বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

করোনাভাইরাস: অবরুদ্ধ ইতালিতে ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ১০ মার্চ, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : মার্চ, ১০, ২০২০, ১:০১ অপরাহ্ণ

বাহাদুর ডেস্ক :

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইতালি জরুরি অবস্থা আরও বাড়িয়েছে। পুরো দেশে জনসাগাম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কার্যত ঘরে অবরুদ্ধ সে দেশের মানুষ এবং কাউকে ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউস্পে কন্টি তার দেশের নাগরিকদের বাড়িতে অবস্থান করার নির্দেশ দেন। সরকারের অনুমতি ছাড়া কাউকে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেন। খবর গার্ডিয়ান, রয়টার্স ও বিবিসির

তিনি বলেন, করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। এখন আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে এবং সবাই মিলে করোনা ঠেকাতে হবে।

সোমবার ইতালিতে করোনভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৩৬৬ থেকে এক লাফে ৪৬৩ জনে দাঁড়িয়েছে। চীনের পর ইতালিতে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

গত রোববার থেকে ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে ইতালির ২০টি অঞ্চলে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।

ফুটবল ম্যাচসহ সব ধরনের খেলাধুলার অনুষ্ঠান সারাদেশে বাতিল করা হয়েছে। স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুধুমাত্র বিশেষ দাপ্তরিক কাজের লোক ছাড়া কারো বের হওয়ার অনুমতি নেই।

গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাস প্রথম দেখা দেয়। পরে চীনের অন্যান্য প্রদেশ এবং বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। ইতালি থেকে পুরো ইউরোপ এবং আফ্রিকা ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানে এ ভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতে আগেই পৌঁছেছে করোনাভাইরাস। এর মধ্যে ভারতে এ ভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ধরা পড়েছে। বাংলাদেশে সংক্রমণের ধরা পড়ে রোববার।

মার্চের মাঝামাঝি উহানে নতুন রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে আশা করছেন চীনা চিকিৎসকরা। ফলে শিগগির ওই অঞ্চলের অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান ঘটবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এক মাসের বেশি সময় ধরে কার্যত অবরুদ্ধ ছিল হুবেইর সাড়ে ৫ কোটি মানুষ। কিন্তু চীনের বাইরে প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণের তথ্য আসছে। দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতে বাড়ছে নতুন রোগীর সংখ্যা।

সার্স ও মার্স পরিবারের সদস্য করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ফ্লুর মতো উপসর্গ নিয়ে যে রোগ হচ্ছে তাকে বলা হচ্ছে কভিড-১৯। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এখন পর্যন্ত এ রোগে মৃত্যুহার ৩.৪ শতাংশ, যেখানে মৌসুমি ফ্লুতে মৃত্যুহার থাকে ১ শতাংশের নিচে। তবে করোনায় ৯ বছরের নিচের কেউ মারা যায়নি। প্রবীণদের মধ্যেই মৃত্যুহার বেশি।

করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু। করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। আপাতত একমাত্র উপায় হলো আক্রান্তদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চীনে যে গতিতে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, চীনের বাইরে এই সংক্রমণ ১৭ গুণ বেশি। পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রস অ্যাডানম গেব্রেয়েসুস বলেছেন, এ ভাইরাসকে যে কোনো উপায়ে ঠেকাতে হবে। এটা আত্মসমর্পণের সময় নয়। কোনো অজুহাতের সময় নয়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই কঠিন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

টি.কে ওয়েভ-ইন