডাক্তার তার ধারে কাছে যেন না থাকে। এ এলাকাতেই না থাকে। আমরা ডাক্তাররা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে যদি নিজেরা লাইফ রিস্ক নিতে পারি। আপনারা কেন, আমাদের বিপদে সহযোগিতা করতে পারবেন না? কেন আমাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে পারবেন না? কোরোনায় আক্রান্ত হবার পর সাধারণ মানুষের ভয়ে ডাক্তারদের কেন পালিয়ে থাকতে হবে? মানুষ আগে ডাক্তার শুনে ফ্রি চিকিৎসা নিতে আসত আর এখন কোরোনা আক্রান্ত শুনে এলাকার দোকানদার বলে দেয়, তার দোকানে যেন আমাদের বাসার কেউ না যায়!
‘মানসিক যন্ত্রণায় আছি, আর যন্ত্রণা বাড়াবেন না’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ডাক্তার বিসর্জনের মূর্তি, সাধারণ মানুষ সুযোগ সন্ধানী এটা কি ঠিক? করোনা আক্রান্ত ডাক্তাররা বিভিন্ন জায়গায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কেউ কেউ বাড়িওয়ালা দিয়ে, কেউ কেউ এলাকার লোক দিয়ে, আমরা এমনিতেই অনেক মানিসক যন্ত্রণায় আছি আর যন্ত্রণা বাড়াবেন না।
‘আমরা কোনো পাপ করিনি, চুরি ডাকাতি করিনি’ বর্ণনায় আরো বলেন, আমার ফ্রেন্ডলিস্টে যারা আছেন দয়া করে সবাই আশেপাশে ডাক্তার থাকলে তাদের সহযোগিতা করুন। চিকিৎসা যদি মহৎ কোন কাজ হয় আমরা সেটা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছি। আমরা কোনো পাপ করিনি, চুরি-ডাকাতি করিনি, তাহলে কেন লুকিয়ে থাকতে হবে। অনুরোধ জানাই ডাক্তারদের সহযোগিতা করুন, এটাই সময় নিজেদের প্রমাণ করার, একজন ভালো মানুষ হিসেবে।
ডাঃ মুসফিকা সুলতানা শান্তা এক ভক্তের জবাবে বলেন, সুস্থ্য হলেই আবারও যুদ্ধে যাবো- নিজের জীবন বাঁচাতে নয়, মানুষের জীবন বাঁচতে, হইতো, সেইদিন আবারও আক্রান্ত হতে পারি তবে যুদ্ধের মাঠ ছাড়বো না। করোনাযুদ্ধে ডাক্তাররা কখনও পিছু হটবে না, আমরা আছি, আপনারা আমাদের পাশে থাকুন।
নিম্নে ডাঃ Musfika Sultana Shanta এর ফেসবুকের স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো :