মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

আজ বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস ॥ গৌরীপুরে এসময়ের রোকেয়ারা ফসলের ডাক্তারখ্যাত!

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক || দৈনিক বাহাদুর
  • প্রকাশিত সময় : অক্টোবর, ১৫, ২০২২, ৯:৪৯ অপরাহ্ণ

আজ বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস। সমাজের অবহেলিত-নির্যাতিত ও নিপীড়িত নারীদের ভাগ্য বদলে নারীরা কাজ করছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। এ সময়ের রোকেয়ারা ফসলের ডাক্তার খ্যাত। কৃষাণ-কৃষাণীদের ভাগ্যের চাকা বদলে দেয়ার সংগ্রামে নিয়োজিত। পরিত্যক্ত জমিতে ফসল উৎপাদন, ফসলের রোগবালাই দমন ও বসতবাড়িতে পরিকল্পিত সবজি চাষের জন্য ছুটছেন বাড়ি বাড়ি। তারা সবাই এ্যাডরা বাংলাদেশের কমিউনিটি এম্পাওয়ারমেন্ট প্রজেক্টের অধিনে নারী কর্মী। নার্স বা ডাক্তারের ন্যায় সাদা এপ্লোনো ছুটে চলেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ঘরে-বাহিরে সচ্চলতা ফিরিয়ে আনতে দিনরাত পরিশ্রমী এই নারী কর্মীরা এলাকায় এখন ‘ডাক্তার আপা’ নামে পরিচিত। প্রকল্পের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বাবুল সি গমেজ জানান, উপজেলার বোকাইনগর, রামগোপালপুর, অচিন্তপুর, মইলাকান্দা, গৌরীপুর সদর, মাওহা, ডৌহাখনা ও সহনাটী ইউনিয়নের ৯৮টি গ্রামে এই নারী কর্মীরা কাজ করছেন। মহিলা সমিতির সংখ্যা ১০০টি। সদস্য সংখ্যা ৪হাজার ২৫০জন। তাদের মধ্যে সবজি বাগানে ১৭৯জন, ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদনে ৩৮২জন, আইল ফসল ২০৯জন, নিবিড়ায়ন পদ্ধিতিতে ধান চাসে ৩২৫জন ও জলবায়ু সহিষ্ণু সবজি চাষের ১৬৭জন কাজ করছেন। একমাসে ১৬হাজার ৫৫০ কেজি ভার্মি কম্পোষ্ট সার উৎপাদন করে জেলায় সর্বোচ্চ রেকর্ড অর্জন করেছে।
আইল ফসল উৎপাদন করে ভাগ্যের চাকা বদলে দিয়েছেন ৩শ ২৮জন গৃহিনী। তাদেরই একজন মিনা বেগম। তিনি উরুয়াকোনার শাহ জাহান মিয়ার স্ত্রী। নিজ জমির আইলে প্রায় ৬হাজার টাকা খরচ করে ইতোমধ্যে ২০হাজার টাকা ফসল বিক্রি করেন। আরো ৭/৮হাজার টাকার অর্জন হবে বলে তিনি জানান। অতিরিক্ত এ আয়ে মিটে যাচ্ছে দু’সন্তানের স্কুলের খরচ। রামগোপালপুরের আব্দুল্লাহ’র স্ত্রী ফাতেম খাতুন জানান, তিনি আইলে ফসল উৎপাদন করে বেশ লাভবান হয়েছে। তার দু’ছেলে ও এক মেয়েও স্কুলে যাচ্ছে। এসব আইলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বরবটি চাষ। এছাড়াও উৎপাদন হচ্ছে লাউ, সিম, পুঁইশাক, ঢেঁড়শ।
অপরদিকে পুকুরপাড়ে সবজি চাষে সাফল্যের সন্ধান মিলেছে মইলাকান্দা ইউনিয়নের লামাপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী পারভীন বেগমের। এসব নারীদের বাড়তি আয়ে বদলে গেছে পরিবারের আর্থসামাজিক অবস্থান। এ ইউনিয়নের কমিউনিটি ডেভেলাপমেন্ট অর্গানাইজার (সিডিও) তন্ময় রায় জানান, এসব জমির আইল এক রকম পরিত্যক্ত ছিলো, এখন সবুজে ছেয়ে গেছে। বাড়তি আয়ে-পরিবারের স্বচ্ছলতাও এসেছে। রামগোপালপুর ইউনিয়নের কমিউনিটি ডেভেলাপমেন্ট অর্গানাইজার (সিডিও) সীমা রানী দে জানান, যতদূর চোখ যায়, ততদূর আমরা ধান ক্ষেতে সবজির দেয়াল করে দিয়েছি। এ অঞ্চলের কৃষকদের সহযোগিতায় গৃহিণীরা অতিরিক্ত মুনাফা পাচ্ছেন। অনুন্নয়ন আর পিছিয়ে পড়া এসব নারীদের কারিগরী সহযোগিতা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে নূতন পথ দেখাচ্ছেন এ্যাডরা বাংলাদেশের কর্মীরা। এসব পদ্ধতিতে ৬শ ৫৪জন নারী আজ খোঁজে পান ক্ষুধা আর দারিদ্রতা বিমোচনের নূতন পথ।
এবার কৃষকের দু:স্বপ্নকে উড়িয়ে জলাবদ্ধতায় সবজি চাষের নূতন এক পদ্ধতির নাম ‘টাওয়ার’ পদ্ধতি। এ পদ্ধতি বিস্তারে নারী কর্মীরা ছুটে চলছেন বন্যা ও জলাবদ্ধ এলাকায়। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বন্যা কবলিক বা বর্ষা মৌসুমে কৃষকরা পানিতেই সবজি চাষ করছেন।
ব্যতিক্রমী উন্নয়নের কৃষকের বার্তা নিয়ে ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে কৃষকের দোরগোড়ায় ‘টাওয়ার পদ্ধতি’। পরীক্ষামূলক এ প্রকল্পে সফলতা আসায় এবার তা সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে ফলদ বৃক্ষ মেলায় এই টাওয়ার পদ্ধতি প্রদর্শিত হচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টাওয়ারও উপরে উঠে যায়। পানি বাড়লেও ফসলের কোন ক্ষতি হবে না বলে জানান প্রশিক্ষক নাসরিন আক্তার। উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন্নাহার বলেন, কৃষককে নূতন ফসলের স্বপ্ন দেখাবে ‘টাওয়ার’। এ পদ্ধতি ছড়িয়ে গেলে পরিত্যক্ত জমিতে অতিরিক্ত ফসলও উৎপাদন হবে। জলবায়ু সহিষ্ণু চাষাবাদ পদ্ধতি’র আওতায় তাদের আবিস্কার এখন ‘টাওয়ার’ পদ্ধতি। সুপারভাইজার অমল খা খা জানান, বড় ড্রামেও এ পদ্ধতিতে ভাসমান সবজি চাষ করা যেতে পারে। পানি হলেও কৃষকের দুঃচিন্তা থাকবে না।
ধানের ক্ষেতে সবজি আইল ছাড়াও এ সংস্থার মাধ্যমে সেলাই মেশিন, রাস্তার ধারে-পুকুরপাড়ে ও বসতভিটায় সবজি চাষ, ধাত্রী এবং ব্লকবাটিক কাজের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন প্রয়াসে জড়িয়ে আছেন নারীরা। প্রশিক্ষক রোকসানা পারভীন জানান, আমরা পদ্ধতি ও কৌশল দিচ্ছি, নারীরা শ্রমের মাধ্যমে নূতন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন।
নারীদের ভাগ্যবদলের এ কাজে নিয়োজিত আছেন কমিউনিটি ডেভোলাপম্যান্ট অর্গানাইজার হাওয়া আক্তার, শিখা দেবনাথ, নাদিমুল হাসান, শিরিনা আক্তার, সুমাইয়া আক্তার, হাফিজা খাতুন, মালা বসাক, তানজিলা তাবাসসুম, লাজিতা চাম্বুগং, সুব্রত সরকার, দুলাল মিনজী, কমিউনিটি ওর্য়াকার সোমা দে, মৌসুমী সাহা, শিমা আক্তার, দ্বিপালী দাস, লিমা আক্তার, কানিজ ফাতেমা, ফাহিমা খাতুন, জান্নাতুল ইসলাম, তানিয়া আক্তার।