বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কুরবাণীর পশু নিয়ে খোদ পশু সম্পদ বিভাগ চিন্তিত ॥ গৌরীপুরে ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ ছড়িয়ে যাচ্ছে মহামারি মতো!

প্রকাশিত হয়েছে- বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০২২
শামছুজ্জামান আরিফ || গৌরীপুর প্রতিনিধি :
  • প্রকাশিত সময় : জুন, ২৩, ২০২২, ৮:১২ অপরাহ্ণ

‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ সংক্ষেপে ‘এলএসডি’ ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গবাদিপশু’র মাঝে মহামারি আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনেই বাড়চ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা, মরছে পশু! প্রতিরোধে প্রাণিসম্পদ বিভাগে মেডিকেল টিম করেও ব্যাপকতা কমাতে পারছেন না। প্রতিদিন শুধুমাত্র পশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে ১৫০ থেকে ২শ গরু-বাছুর।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, এ উপজেলায় গরুর সংখ্যা ৮২হাজার ১৬৯টি এবং ছাগল ৪৩হাজার ২১৫টি। এরমধ্যে কুরবাণীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে গরু ৪হাজার ৩৫২টি এবং ছাগল ৪হাজার ১১০টি। তবে ‘ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ’ প্রতিদিনেই ২/৩টি গরুতে আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত গরুর শরীরের ফোসকা পড়ছে। কোনো গরুর পা ফুলে যাচ্ছে, কোনো গরুর গলাতে ঘা হচ্ছে। কিছু আক্রান্ত গরুর চামড়ার নিচে পচন ধরে। ফলে এ রোগে আক্রান্ত গরুর একাধিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নাজনীন সুলতানা জানান, এ রোগে আক্রান্ত গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ছে। মশা ও মাছি এ ভাইরাসের প্রধান বাহক এছাড়াও কীট-পতঙ্গের মাধ্যমেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। আক্রান্ত গরুর লালা গরুর খাবারের মাধ্যমে এবং খামার পরিচর্যাকারী ব্যক্তির কাপড়ের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত গাভির দুধেও এ ভাইরাস বিদ্যমান। তাই আক্রান্ত গাভির দুধ খেয়ে বাছুর আক্রান্ত হতে পারে।

 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোহাম্মদ নাজিমুল ইসলাম জানান, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার জন্য ১১টি মেডিকেল টিম করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১হাজার পশুকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। হাসপাতালে আগত আক্রান্ত গরুর মধ্যে প্রতিদিনেই ২/৩টি কুরবাণীর পশু পাওয়া গেছে। আমরাও কোরবাণীর পশুকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে ভ্যাকসিন ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। বেকারকান্দা গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ৩দিন আগে তার বাছুরে এ রোগের লক্ষণ দেখা যায়। আজ গোয়ালে থাকা ৭টি গরুর শরীরে জমাট বাধা দানাদার গুটি দেখা যায়। একই গ্রামের নওয়াব আলী, শমসের আলী, আব্দুল খালেক জানান, তাদের গ্রামে প্রায় সব গরুর শরীরে এ অবস্থা দেখা দিয়েছে। মূলত এ রোগ মহামারী আকার ধারণ করেছে।

হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্মরত ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নাজনীন সুলতানা জানান, প্রতিদিন ১৫০-১৭০টি আক্রান্ত পশু হাসপাতালে আসছে। এছাড়াও মোবাইলে ও মেডিকেল টিমের মাধ্যমে আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বোকাইনগর ইউনিয়নের মিরিকপুর গ্রামের কৃষক সুলতান উদ্দিন জানান, তার গরুর শরীরে প্রচন্ত জ্বর ছিলো। নাক-মুখ দিয়ে লালা পড়ছে, খেতে পারছে না। চামড়া নিচে গুটিগুটি হয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদ চত্বরের মো. নুর ইসলাম জানান, তার গরুর লোমের নিচে পচন ধরেছে। ক্ষতস্থান থেকে পুজ পড়ছে, ডেসিং করা হচ্ছে, তারপরেও কমছে না। মাওহা ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রারেম মো. জামাল উদ্দিনের পুত্র মো. নাজিরুল ইসলাম জানান, তার গ্রামের ৬০ থেকে ৭০শতাংশ গরু এ ভাইরাসে আক্রান্ত। তিনি আরও জানান, কুরবাণীর পশু নিয়েও কৃষকরা চিন্তিত। অনেক গরুর অবস্থাও আশংকাজনক।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোহাম্মদ নাজিমুল ইসলাম জানান, ছড়িয়েপড়া এলএসডি প্রতিরোধে কৃষক পর্যায়েও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা হচ্ছে। কুরবাণীর পশুর চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।