বাহাদুর ডেস্ক :
ঘন কুয়াশার সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস আর কনকনে শীত, এমন বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই চলছে বয়ান, জিকির-আসকার, ইবাদত-বন্দেগি, ঘুম ও খাওয়া-দাওয়া। এভাবেই বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন পার করেছেন অংশ গ্রহণকারীরা। আজ রোববার বেলা ১১টায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে আলমি শূরার তত্ত্বাবধানে বিশ্ব ইজতেমা। অন্যদিকে, মাওলানা সা’দ অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে ১৭ জানুয়ারি। শেষ হবে ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে।
তুরাগতীরে ইজতেমা মাঠে লাখো মানুষের ভিড় থাকলেও হইচই, হুড়োহুড়ি বা কোলাহল নেই। সবাই নিজের মতো করে শৃঙ্খলা মেনে চলছেন। সবার মধ্যেই রয়েছে সহযোগিতার মনোভাব। মাঠজুড়ে বিশাল শামিয়ানার নিচে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে অবস্থান করছেন অংশগ্রহণকারীরা। মাঠে পাটি, লেপ-তোশক পেতে ঘুমানোর ব্যবস্থা আছে। প্রথম পর্বের ইজতেমায় ৬১টি দেশের দুই হাজার এবং দেশের ৬৪টি জেলার কয়েক লাখ মানুষ অংশ নিচ্ছেন। আখেরি মোনাজাতে মুসল্লির সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।গতকাল বাদ ফজর মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান করেন
ভারতের মাওলানা আবদুর রহমান, বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আবদুল মতিন। বয়ান শেষে বিভিন্ন খিত্তায় নিজেদের মধ্যে বয়ান নিয়ে আলোচনা হয়। সকাল ১০টার পর থেকে জোহরের নামাজের আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে বয়ান থাকে না। এ সময়ও দেখা গেছে অনেকে ব্যস্ত জিকির-আসকারে, কেউ কোরআন-হাদিস পড়ছেন। কেউ কেউ ছোট ছোট দলে বয়ান শুনছেন। আর কেউ কেউ ব্যস্ত রান্নার জোগাড় নিয়ে। ইজতেমার মাঠের রাস্তার ধারে চলছে রান্নার আয়োজন। ছোট ছোট দলে আসা অংশগ্রহণকারীরা নিজেরাই খাবার রান্না করেন।
জোহরের নামাজের জামাতে অংশ নেন বিপুলসংখ্যক মুসল্লি। নামাজের পর আবার বয়ান শুরু হয়। বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা, ভাষান্তর করেন নুরুল রহমান। এ ছাড়া গতকাল বাদ আসর দিল্লির মাওলানা জোহাইরুল হাসান ও বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা বয়ান করেন।
ত্রিশালের মাদরাসাছাত্র মিজানুর রহমান ইজতেমায় অংশ নিয়ে বলেন, দেশ-বিদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন ইজতেমায়। সবাই মিলে দোয়া করেন, বয়ান শোনেন। ইজতেমায় এলে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে।
হেদায়েতি বয়ান : আখেরি মোনাজাতের আগে হেদায়েতি বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক ও মাওলানা ইব্রাহিম। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরব্বি মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ জানান, হেদায়েতি বয়ান শেষে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন হাফেজ মাওলানা জোবায়ের আহম্মেদ। গত শুক্রবার রাতে তাবলিগ জামাতের মুরব্বিদের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত হয়।
বয়ানে যা বলা হলো : ইমান, আখলাক, দিনের ওপর মেহনত, ইসলামকে শক্তিশালী করা, সব ভেদাভেদ ভুলে নিজের দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা, নবীওয়ালা কাজে দিন ও সময় ব্যয় করা। পৃথিবীতে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেওয়া। ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করা। নামাজ, রোজা ও আল্লাহর এবাদত পালনের ওপর বয়ান করা হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া যানচলাচলেও কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকবে। শনিবার মধ্যরাতের আগেই ঢাকা থেকে আসা যানবাহনগুলোকে আবদুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া অভিমুখে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল থেকে ঢাকাগামী যানবাহনগুলোকে ভোগড়া চৌরাস্তা এবং সিলেট থেকে ঢাকাগামী যানবাহনগুলোকে টঙ্গীর নিমতলীতে আটকে দেওয়া হয়।
ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে ১৬টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। এ ছাড়া সব আন্তনগর ট্রেন টঙ্গীতে যাত্রাবিরতি করবে। বিআরটিসি শতাধিক বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করেছে।
আরো পাঁচজনের মৃত্যু : হ্রদরোগে আক্রান্ত আগত আরো পাঁচ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন রাজশাহীর চারঘাট থানার বনকির গ্রামের মৃত রহিম উদ্দিন শাহের ছেলে আবদুর রাজ্জাক (৫০), শনিবার ভোরে বরিশালের গৌরনদী থানার খানজাহানপুর গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে আজগর আলী (৫৭), বাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানার আবদুস সাত্তারের ছেলে শাহজাহান (৫৫), নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার কলাগ্রাম গ্রামের ওসমান মিয়ার ছেলে ইউসুফ (৫০) ও কুমিল্লার দেবীদ্দার থানার আবদুস সোবহানের ছেলে তমিজউদ্দিনের (৬৫)। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত ইজতেমায় আসা ৯ মুসল্লির মৃত্যু হলো। এ ছাড়া কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের উত্তর পাশে চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রগুলোতে ভিড় দেখা গেছে।
ময়দানে পানি সংকট : ময়দানে আসা মুসল্লিদের সুপেয় পানির সংকট দেখা দেয়। এ সময় টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ময়দানে পানি সরবরাহ করতে দেখা যায়। যোগাযোগ করা হলে গাসিক প্রকৌশলী আনিসুর রহমান জানান, সিটি করপোরেশন থেকে যে পাম্প বসানো হয়েছে, তার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে ময়দানের নিচুস্থানগুলোতে সংস্কার করায় পানির প্রবাহে কিছুটা বিঘœ ঘটে।
আলমি শূরার তত্ত্বাবধানে ২০২১ সালের বিশ্ব ইজতেমার সম্ভাব্য তারিখ রোববার ঘোষণা করা হবে বলে জানান আয়োজক কমিটির মুরব্বি মুফতি আহসানুল হক।
চিকিৎসাসেবা : গাজীপুরের চাঁদপুর জেলা ঐক্য ফোরামের উদ্যোগে ফ্রি চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। ফোরামের আহ্বায়ক খোরশেদ আলম তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব আলমগীর গাজীর পরিচালনায় ফ্রি চিকিৎসাসেবা ওষুধ বিতরণ উদ্বোধন করেন টঙ্গীর বৃহত্তর কুমিল্লা সমন্বয় পরিষদের কার্যকরী সভাপতি, বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলর টঙ্গী পশ্চিম থানার সাধারণ সম্পাদক জরিফ আহমেদ মন্টু ডিলার, টঙ্গীর বৃহত্তর কুমিল্লা সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান পাটোয়ারী, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, আবদুল কাদের মোল্লা, জাহাঙ্গীর হোসেন খোকন তালুকদার, আনোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, মাহমুদ কোরাসী, খলিলুর রহমান রাজু, শ্রমিক নেতা হারুন অর রশিদ, রেজাউল কবির রাজীব প্রমুখ।
টি.কে ওয়েভ-ইন