আজ বৃহস্পতিবার ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০, ২৯শে মার্চ ২০২৪

শিরোনাম:
কামারিয়া ইউনিয়নকে আধুনিক ও স্মার্ট ইউনিয়ন গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে ইউপি চেয়ারম্যান আজহার খুলনার মাকসিদুলের বিভীষিকাময় ২৪ ঘণ্টা : গৌরীপুরেটর্চারসেল থেকে আবারও যুবক উদ্ধার \ গ্রেফতার-১ মুক্তিযুদ্ধা মেজবা উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন গৌরীপুরে বিএমএসএফের উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত গৌরীপুর মহিলা কলেজের উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন ময়মনসিংহে মেধা ও যোগ্যতায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরী পেলেন ১২৮ জন পুলিশের উর্দ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে ফেইসবুকে প্রতারণা।  ডিবির হাতে গ্রেফতার মসিকের উদ্যোগে ৫৫০ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি শুরু শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হলেন ময়মনসিংহের রাকিবুল হাসান মিলন মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস :গৌরীপুরে পতাকা মিছিল ও সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন
||
  • প্রকাশিত সময় : এপ্রিল, ৬, ২০২১, ৭:২৮ অপরাহ্ণ




আচমকা বাতাসে পুড়ল হাওরাঞ্চলের কৃষকের কপাল

বাহাদুর ডেস্ক :

রোববার সন্ধ্যায় হঠাৎ দমকা গরম বাতাস। তিন থেকে চার ঘণ্টা স্থায়ী বাতাসে স্থানীয়দের মাঝে শুরু হয় এক ধরনের আতংক। গভীর রাতে বাতাস কমার পর আতংক কমে গেলেও সকালে উঠে কৃষকের মাথায় হাত। সূর্যের প্রখরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উঠতি বোরো ফসল শীষ মরতে শুরু করে। ক্ষেতের পর ক্ষেত। মাঠের পর মাঠ।

এলাকাবাসী ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার হাওরাঞ্চলে উঠতি বোরো হাইব্রিড জাতের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় কয়েক ঘণ্টাব্যাপী গরম দমকা বাতাসে পুরো ক্ষেতের উঠতি ধানের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে। খালিয়াজুরী ও মদনের কৃষি কর্মকর্তারা বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, নেত্রকোনায় এবছর মোট ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৩ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জেলার হাওরাঞ্চলে মোট ৪০ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়। এর মধ্যে হাইব্রিড (হীরা) জাতের ধান, বিআর ২৯ ধানে ক্ষতি বেশি হয়েছে। হাওরাঞ্চলে হাইব্রিড (হীরা) জাতের ধান মোট ১০ হাজার ৩৩০ হেক্টর ও বিআর ২৯ জাতের প্রায় ৭ হাজার ৮শ হেক্টর জমি রোপণ করা হয়েছিল।

মদন, খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ উপজেলায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে বারহাট্টা, দুর্গাপুর, কলমাকান্দাসহ সব উপজেলা থেকে ধান ক্ষতির খবর আসছে বলে জানায় জেলা কৃষি অফিস। তবে ক্ষতির সঠিক তথ্য এখনো দিতে পারছে না জেলা কৃষি অধিদপ্তর।

এদিকে শ্রমিক সংকট ও আগাম বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে হাওরের প্রায় ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭২৪ মেট্রিক টন বোরো ধান। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৬৭০ কোটি ৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা। সারা জেলায় এই মৌসুমে বোরোর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন ধান।

খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের কৃষক শফিকুল ইসলাম তালুকদার, এরশাদ মিয়া, মনির হোসেন ও রঞ্জিত সরকার বলেন, রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত শুধু গরম বাতাস ছিল। কোনো রকম ঝড় বৃষ্টি ছিল না। বাতাসটা অসহ্য মনে হচ্ছিল। সকালে রোদ ওঠার পর হাওরে গিয়ে দেখি থোড় আসা ধান মরে শুকিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমাদের সংসার চালাবো কি করে? বেশি ফলনের জন্য হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করেছিলাম। কিন্তু এখন সর্বনাশ হয়ে গেছে।

একই উপজেলার নগর ইউনিয়নের সগ্রাখাই গ্রামের পিকলু সরকার, আদমপুর গ্রামের মৃদুল সরকার বলেন, বাতাসটি আমরা বুঝতে পারি নাই। জীবনেও এমন গরম বাতাস দেখি নাই। সকালে উঠে দেখি ক্ষেতের ধান মরে গেছে। আমরা কী খেয়ে বাঁচবো। ঋণ করে চাষ করেছি। এখন কি করে ঋণ দেব?  কীভাবে সারা বছর স্ত্রী, সন্তানের ভরণ পোষণ করবো?

মদন উপজেলার বাগজান গ্রামের কৃষক নূরুল ইসলাম বলেন, ৩০ কাটা জমি করেছিলাম, এখন যে ক্ষতি হয়েছে তাতে এক ছটাকও ধানও তুলতে পারবো না। কী হবে আমার! দুচোখে অন্ধকার দেখছি। আমাদের কে রক্ষা করবে? কীভাবে চলবো সারা বছর?

একই এলাকার আলী আহম্মদ, শামীম মিয়া, কুটুরীকোনা গ্রামের রোজ আলী, পৌর সদরের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, সব ধান শেষ হয়ে গেছে। আমরা কী খেয়ে বাঁচবো। বাচ্চাদের কী খাওয়াবো? কেন এমন সর্বনাশ হলো। সব ধান পুড়ে গেছে।

মদন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রায়হানুল হক জানান, রোববার বিকাল থেকে বৃষ্টি কিংবা শিলা বৃষ্টি ছাড়া শুধু বাতাস প্রবাহিত হয়েছিল। তা রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে। মাঠের যে ধান ক্ষেত গুলো তোড় এসেছিল। সেগুলো সোমবার সকাল থেকে ধান গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জরিপ করছি, বিশাল হাওরে ক্ষতির বিষয়টি নিরূপণ করতে একটু সময় লাগবে।

খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, খালিয়াজুরীতে ২১ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান, ৩ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে ২৯ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। হাইব্রিড এবং ২৯ জাতের ধান ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেতের পর ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা মাঠ পরিদর্শন করছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে জানানো হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান মদন উপজেলার বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করে বলেন, অতি গরম আবহাওয়ায় এমনটা হয়েছে। ফুল আসা ধান সব চিটা হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে আছে, জরিপ শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে।

তিনি বলেন, গরম বাতাসে ধানের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এমন ঘটনা আগে কখনো হয়নি। আমি বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করেছি। মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্ট্রিটিউট থেকে বিজ্ঞানীরা এসেছেন। তারা মদন, খালিয়াজুরী ও কেন্দুয়ার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরীক্ষা করছেন। তারা প্রাথমিকভাবে বলছেন এটা হিট ইঞ্জুরির জন্য হয়েছে।

গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্ট্রিটিউট থেকে রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আশিক ইকবাল খান এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের (ক্লাইমেট চেঞ্জ) কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় বৃষ্টিপাত হচ্ছিল না। যদি বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি হতো তাহলে এই ক্ষতি হতো না। আমরা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছেন- হাইব্রিড জাতের ধান যেগুলো এই মুহুর্তে থোড় বেরুচ্ছে। শুধুমাত্র সেগুলোই হিট ইঞ্জুরিতে ক্ষতি হয়েছে। দীর্ঘসময় বাতাস হলেও রোববার রাত ৯টার দিকে গরম বাতাস প্রবাহিত হয়েছিল। এই বাতাসেই ধানের ক্ষতি হয়েছে।

টি.কে ওয়েভ-ইন




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১