শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪ -|- ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০-বসন্তকাল -|- ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

কৃষক আর ক্রেতায় ফারাক ১০০ টাকা

প্রকাশিত হয়েছে- সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : জানুয়ারি, ৬, ২০২০, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বাহাদুর ডেস্ক :

মুড়িকাটা পেঁয়াজের এখন ভরা মৌসুম। এ সময়েও যে কোনো অজুহাতে দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা তুলছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে এখন ঢাকার বাজারে ক্রেতাদের প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনতে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। কৃষকরা গতকাল রোববার পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। সেই হিসাবে কৃষক আর ক্রেতায় ফারাক ১০০ টাকা।

বর্তমানে বাজারে দেশি পেঁয়াজের বিক্রি বেশি। তবে পেঁয়াজের ঘাটতির গুজব ছড়িয়ে নতুন করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে দেশি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে তারা আমদানি করা পেঁয়াজের দামও বাড়িয়েছেন। যদিও এ সময়ে তাদের আমদানি করা পেঁয়াজ বাড়তি দামে কিনতে হয়নি।

বাজারের অস্থিরতায় মোকামে দাম কিছুটা বাড়লেও তা স্থায়ী হয়নি। পাবনা, ফরিদপুর ও রাজশাহীর পেঁয়াজের মোকামগুলোয় দু-একদিন কিছুটা বাড়তি দাম ছিল। শনিবার ওই এলাকার বাজারগুলোয় ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়। গতকাল এক দিনে ৬০ টাকা কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন কৃষকরা। গতকাল ফরিদপুরের হাজী শরীয়াতুল্লাহ বাজার ও সালথা বাজারে গড়ে ১০০ টাকা কেজিতে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়। রাজশাহীতেও প্রায় একই দরে বিক্রি হয়েছে। পাবনার বড় বাজারগুলোয় ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বেচাকেনা হয়। সমকালের প্রতিবেদকরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে রাজধানীর বাজারে গতকাল খুচরায় প্রতি কেজিতে ১০ টাকা কমে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৯০ টাকায় বেচাকেনা হয়। বিভিন্ন এলাকার দোকানিরা তা ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন। দেশি পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সুযোগে পাঁচ দিনের ব্যবধানে আমদানি করা চীন ও মিসরের পেঁয়াজ দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল খুচরায় চীনা পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, তুরস্কের পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই পেঁয়াজ ছিল চীনা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, তুরস্কের ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও পাকিস্তানি ৮০ টাকা।

কৃষকরা ১০০ টাকা বিক্রি করলেও ক্রেতাদের কেন প্রায় দ্বিগুণ দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে এমন প্রশ্নে মিরপুর-১ নম্বর বাজারের ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার কারণে দাম নিয়ে তারাও বিপাকে আছেন। পাইকারি আড়তে হঠাৎ দাম বাড়ছে। আবার কিছুটা কমছে। দাম নির্ভর করছে পেঁয়াজের বড় ব্যবসায়ীদের ওপর। তিনি বলেন, পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরায় বেড়েছে। এখন পাইকারি বাজার থেকে কম দামে পেঁয়াজ আনতে পারলে তারাও কম দামে বিক্রি করবেন।

রাজধানীর পাইকারি আড়ত কারওয়ান বাজারে শনিবার রাতে প্রচুর পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এর পরও যেভাবে দাম বেড়েছে, সেভাবে কমেনি। গতকাল এ বাজারে ১৪০ থেকে দেড়শ’ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। এর আগে দু’দিনে পাইকারিতে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজির পেঁয়াজ হঠাৎ করেই ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। অথচ এখন মোকামে বেশ কম দামে বিক্রি হলেও আড়তে কমেছে কেজিতে মাত্র ৩০ টাকা। পাইকারি আড়তে কেন এত বেশি দাম- এমন প্রশ্নে এই বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, কৃষক ১০০ টাকায় বিক্রি করলেও কয়েক দফা হাতবদল হয়। এতে দাম বেড়ে যায়। তা ছাড়া আড়তের কমিশন, শ্রমিকের মজুরি, বস্তা, পরিবহন ভাড়াসহ ৮ থেকে ১০ টাকা কেজিতে বেশি পড়ে। এ কারণে দামের ব্যবধান বেশি হচ্ছে। তবে মোকামে কমে আসায় পাইকারি বাজারে দাম আরও কমবে। খুচরা বাজারে দাম কমাতে মনিটরিং জোরদার করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান  বলেন, বাজারে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক রাখতে মনিটরিং জোরদার করা উচিত। একই সঙ্গে সরবরাহ ঠিক রাখতেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। যেসব পর্যায়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা করছেন, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিলে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হবে। এতে ক্রেতাদের ভোগান্তি দূর হবে।

এদিকে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক রাখতে চলতি মাস থেকে পেঁয়াজ সরবরাহ বাড়িয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে। পাশাপাশি পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরেও দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করছেন ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজের ঝাঁজে দিশেহারা সাধারণ ক্রেতারা এখন বাজার ছেড়ে টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইন ধরছেন। সেখান থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে তারা পেঁয়াজ কিনছেন। টিসিবিও আগে ট্রাকে এক হাজার কেজি পেঁয়াজ দিলেও এখন তিন হাজার কেজি পর্যন্ত পেঁয়াজ সরবরাহ করছে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে জাহাজে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ আসার পর টিসিবি রাজধানীতে ৫০টি ট্রাকে বিক্রির পাশাপাশি বিভাগীয় শহরে পাঁচ থেকে দশটি ও জেলা শহরে এক থেকে তিনটি ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। এর পাশাপাশি নিয়মিত টিসিবির পণ্য বিক্রেতা ডিলারদেরও তিন থেকে পাঁচ হাজার কেজি পেঁয়াজ সরবরাহ করছে।

টি.কে ওয়েভ-ইন