শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস,কেন্দ্র সচিবসহ আটক-৩

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
রনবীর রায় রাজ || কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত সময় : সেপ্টেম্বর, ২১, ২০২২, ৬:২২ অপরাহ্ণ

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় চলতি এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজি ১ম এবং ২য় পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসলে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। অনেক নাটকীয়তার পরে মঙ্গলবার মধ্যরাতে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় তিনজনকে আটক করে পুলিশ।

রাতের আধারে মিডিয়াকর্মীদের প্রশ্ন থেকে বাঁচতে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কামরুল ইসলাম দৌঁড়ে পলায়ন করেন। কেন্দ্র স‌চিব ও দুই সহকারী শিক্ষক‌কে ‌জিজ্ঞাসাবাদ শে‌ষে শিক্ষা বো‌র্ডের চেয়ারম‌্যান,স‌চিব এবং জেলা শিক্ষা অ‌ফিসার উপ‌জেলা প‌রিষ‌দে যান। প‌রে রাত সা‌ড়ে ১২টার দি‌কে শিক্ষা বোর্ড ‌চেয়ারম‌্যান, স‌চিব, জেলা প্রশাসকসহ অন‌্যান‌্য কর্মকর্তারা উপ‌জেলা প‌রিষদ ত‌্যাগ ক‌রেন। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার মধ্যরাতে। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজি ১ম এবং ২য় পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ভূরুঙ্গামারী নেহাল উ‌দ্দিন পাইলট বা‌লিকা উচ্চ বিদ‌্যাল‌য় কেন্দ্র থে‌কে প্রশ্ন ফাঁ‌সের ঘটনা ঘ‌টেছে। সোমবার ১৯সেপ্টেম্বর ইংরেজি ১ম পত্র এবং ২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ইংরেজি ২য় পত্রের হুবহু হাতে লেখা প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের হাতে চলে যায়। পরীক্ষার আগের রাতে ফাঁস হওয়া উত্তর পত্রের সাথে পরের দিন পরীক্ষার প্রদত্ব প্রশ্নপত্রের হুবুহু মিল পাওয়া যায়। ফলে সামাজিক মাধ্যমে এসব উত্তর পত্র ছড়িয়ে পড়ায় তা নেবার জন্য শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকগণ ছুটোছৃুটি করেন। প্রতিটি উত্তর কপি ২শ হতে ৫শ টাকায় বিক্রি হয় গোপনে। মঙ্গলবার রাতেই দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কামরুল ইসলাম,সচিব প্রফেসর জহির উদ্দিন,জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম,পুলিশ সুপার আল আসাদ মো: মাহফুজুল ইসলাম,জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামছুল আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা মধ্যরাত পর্যন্ত তদন্ত শুরু করেন। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় অনেক নাটকীয়তা শেষে মধ্যরাতে এ ঘটনায় জ‌ড়িত স‌ন্দে‌হে নেহাল উ‌দ্দিন পাইলট বা‌লিকা উচ্চ বিদ‌্যাল‌য়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র স‌চিব লুৎফর রহমান, একই বিদ‌্যাল‌য়ের ইং‌রে‌জি বিষ‌য়ের সহকারী শিক্ষক রা‌সেল আহমেদ এবং ইসলাম শিক্ষা বিষ‌য়ের সহকারী শিক্ষক জোবা‌য়ের‌কে আটক করা হয়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সূ‌ত্রে জানাযায়, ওই কে‌ন্দ্রে উপ‌জেলার পাইলট উচ্চ বিদ‌্যাল‌য়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দি‌চ্ছে। আর নেহাল উ‌দ্দিন পাইলট বা‌লিকা উচ্চ বিদ‌্যাল‌য়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দি‌চ্ছে পাইলট উচ্চ বিদ‌্যাল‌য়ে।

পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘন্টা আ‌গে প্রশ্নপ‌ত্রের ছ‌বি তু‌লে তা কেন্দ্রের বাই‌রে পাঠা‌নো হয়। প‌রে সেই প্রশ্নের হা‌তে লেখা ক‌পি চু‌ক্তি করা শিক্ষার্থী‌দের মা‌ঝে বি‌লি করা হয়। এ ঘটনায় কেন্দ্র স‌চিবসহ পরীক্ষা প‌রিচালনায় থাকা একা‌ধিক শিক্ষক জ‌ড়িত থাক‌তে পা‌রে ব‌লে স‌ন্দেহ কর‌ছেন সং‌শ্লিষ্টরা। একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আগামী গণিত সহ বিজ্ঞান বিভাগের মোট ৪ টি পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়া গেছে। তাই আগামীতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এসব পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নেহাল উ‌দ্দিন পাইলট বা‌লিকা উচ্চ বিদ‌্যাল‌য় কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী সুমন বলেন,আমি এই কেন্দ্র থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি। হল রুমে অনেক শিক্ষার্থীর আলোচনা করে তারা প্রশ্নের উত্তর পত্র পেয়েছে ২শ হতে ৫শ টাকায়। আমাকেও নিতে বলেছে অনেকেই। এভাবে যদি পরীক্ষার প্রশ্ন আউট হয় তাহলে আমরা ভালো পরীক্ষা দিয়ে কি লাভ? পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে চানাচুর বিক্রেতা মিঠু মিয়া বলেন,দু’দনি থেকে পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা চানাচুর খেতে এখানে এসে তারা গল্প করেন প্রশ্ন পত্র ফাঁস হয়েছে। তারা ২শ হতে ৫শ টাকায় কিনতে পাওয়া যায় বলেও গল্প করেছিলেন। তবে কেনা-বিক্রি করা আমি দেখিনি। ইংরেজি প্রভাষক মাইদুল ইসলাম মুকুল বলেন,আমি এইচএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াই। সেখানকার এবং কলেজের অনেক শিক্ষার্থী আমার নিকট হাতে লেখা প্রশ্ন নিয়ে আসে সমাধানের জন্য। পরে তাদের কাছে জানতে পারি কুড়িগ্রাম,রংপুর,ভূরুঙ্গামারী থেকে তাদের বিভিন্ন বড় ভাইদের মাধ্যমে এগুলো পেয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রেসক্লাবসহ প্রশাসনকে অবহিত করি। এই বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান বলেন,আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি ভূরুঙ্গামারী থেকে কোন প্রশ্ন পত্র ফাঁস হয়নি। পরীক্ষার শুরুর কয়েক ঘন্টা আগে হাতে লেখা উত্তর পত্রের সাথে পরীক্ষার প্রশ্নের হুবহু মিল থাকার বিষয়ে তিনি বলেন,মিল-অমিল আছে কিনা আমার দেখার বিষয় না? এটা সরকারের অনেক বিভাগ আছে,পুলিশ আছে তাদের দায়িত্ব। ভূরুঙ্গামারী সহকারী পু‌লিশ সুপার মোর‌শেদুল হাসান বলেন, আটক তিন শিক্ষ‌কের বিরু‌দ্ধে প্রশ্ন ফাঁ‌সের অ‌ভি‌যোগ আনা হ‌য়ে‌ছে। মামলা হ‌লে তদন্ত ক‌রে পু‌রো‌ বিষয়‌টি উদঘাটন করা হ‌বে।